কোম্পানি ফরেনসিকস

বাংলাদেশীদের ভরসা বিকাশে

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা ইসফাকুল কবির

বিকাশ একটি আস্ত ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের হাতের মুঠোই এনে দিয়েছে। টাকা পাঠানো থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, কেনাকাটা কিংবা মোবাইল রিচার্জ এখন সবই সম্ভব বিকাশের মাধ্যমে। সারা দেশে প্রায় ৯০ হাজারেরও বেশি এজেন্ট পয়েন্ট থাকায় গ্রাহক খুব সহজেই টাকা লেনদেন করতে পারেন। প্রবাসীরা তাদের কষ্টে উপার্জিত টাকাও দেশে পাঠায় বিকাশের মাধ্যমে। প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে এই বিকাশের মাধ্যমে। সরকারি বিভিন্ন ভাতা, স্কুল কলেজের বৃত্তিও মানুষ পেয়ে থাকে এই বিকাশের মাধ্যমে। এই মোবাইল ব্যংকিং সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক খাতে একটি নতুন দিগন্ত চালু হয়েছে।

বিকাশের  সেবা ও কার্যক্রম

বিকাশ গ্রাহকদের বিভিন্ন আর্থিক সেবা প্রদান করে, যার মধ্যে রয়েছে—টাকা প্রেরণ, বিল পরিশোধ, কেনাকাটা, মোবাইল রিচার্জ ,বাস বা ট্রেনের টিকিট ক্রয় এবং ঋণ প্রদান। বর্তমানে দেশের প্রতিটি স্থানে বিকাশ রয়েছে।  এছাড়া, বেতনের টাকা, ঋণের টাকা, এবং গ্রাহককেরা বিভিন্ন সরকারি সুবিধা সহজেই বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পেতে পারেন।

দেশের যেকোনো স্থান থেকে এই সেবা গ্রহণের সুযোগ থাকায় বিকাশের গ্রাহক সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এছাড়া ইসলামিক ব্যাংকিং এর ব্যবস্থাতো আছেই। বিকাশ তাদের গ্রাহকদের টাকা সঞ্চয় করতে বিভিন্ন মেয়াদে ডিপার্টমেন্ট ফর প্রোটেকশন অ্যান্ড সিকিউরিটি  (ডিপিএস) বাবস্থা চালু করায় যেন গ্রাহকরা মোবাইলের মধ্যেই পুরো ব্যাংকিং খুজে পাচ্ছেন। বিকাশ মানুষের জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে মিশে গেছে। যেমন ধরুন- আপনি কেনাকাটা করবেন চাইলে বিকাশে বিল পেমেন্টের মাধ্যমে পেয়ে যেতে পারেন বিশেষ মূল্য ছাড়। শুধু কেনাকাটায় নয়, বিভিন্ন রেস্তরাঁয়ও এখন বিকাশের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট করতে পারবেন খুব সহজে। 

বিকাশের সেবা ও কার্যক্রমের প্রতীকী চিত্র, যা তাদের ডিজিটাল আর্থিক সেবার পরিসরকে তুলে ধরে।

বিকাশের সেবা ও কার্যক্রমের প্রতীকী উপস্থাপন। | ছবি সংগৃহীত।

বিকাশের মূল সেবা:

টাকা পাঠানো ও উত্তোলন

সহজেই এক গ্রাহক থেকে আরেক গ্রাহকে টাকা পাঠানো ও উত্তোলন।

বিল পরিশোধ ও কেনাকাটা:

 বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ এবং শপিং মলে কেনাকাটা।

বেতন ও ঋণ প্রদান: 

সরাসরি বিকাশের মাধ্যমে বেতন গ্রহণ ও ঋণ পরিশোধ।

বিকাশের সাফল্যের চাবিকাঠি

বিকাশ মানুষের মাঝে কতটা জনপ্রিয় তা বোঝা যায় যখন মানুষ বলে টাকাটা বিকাশ করে দাও, নগদে বিকাশ করে দাও। তবে বিকাশ কিন্তু বাংলাদেশ প্রথমবার এই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে নাই। প্রথমে ডাচ বাংলা ব্যাংকের রকেট মানুষের কাছে নিয়ে আসে মোবাইলে টাকা লেনদেনের এই বিশেষ সুবিধা। তবে সবাইকে টপকে এখন বিকাশ সবার বিশ্বাসের জায়গা। এছাড়া, বিকাশের সাফল্যের পেছনে মূল কারণ অনেকে মনে করেন তাদের সহজ ও স্বল্পমূল্যের ফি স্ট্রাকচার এবং সাধারণ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেবা প্রদান। উন্নত মানের মোবাইল অ্যাপ ছাড়াও, বিকাশ ইউএসএসডি ভিত্তিক সিস্টেম ব্যবহার করে, যা যেকোনো ধরনের মোবাইল ফোন থেকে অ্যাক্সেসযোগ্য।

বিকাশের সাফল্যের চাবিকাঠি সম্পর্কিত প্রতীকী চিত্র, যা তাদের উদ্ভাবনী আর্থিক সেবা ও গ্রাহককেন্দ্রিক উদ্যোগকে তুলে ধরে।

বিকাশের সাফল্যের চাবিকাঠি সম্পর্কিত প্রতীকী উপস্থাপন। | ছবি সংগৃহীত।

এমনকি সাধারণ মোবাইল ব্যবহারকারীরাও শুধুমাত্র একটি কোড ডায়াল করে বিকাশ ব্যবহার করতে পারেন। এই সরলতা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের কাছে বিকাশ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিকাশ বাংলাদেশের মানুষকে প্রথমবারের মতো আক্ষরিক অর্থে ‘ব্যাংকিং-এর সুযোগ’ এনে দিয়েছে। একটি সাধারণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই গ্রামের কৃষক থেকে শুরু করে শহরের চাকুরিজীবীরা অর্থ লেনদেনের সুবিধা পাচ্ছেন। ফলে, আগের মতো ব্যাংকে যাওয়ার ঝামেলা আর নেই। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্যও এটি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এক নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে।

প্রচার ও ব্র্যান্ডিং কৌশল

এখন শুধু শহরে নয়, গ্রামের প্রতিটি বাজারে একটা হলেও বিকাশের দোকান পাবেন আপনি। বিকাশ তাদের ব্র্যান্ড প্রচারে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে থাকে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন প্রচারাভিযানের মাধ্যমে তারা জনগণের মধ্যে তাদের সেবা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। দেশের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন বিলবোর্ড, টিভি বিজ্ঞাপন, সামাজিক মাধ্যমের প্রচারণা এবং সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে বিকাশ ব্র্যান্ডটি দেশের সবচেয়ে পরিচিত আর্থিক সেবার নাম হয়ে উঠেছে।

মালিকানা: বিকাশের পেছনে BRAC ব্যাংক

বিকাশ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একটি ব্র্যাক ব্যাংক যা মূলত বিকাশের মালিক ব্র্যাক  বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এনজিও, যারা সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে, বিকাশের মূল উদ্যোক্তা। ব্রাক  ব্যাংক, যা মূলত ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে, বিকাশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এবং এর কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

বিকাশের মালিকানায় BRAC ব্যাংকের ভূমিকা সম্পর্কিত প্রতীকী চিত্র, যা তাদের সহযোগিতা ও আর্থিক অংশীদারিত্বকে তুলে ধরে।

বিকাশ ও BRAC ব্যাংকের অংশীদারিত্বের সফল উদাহরণ। | ছবি সংগৃহীত।

বিকাশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল রূপান্তরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিকাশ তাদের সেবায় আরও প্রযুক্তি সংযোজন করছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার, এবং নতুন নতুন ডিজিটাল সেবা সংযোজনের মাধ্যমে বিকাশ দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে অবদান রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

“তথ্যসূত্র”

যেভাবে বাংলাদেশে শুরু করতে পারেন কোকো পিট ব্যবসা

Previous article

চালডাল: বাংলাদেশের নিত্যপণ্যেরবাজারে এক নতুন দিগন্ত

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *