Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তায়্যিবা |
কোনো প্রতিষ্ঠান কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে কর্পোরেট গভর্নেন্স। এটি স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং স্থায়ীভাবে কোম্পানির উন্নয়ন নিশ্চিত করে। কর্পোরেট গভর্নেন্স মূলত একটি কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়। পরিচালনা পর্ষদ কীভাবে কাজ করবে, কাঠামো বাস্তবায়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে তার নির্দেশনা দেয় কর্পোরেট গভর্নেন্স । কর্পোরেট গভর্নেন্স কেবল একটি কোম্পানির লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখে না , এটি কোম্পানিটির স্টক মূল্য বা শেয়ার প্রাইসের উপরও গভীর প্রভাব ফেলে। যা একটি কোম্পানির আর্থিক অবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
কর্পোরেট গভর্নেন্সে্র মৌলিক বিষয়বস্তু
কর্পোরেট গভর্নেন্স হল এমন একটি কাঠামো যার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো পরিচালিত হয় এবং তাদের লক্ষ্য পূরণ করা হয়, একই সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখা হয়। এর মধ্যে আছে শেয়ারহোল্ডার, কর্মচারী, গ্রাহক, সরবরাহকারী এবং সরকার। কর্পোরেট গভর্নেন্সের চারটি মৌলিক নীতিমালা হল:
- হিসাবরক্ষণ: সঠিক এবং স্বচ্ছ আর্থিক রেকর্ড বজায় রাখা।
- স্বচ্ছতা: স্টেকহোল্ডারদের কাছে নির্ভেজাল, সত্য এবং সময়োপযোগী তথ্য নিশ্চিত করা।
- ন্যায্যতা: সমস্ত স্টেকহোল্ডারকে সমান এবং নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করা।
- দায়বদ্ধতা: প্রতিষ্ঠানের ভেতরে যার যার কাজের জন্য দায়বদ্ধ করা।
কর্পোরেট গভর্নেন্স যেভাবে কাজ করে
কর্পোরেট গভর্নেন্সের মূল লক্ষ্য হল কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। মূলত, কর্পোরেট গভর্নেন্স একটি কোম্পানির লক্ষ্য অর্জন এবং আইনি, সামাজিক ও বাজারের প্রত্যাশাগুলো পূরণের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আস্থা এবং বিশ্বাস বজায় রেখে কর্পোরেট গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠানটির নৈতিক ও কার্যকর পরিচালনা নিশ্চিত করে।
ভাল গভর্নেন্সের জন্য প্রয়োজন:
- কৌশলগত সামঞ্জস্য: স্টেকহোল্ডারের স্বার্থ এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে লক্ষ্য নির্ধারণ।
- নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ: উচ্চ–মানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ যা একটি টেকসই ব্যবসার ভিত্তি স্থাপন করে।
- স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা: সিদ্ধান্ত এবং কার্যক্রম দৃশ্যমান এবং যুক্তিযুক্ত রাখা।
কর্পোরেট গভর্নেন্স এবং স্টক প্রাইসের উপর এর প্রভাব
ভাল কর্পোরেট গভর্নেন্সের বাস্তবায়ন স্টক মূল্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে এর নির্ভরযোগ্যতা এবং ভবিষ্যৎ কার্যক্ষমতার সূচক হিসেবে দেখে। গবেষণায় দেখা গেছে, শক্তিশালী গভর্নেন্স কাঠামো রয়েছে এমন কোম্পানিগুলো স্টক বাজারে উচ্চতর মূল্য লাভ করে। এর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-
- বিনিয়োগকারীর আস্থা: স্বচ্ছ এবং নৈতিক চর্চা আরও বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করে, যা কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা বাড়ায়। শেয়ারের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে স্টক মূল্য বৃদ্ধি পায়।
- ঝুঁকি হ্রাস: কার্যকর গভর্নেন্স আর্থিক ঝুঁকি হ্রাস করে, যা বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির স্থায়িত্ব সম্পর্কে আশ্বস্ত করে।
- উন্নত কার্যক্ষমতা: শক্তিশালী গভর্নেন্সের অধিকারী কোম্পানিগুলো প্রায়শই উন্নত আর্থিক ফলাফল দেখায়, যা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ায়।
উদাহরণস্বরূপ, ইন্দোনেশিয়ান স্টক এক্সচেঞ্জে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে যে, শক্তিশালী কর্পোরেট গভর্নেন্স কাঠামো রয়েছে এমন কোম্পানিগুলো স্টক মূল্যের স্থিতিশীলতা এবং বৃদ্ধিতে ধারাবাহিকভাবে তাদের প্রতিযোগীদের ছাড়িয়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা সক্রিয়ভাবে এমন কোম্পানিগুলো অনুসন্ধান করে, যার ফলে তাদের স্টক মূল্যায়ন এবং বাজার মূলধন বৃদ্ধি পায়।
সুসংগঠিত কর্পোরেট গভর্নেন্স স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং নৈতিক আচরণ নিশ্চিত করে, স্টেকহোল্ডারদের আস্থা তৈরি করে এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের পথ সুগম করে। স্টক মূল্যের উপর এর প্রভাব অস্বীকার করা তাই কোনভাবেই সম্ভব নয়। ভাল গভর্নেন্স বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে, বাজারে প্রতিষ্ঠানটির আস্থা বৃদ্ধি করে এবং এর কার্যক্ষমতাকে উন্নত করে। তাই এই জটিল বাজারে ক্রমবর্ধমান গতিশীলতার জন্য শক্তিশালী কর্পোরেট গভর্নেন্সকে অগ্রাধিকার দেওয়া আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং স্থায়ী সাফল্য অর্জনের জন্য অপরিহার্য।
Comments