Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়শা মারিয়া |
প্রেজেন্টেশন বা উপস্থাপনা! আমরা চাই বা না চাই ভালো লাগুক বা না লাগুক প্রেজেন্টেশন কিন্তু আমাদের দিতেই হয়। হতে পারে আপনি একজন অভিজ্ঞ পেশাদার ব্যক্তি, একজন ইন্টার্ন বা একজন ছাত্র, আপনাকে যদি বলা হয় একাধিক ব্যক্তির সামনে নির্দিষ্ট বিষয়ে মাতৃভাষা ব্যতীত অন্য কোনো ভাষায় কথা বলতে, তবে আপনার জন্য তা একটি কঠিন অভিজ্ঞতা হতে পারে।
একজন ভালো বক্তাকে একজন সুরকারের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। কারণ তার উপস্থাপনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও জোরালো ধারণা থাকে। প্রত্যেক সার্থক বক্তার সার্থকতার পেছনে রয়েছে অনুশীলন। যেকোনো বক্তার জন্যই প্রথম দিকে অনেকের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করা, নিজের কথা গুলো গুছিয়ে বলা এসবের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুন্দর হয় না।
আপনি যেকোনো সংস্থা বা সংগঠন এর জন্যেই কাজ করেন না কেনো, বড় কোনো গোষ্ঠীর সুবিধা এবং তাদের হয়ে কথা বলার উদ্দেশ্যে একটি সুন্দর উপস্থাপনা আপনাকে সার্থকতা অনুভব করাতে পারে। অফিস মিটিং এ নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও টিমের কাজ ক্লায়েন্টের কাছে উপস্থাপন আপনার দলগত কাজে অংশগ্রহণের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।
সাধারণ জনসংখ্যার প্রায় ১৫-৩০ শতাংশ মানুষ অনেকের সামনে এসে কথা বলতে ভয় পায়। দুর্ভাগ্যবশত গত ২০ বছরে প্রাপ্তবয়স্কদের ১২শতাংশের মাঝে সামাজিক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ভালো উপস্থাপনা দেওয়ার পদ্ধতিগুলো আত্মস্থ করে নিলে আপনার কথা বলার ভয়, সকল প্রকারের মানসিক বাধা এমনকি নিজের দৃষ্টিভঙ্গিগুলো নিজের মত করে উপস্থাপনে আগ্রহ বৃদ্ধি পেতে পারে।
উপস্থাপনা দেওয়ার সময় প্রধান অসুবিধাগুলি কী কী হতে পারে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ধরুন আগামী সপ্তাহে আপনার একটি প্রেজেন্টেশন আছে এবং আপনি ইতিমধ্যে এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। হতে পারে আপনার শ্রোতা বা ক্লায়েন্ট এর মাঝে একজন বিচক্ষণ সমালোচক আছেন এবং তিনি আপনার ভুল-ভ্রান্তি চিহ্ণিত করার উদ্দেশ্যেই সেখানে উপস্থিত আছেন। এরকম পরিস্থিতি হয়ত আপনার জীবনে প্রচুর এসেছে এবং আসবে যা সম্মুখীন হওয়ার মানসিক প্রস্তুতি সবসময় রাখতে হবে।
ভিন্ন কোনো গোষ্ঠীর সাথে আপনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তা-ধারা ভাগ করে নেওয়া অনেকাংশে ভীতিজনক হতে পারে। কারণ একেক গোষ্ঠীর আদর্শ, দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কৃতি একেকরকম। তাই আপনি একজন উপস্থাপক হিসাবে কীভাবে আপনার কাজটি সঞ্চালন করবেন এবং আপনার দর্শক আদৌ আপনার কাজ নিয়ে আগ্রহী হবে কি না তা নিয়ে আপনি চিন্তিত থাকবেন।
এছাড়াও বেশ কিছু অসুবিধার সম্মুখীন আপনি হতে পারেন। যেমন- অনেক মানুষের সামনে কথা বলার ভয় কাজ করা, শ্রোতাদের মনোযোগ হারানো, উপস্থাপনা স্লাইডে কী বিষয়বস্তু রাখতে হবে তা না জানা এবং অ-মৌখিক যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থতা।
আমরা এখন জানবো উপস্থাপনার কিছুর প্রকারভেদ সম্পর্কে।
- ২৫ মিনিটের কনফারেন্স পেপার উপস্থাপনা
- প্রকল্প উপস্থাপনা
- থিসিস ডিফেন্স
- জব নিয়ে কথা
- ১ মিনিটে খুব দ্রুত কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলা।
উপস্থাপনার ৪টি পর্যায় রয়েছে যা আপনাকে কার্যকরী ও বোধগম্য উপস্থাপনা প্রদান করতে সহায়তা করবে।
- পরিকল্পনাঃ আপনি আপনার উপস্থাপনা দিয়ে কি বোঝাতে চান? আপনার মূল বার্তা কি? এবং আপনার উপস্থাপনা কে শুনবে? তাদের চাহিদা এবং স্বার্থ নিয়ে আপনাকে পরিকল্পনা করে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে লিপি তৈরি করুন।
- প্রস্তুতিঃ আপনার উপস্থাপনাকে সমর্থন করবে এমন কোনো প্রাসঙ্গিক তথ্য, ডেটা বা ভিজ্যুয়াল সংগ্রহ করুন। দৃশ্যত আকর্ষণীয় স্লাইডগুলি ডিজাইন করুন যা পড়তে এবং বুঝতে সহজ হবে এবং আপনার উপস্থাপনা গাইড করার জন্য একটি স্ক্রিপ্ট বা কথা বলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তৈরি করুন। কিভাবে আপনি কথা বলবেন তা বারবার অনুশীলন করুন।
- অনুশীলনঃ নিশ্চিত করুন যে আপনার উপস্থাপনা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। আপনার উপস্থাপনা সম্পর্কে গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া প্রদান করবে এমন বন্ধু, পরিবারের কেউ বা সহকর্মীদের জিজ্ঞাসা করুন এবং এমন ক্ষেত্র চিহ্নিত করুন যেখানে আপনি উন্নতি করতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতে পারেন।
- উপস্থিতিঃ নিজেকে এবং আপনি কি বলবেন তা বিশ্বাস করুন। চোখ এবং অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে আপনার শ্রোতাদের সাথে নিজেকে সংযুক্ত করতে কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন পড়তে পারে। আপনার কথাগুলি উচ্চারণ স্পষ্ট করুন এবং খুব দ্রুত কথা বলা এড়িয়ে চলুন। উপস্থাপনাকে উন্নত করতে এবং আপনার পয়েন্টগুলিকে চিত্রিত করতে ভিজ্যুয়ালগুলি অন্তর্ভুক্ত করুন। শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন এবং ভেবেচিন্তে উত্তর দিন।
উপোরোক্ত পর্যায়গুলি অনুসরণ করলে প্রেজেন্টেশনের ভয় এবং উদ্বেগ কাটিয়ে সাবলীল ভাবে নিজের কথা, মনোভাব প্রকাশ এবং কর্মক্ষেত্রে সফলতা বয়ে আনতে পারে।
উপস্থাপনার মাধ্যমে দর্শকদের বিমোহিত করার কিছু কৌশলঃ
যখন আপনি শিখে যাবেন কিভাবে উপস্থাপনার মাধ্যমে দর্শকদের আকর্ষিত করবেন তখন আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে। আপনার উপস্থাপনায় দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল ব্যবহার করতে পারেন।
কৌশল-১ঃ ব্যক্তিগত গল্প বলা আপনাকে আপনার শ্রোতাদের কাছে আরও সম্পর্কিত এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারে যা তাদের সংযুক্ততা বাড়ায়। গিল হিক্স, একজন অষ্ট্রেলিয়ান প্রেরণাদায়ক বক্তা, তার উপস্থাপনায় এই কৌশলটি সফলভাবে ব্যবহার করেছেন। আপনি যদি ব্যক্তিগত গল্প শেয়ার করতে দ্বিধাবোধ করেন তবে আপনি অন্যদের থেকে উদাহরণ ব্যবহার করতে পারেন বা কাল্পনিক গল্প তৈরি করতে পারেন।
কৌশল-২ঃ কপাল বা নাকের দিকে দৃষ্টি স্থাপন না করে চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা দর্শকের সাথে সংযোগ স্থাপনে অধিক কার্যকর। কাউকে উপেক্ষা করা বা অস্বস্তি বোধ করা এড়াতে ৩-৫ সেকেন্ডের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে কথা বলা যায়।
কৌশল-৩ঃ অনেকসময় আপনার স্টেজ প্রেজেন্স বৃদ্ধির জন্য ও আপনার মূল বিষয়গুলতে জোর দেওয়ার জন্য আপনার বাচনভঙ্গি, অংগভঙ্গী বোধগম্য হতে হবে।
কৌশল-৪ঃ জনসাধারণের সম্মুখে কথা বলার ভয়, শ্রোতাদের মনোযোগ হারানো এবং অমৌখিক যোগাযোগে অসুবিধার কারণে লোকেরা প্রায়শই উদ্বিগ্ন হয়। এই প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে ও উপস্থাপনাকে কার্যকরভাবে প্রস্তুত করা, ভিজ্যুয়াল এডস ব্যবহার করা এবং আপনার বক্তৃতা প্রদানের বারবার অনুশীলন করা প্রয়োজন।
কৌশল-৫ঃ আপনার কথা বলার বিষয় সম্পর্কে শ্রোতাকে অবশ্যই উৎসাহী হতে হবে। এই উৎসাহ সংক্রামক এবং দর্শকদের বিমোহিত করা নিয়ে লেখা হয়েছে অ্যাঞ্জেলা ডাকওয়ার্থের বই, “Grit: The Power of Passion and Perseverance,”। বইটিতে বক্তৃতা দেওয়ার পূর্বে বক্তব্য নিয়ে গবেষণা এবং দর্শকের কাছে উপস্থাপনের পদ্ধতির গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
প্রাঞ্জল লেখা। জানার কোন শেষ নাই। এত সুন্দর প্রাঞ্জল ভাষায় জানতে ভালোই লাগে। লেখকের আরো লেখা চাই।