ইনোভেশন এন্ড স্কেলিং

বাংলাদেশে শিক্ষার নতুন দিগন্ত ‘এডটেক’

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়শা মারিয়া

এডটেক হল শিক্ষাকে আরও আকর্ষণীয়, কার্যকর এবং সহজলভ্য করার জন্য প্রযুক্তির  ব্যবহার। এডুকেশন (শিক্ষা) এবং টেকনোলজি (প্রযুক্তি) এর সংমিশ্রণই হলো এডটেক।

বর্তমানে গ্লোবাল এডটেক মার্কেটের আকার ৭৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৭ সালে ৩১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এশিয়ার বর্ধনশীল তরুণ প্রজন্ম এই বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশের এডটেক খাতের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের মাঝামাঝি। শিক্ষাব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা নিয়ে এই খাতে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ১০ মিনিট স্কুল এডটেকের পথিকৃৎ। এছাড়াও “শিখো”ও এই খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করেছে।

বাংলাদেশে এডটেক এর যাত্রা

২০০০ সালের আগে এডটেক বলতে বাংলাদেশে খুব একটা কিছু ছিল না। বিটিভিতে কম্পিউটার সম্পর্কিত অনুষ্ঠান এবং গাইডবইয়ে সিডি যুক্ত হওয়া ছিল প্রথম পদক্ষেপ। ২০০৯-২০১০ সালের দিকে “অন্যরকম পাঠশালা” এর উদ্ভাবনের সাথে এডটেকের যাত্রা শুরু।

২০১৪ সালে “টেন মিনিট স্কুল” এর সাফল্যের পরে এডটেক খাতে ব্যাপক উত্থান ঘটে। “শিখো”, “বহুবৃহি” ইত্যাদি অনেক প্রতিষ্ঠান এই খাতে আসে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩০০-এরও বেশি এডটেক প্ল্যাটফর্ম চালু হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো বিভিন্ন সেগমেন্টে সেবা প্রদান করে, যেমন -মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি।

কোভিড-১৯ মহামারীতে এডটেক প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যাপক সাফল্য লাভ করে। “টেন মিনিট স্কুল” এবং “শিখো” সহ অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যাপক পরিমাণে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে।

গো-টু-মার্কেট কৌশলের ভিত্তিতে এডটেক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: ফরমাল এবং ইনফরমাল। ইনফরমাল সেক্টরে বিভিন্ন ভার্টিক্যাল রয়েছে, যেমন- প্রি-স্কুল, কে-১২, টেস্ট প্রিপ, ইত্যাদি। এডটেক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্কেলিং এবং মুনিটাইজেশনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশে এডটেকের অগ্রযাত্রা ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার বিকাশ।

বাংলাদেশে এডটেকের যাত্রা ও শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ভূমিকা। | ছবি সংগৃহীত।

বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কিছু এডটেক স্টার্টআপ

বাংলাদেশে ১৬ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার একটি বড় অংশ ২৬ বছরের কম বয়সী। সরকারের ডিজিটাইজেশন নীতির ফলে এডটেক খাত ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভার্চুয়াল ক্লাসরুম থেকে শুরু করে অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত, এডটেক প্রধান ধারায় এসেছে এবং শিক্ষা প্রদানের পদ্ধতি পরিবর্তন করছে।

টেন মিনিট স্কুল: ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করা এই প্ল্যাটফর্ম শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, আইইএলটিএস, জিআরই প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনলাইন ভিডিও লেকচার প্রদান করে। তাদের ইউটিউব চ্যানেলের ১.৭৯ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।

ইন্টারেক্টিভ কেয়ার্স: এই প্ল্যাটফর্ম উচ্চশিক্ষা, চাকরি প্রস্তুতি, দক্ষতা উন্নয়ন, মাস্টারক্লাস ইত্যাদি বিষয়ে অনলাইন কোর্স প্রদান করে। পাইথন, জাভাস্ক্রিপ্ট, আইইএলটিএস, জিআরই প্রভৃতি জনপ্রিয় কোর্স রয়েছে। তারা সিড ফান্ডও সংগ্রহ করেছে।

বহুবৃহি: ২০১৬ সালে দুইজন বিইউই শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠিত এই প্ল্যাটফর্মে ৬০,০০০-এরও বেশি নিবন্ধিত শিক্ষার্থী এবং ৫০-এরও বেশি কোর্স রয়েছে। তারা “বহুবৃহি বাইটস” নামে একটি মাইক্রো লার্নিং প্ল্যাটফর্মও চালু করবে।

থ্রাইভ এডটেক: এই প্ল্যাটফর্ম শিক্ষকদের ক্লাস শিডিউল করতে এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে সহায়তা করে। কোভিড-১৯ মহামারীতে তারা নিজেদের সেবা বিনামূল্যে প্রদান করেছিল।

শিখো: ২০২০ সালে শিখো সিড ফান্ড সংগ্রহ করে। এর মোবাইল অ্যাপের ৫০,০০০-এরও বেশি ডাউনলোড হয়েছে। তারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞান ক্র্যাশ কোর্স চালু করেছে।

আপস্কিল: এই প্ল্যাটফর্মে ৩৪টিরও বেশি ভিডিও লেকচার রয়েছে। তারা চালডালের সাথে একটি আয়-ভাগ চুক্তি করেছে এবং সিড ফান্ড সংগ্রহ করেছে।

সহপাঠী: শিক্ষার্থীদের তাদের উপযোগী শিক্ষকদের সাথে সংযুক্ত করার জন্য একটি সামাজিক শিক্ষণ প্ল্যাটফর্ম।

শিক্ষক বাতায়ন: সরকারি একটি প্রকল্প যার লক্ষ্য দেশে শিক্ষার ডিজিটালীকরণ করা।

ওস্তাদ: সকলের জন্য অনলাইন শিক্ষা সহজলভ্য করে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করে। লাইভ ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করে।

বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য এডটেক স্টার্টআপ ও শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার।

বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কিছু এডটেক স্টার্টআপ ও তাদের ভূমিকা। | ছবি সংগৃহীত।

এডটেক প্রতিষ্ঠানগুলি যেসব প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে

বাংলাদেশের এডটেক খাত দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এডটেক খাতের চ্যালেঞ্জের কারণে বাংলাদেশের এডটেক প্রতিষ্ঠানগুলোও যেসব সংকটের মুখোমুখী হচ্ছে-

প্রতিযোগিতা: কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট টিউটরদের প্রভাব, অনেক এডটেক প্রতিষ্ঠানের অনলাইন কোচিং সেন্টারে পরিণত হওয়া।

কপি করা কোর্স: অনেক প্রতিষ্ঠান বিদেশি কোর্স কপি করে বাংলায় অনুবাদ করে, আসল মূল্য বা গবেষণা কম।

বাজারের অতিরিক্ত প্রতিযোগিতা: অনেক এডটেক প্রতিষ্ঠান থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজারে স্থান করে নিতে কষ্ট হচ্ছে।

কম লাভ: অনেক এডটেক প্রতিষ্ঠানের আয় ও লাভ কম।

ব্যবসায়িক পরিকল্পনার অভাব: বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান তাদের সম্ভাব্য বাজারের আকার ও গ্রাহকদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারে না।

তবে বাংলাদেশে ডিজিটাল বিভাজন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের অনেক অংশে হাইস্পিড ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস নেই। ইন্টারনেট ব্যবহার ব্যয়বহুল। এছাড়াও, অনলাইন শিক্ষা সম্পর্কে কিছু ধারণাগত চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

সরকারের সহায়তা, ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ার সাথে এডটেক খাতের বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং নতুন এডটেক প্রতিষ্ঠানগুলোও এই বাজারে নতুনত্ব আনছে।

“তথ্যসূত্র”

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর গতিবিধি নির্দেশ করে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট

Previous article

বিকাশের মার্কেটিং কৌশল

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *