Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়েশা আক্তার |
শৈশবের স্মৃতির কথা মনে করলেই আমাদের মনে পড়ে কটন ক্যান্ডি বা হাওয়াই মিঠাইয়ের কথা। ছোটোবেলায় কেউ হাওয়াই মিঠাই খায়নি, এমন মানুষ বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। ঈদ, মেলায় কিংবা পার্কে ঘুরতে গেলে বাবা-মায়ের কাছে আমাদের বায়না থাকতো হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার। এখনও রাস্তায় আমরা ছোটোবেলার সেই গোলাপি, সাদা রঙয়ের হাওয়াই মিঠাই দেখতে পাই। অতি পরিচিত এই হাওয়াই মিঠাই কিংবা কটন ক্যান্ডির ব্যবসা শুরু করে আপনি মানুষকে খুব সহজেই স্মৃতিকাতর করে তুলতে পারবেন। আজকে আমরা জানবো কিভাবে এই অতি পরিচিত হাওয়াই মিঠাই কিংবা কটন ক্যান্ডিকে আমরা নতুন রুপে মানুষের সামনে তুলে ধরে ব্যবসায় রুপ দিতে পারবো। মাত্র ৫টি ধাপ অনুসরণ করেই এই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক শৈশবের প্রিয় এই কটন ক্যান্ডি ব্যবসার সবকিছু।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ
প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি অর্গানিক কটন ক্যান্ডি নাকি ঐতিহ্যবাহী কটন ক্যান্ডি নাকি উভয়ই বিক্রি করতে চাচ্ছেন। অর্গানিক কটন ক্যান্ডি সাধারণত চিনি দিয়ে তৈরি করা হয় এবং স্বাদ ও রং সবসময় প্রাকৃতিক হয়ে থাকে। কোনপ্রকার কৃত্রিম রং এতে ব্যবহার করা হয় না। অন্যদিকে, ঐতিহ্যবাহী কটন ক্যান্ডি চিনি, কৃত্রিম গন্ধ এবং রাসায়নিক রং ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। যেহেতু কৃত্রিম রঞ্জক পদার্থ ব্যবহার করা হয়, তাই ঐতিহ্যবাহী কটন ক্যান্ডি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তবে অন্যদের থেকে ব্যতিক্রমীভাবে নিজের ব্যবসার প্রসার করতে চাইলে আপনি নানা ডিজাইনের অর্গানিক কটন ক্যান্ডি বিক্রি করতে পারেন। সাধারণত বাংলাদেশে আমরা তিন রঙয়ের কটন ক্যান্ডি দেখে থাকি। এক্ষেত্রে ভিন্ন রঙ, ডিজাইন, টপিংস যোগ করে নিজের সৃজনশীলতার প্রয়োগ করতে পারেন।
ফুড ব্যবসা রেজিস্ট্রেশন
আপনি কোন ধরনের কটন ক্যান্ডি বিক্রি করতে চান তা জানার পর, আপনাকে স্থানীয় খাদ্য আইন এবং পারমিট নিয়ে জানতে হবে। যদি আপনি কটন ক্যান্ডি নিয়ে একটি বড় ব্যবসা করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে ফুড ব্যবসা নিয়ে সকল আইন সম্পর্কে জানতে হবে। ফুড ব্যবসা সংক্রান্ত রেজিস্ট্রেশনের কোনো নিয়ম থাকলে তা অনুসরণ করতে হবে। ব্যবসার শুরু আপনি ফুড কোর্ট দিয়ে করতে পারেন। কোনো উৎসবে, মেলায়, শপিংমলে যদি আপনি নিজের কটন ক্যান্ডির ব্যবসা শুরু করতে চান, তাহলে তাদের নিজস্ব যে নিয়মাবলী আছে তা অনুসরণ করতে হবে।
ব্যবসা পরিকল্পনা করা
পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা সম্ভব নয়। কটন ক্যান্ডি নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে আপনাকে একটি সুষ্ঠ পরিকল্পনা করতে হবে। ব্যবসার শুরু কি আপনি ছোটো কোনো ফুড কোর্ট থেকে করবেন নাকি বড় পরিসরে শুরু করবেন সে বিষয়ে একটি পরিকল্পনা থাকতে হবে। যদি ছোটো পরিসরে ব্যবসা শুরু করেন, তাহলে নিজের প্রতিষ্ঠানকে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করার জন্য বিভিন্ন বড় শপিং মল, জাতীয় কোনো অনুষ্ঠানে কিংবা বইমেলার মতো জায়গায় স্টল দিয়েও শুরু করতে পারেন। কিভাবে আপনি সামনে এগিয়ে যাবেন এবং কিভাবে সৃজনশীলতার প্রয়োগ করে স্ট্রিট কটন ক্যান্ডি বিক্রেতাদের থেকে নিজেকে আলাদা করে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি করবেন, সে বিষয়ে একটি লক্ষ্য এবং রোডম্যাপ থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
কটন ক্যান্ডি ব্যবসা শুরু করতে হলে কিছু সরঞ্জামের প্রয়োজন। যেমন- কটন ক্যান্ডি কার্ট, কটন ক্যান্ডি মেশিন, কটন ক্যান্ডি কোন ,কটন ক্যান্ডি চিনি, প্রতিরক্ষামূলক চশমা, ফুড গ্লাভস ইত্যাদি। তবে এইসব সরঞ্জামের দাম খুব বেশি নয়। অল্প বাজেটেই এই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
মার্কেটিং
যেকোনো কাজে সফল হতে হলে আপনাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা হতে হবে। আপনি যদি কটন ক্যান্ডি ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে চান, তবে আপনাকে ভিন্নভাবে ভাবতে হবে। অতি পরিচিত এই ব্যবসাকে নতুনরুপে মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারলেই আপনি সফল হবেন। এরজন্য প্রয়োজন মার্কেটিং। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পেইজ খুলে আপনি অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও ব্যবসা করতে পারেন। নিয়মিত ভিডিও পোস্ট করে আপনি মার্কেটিং করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি চীন, কোরিয়া থেকে আইডিয়া নিতে পারেন। তারা নানা ডিজাইনের, নানা রঙয়ের কটন ক্যান্ডি বিক্রি করে।
কোনো ব্যবসা ছোটো কিংবা বড় নয়। অতি সাধারণ কটন ক্যান্ডিকে ও একটি সফল ব্যবসায় পরিণত করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠ পরিকল্পনা, মার্কেটিং, দৃঢ়সংকল্প এবং কঠোর পরিশ্রম।
Comments