গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়েশা আক্তার
বর্তমান সময়ে বহুল পরিচিত একটি শব্দ হলো ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে ঢুকলেই আমরা ডেইলি ভ্লগ, ফুড রিভিউ, ট্র্যাভেল ভ্লগ সহ নানা ভিডিও দেখতে পাই। আধুনিক যুগের এই নতুন পেশার নাম হলো ‘কনটেন্ট ক্রিয়েশন’। মাত্র এক দশক আগেও পৃথিবীর কেউ কল্পনা করতে পারে নি যে, ক্যামেরার সামনে কথা বলে কিংবা সাধারণ অঙ্গভঙ্গি করে কেউ আয় করতে পারে।
২০২০ সালে করোনা মহামারীতে পুরো পৃথিবী যখন ঘরবন্দী, তখন থেকেই এই পেশার জনপ্রিয়তা শুরু। ‘খাবি লেম’ নামক একজন টিকটকার মাত্র ৪০-৫০ সেকেন্ডের ভিডিও করে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। তাঁর বর্তমান নেট মূল্য ২০ মিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাপী ৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ কনটেন্ট ক্রিয়েশনের সাথে যুক্ত রয়েছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক কনটেন্ট ক্রিয়েটর কারা এবং কিভাবে নিজেকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়,তার কিছু ট্রিকস।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর কারা?
কনটেন্ট ক্রিয়েটর বলতে এমন মানুষকে বোঝানো হয় যিনি ধারাবাহিকভাবে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে, একটি নির্দিষ্ট দর্শকের জন্য কনটেন্ট তৈরি করেন। কনটেন্ট বিনোদনমূলক, শিক্ষামূলক, লিখিত, ভিজ্যুয়াল বা শ্রবণমূলক হতে পারে। কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে সাধারণত কোন বিশেষ যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। কিন্তু নিজের দর্শক তৈরি করতে এবং অর্থ উপার্জন করতে হলে অবশ্যই নিয়মিত কনটেন্ট পোস্ট করতে হবে।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে যাত্রা শুরুর আগে ঠিক করতে হবে কোন ধরনের কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে চাই। তাই সংক্ষেপে সকল ধরনের কনটেন্ট ক্রিয়েটর নিয়ে আলোচনা করা হলো।
সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার: ইনফ্লুয়েন্সার বলতে এমন মানুষদের বোঝানো হয় যারা তাদের অনন্য প্রতিভা দিয়ে দর্শকদের মাঝে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করেছেন। তাঁরা সাধারণত নানা ধরনের ব্যান্ডের পণ্যের প্রমোশন করে থাকে। দর্শক তাদের কনটেন্ট দেখে সেই পণ্যগুলো ব্যবহার করে থাকে।
পডকাস্টার: পডকাস্টে সাধারণত হোস্ট এবং অতিথি মিলে সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। পডকাস্ট চালানোর জন্য কোনো রেডিও হোস্টিং অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। পডকাস্ট শ্রোতারা সাধারণত হোস্টের অভিজ্ঞতা থেকে কথা শুনতে চান, কোন বিষয়ে ব্যক্তিগত মতামত জানতে চান। একটি পডকাস্ট সেট আপ করতে খুব বেশি খরচ হয় না। স্মার্টফোনে রিভারসাইড এবং ডেস্ক্রিপ্ট অ্যাপের মাধ্যমে পডকাস্ট পর্বগুলি রেকর্ড এবং সম্পাদনা করা যায়। পডকাস্ট ট্র্যাকশন লাভ করার সাথে সাথে স্পনসরশিপ থেকে উপার্জন শুরু করা যায়।
ভ্লগার: ভ্লগার সাধারণত ভিডিও তৈরি করে এবং সেগুলিকে ইউটিউব, ফেসবুক এর মতো প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করে। এই ভিডিওগুলোর বেশিরভাগই নির্মাতার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যেমন- তাদের ভ্রমণ, তাদের নতুন কেনাকাটা বা তাদের কর্মজীবনের ভ্রমণ সম্পর্কে হয়ে থাকে।
ব্লগার/লেখক: নির্মাতা যারা বিভিন্ন বিষয়ে লেখা প্রকাশ করেন।
ইউজার-জেনারেটেড কন্টেন্ট (ইউজিসি) ক্রিয়েটর: যারা ব্র্যান্ডের পণ্য বা অফার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করেন, তাদেরকে ইউজার-জেনারেটেড কন্টেন্ট (ইউজিসি) ক্রিয়েটর বলে।
প্রথমত, কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে হলে সবার আগে নিজের সৃজনশীল ব্যক্তিত্বকে খুঁজে বের করতে হবে। নিজের মধ্যে সৃজনশীলতা না থাকলে, কখনোই সফল হওয়া সম্ভব না। সৃজনশীলতার উপরে নির্ভর করবে আপনি কোন ধরনের কনটেন্ট ক্রিয়েটর হবেন। যেমনঃ কেউ যদি মানুষকে হাসাতে পারে, তাহলে সে বিনোদনের দিকে যাবে। আবার কেউ যদি খুব সুন্দর করে পড়া বুঝাতে পারে, তাহলে শিক্ষামুলক ভিডিও বানাতে পারেন। তাই নিজের সৃজনশীলতা সম্পর্কে জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয়ত, কোন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আপনি কনটেন্ট ক্রিয়েট র হতে চান তা ঠিক করতে হবে। ইউটিউব, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম সহ নানা প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। সঠিক প্ল্যাটফর্ম নির্ধারণ করতে পারলে কাজ অনেক সহজ হবে।
তৃতীয়ত, নিজস্ব স্টাইলের মাধ্যমে ব্র্যান্ড তৈরি করা। প্রত্যেকটা মানুষের নিজস্ব স্টাইল রয়েছে। একজনের কথা বলার ধরন, ইডিট করার ধরন সবকিছুই অন্যজনের তুলনায় আলাদা। ব্র্যান্ড তৈরি করার জন্য প্রথমে দর্শক নির্ধারণ করতে হবে। আপনি কোন বয়সের বা কোন চিন্তা ভাবনার দর্শকের জন্য কনটেন্ট বানাবেন, তা ঠিক করতে পারলে ব্র্যান্ড তৈরি করা অনেক সহজ হবে।
সবশেষে, একটি কনটেন্ট ক্যালেন্ডার তৈরি করতে হবে। কনটেন্ট ক্রিয়েশনে সফল হওয়ার জন্য নিয়মিত কনটেন্ট প্রকাশ করা জরুরি। এইজন্য একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করতে পারলে নিয়মিত কাজ করা বেশ সহজ হবে। কনটেন্ট ক্রিয়েশনের জন্য যেসব যন্ত্রপাতির প্রয়োজন তা কিনতে হবে। যেমন একটি ভালো ক্যামেরা বা স্মার্টফোন, মাইক্রোফোন ইত্যাদি।
যেকোনো কাজে সফল হতে হলে পরিশ্রম করতে হবে এবং অধ্যাবসায় থাকতে হবে। কাজে কখনো সফলতা আসবে আবার কখনো ব্যর্থতা আসবে। তাই ধৈর্য ধারণ করে নিজের কাজ করে যেতে হবে। তাহলেই সফলতা আসবে।
Comments