Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির |
অটোমোবাইল ইতিহাসের এক অপরিহার্য অধ্যায়ের নাম ফোর্ড মোটর কোম্পানি। ১৯০৩ সালে হেনরি ফোর্ডের হাত ধরে শুরু হওয়া প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী যান্ত্রিক পরিবহনে এক অভাবনীয় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। হেনরির স্বপ্ন ছিল সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী গাড়ি তৈরি করা। ফোর্ডের যুগান্তকারী “মডেল টি” গাড়ি থেকে শুরু করে, ফোর্ডের প্রতিটি উদ্ভাবন তাঁকে সময়ের থেকে এগিয়ে রাখে।
ফোর্ডের প্রথম দিনগুলো
ফোর্ড মোটর কোম্পানি ১৯০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মাত্র ১২ জন বিনিয়োগকারী মিলে ২৮ হাজার ডলার মূলধন নিয়ে এই যাত্রা শুরু হয়। সেই সময়ের গাড়ি তৈরি পদ্ধতিতে বিপ্লব ঘটিয়ে হেনরি ফোর্ড প্রথমে বাজারে আনে Model A। তবে, ফোর্ডের প্রকৃত সাফল্য আসে ১৯০৮ সালে, যখন “Model T” বাজারে আসে। কারণ “মডেল টি” গাড়িটি ছিল সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই, এবং এটি তৈরির পদ্ধতিও ছিল সস্তা এবং সহজ। ফলে, গাড়ি তৈরি ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়। “মডেল টি” ছিল সস্তা, নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই, যা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা তৈরি করে। এর ফলে ফোর্ড কোম্পানি মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়ে উঠে।
বিশ্বব্যাপী ফোর্ডের বিস্তার
বর্তমানে ফোর্ড মোটর কোম্পানি বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। ২০২৩ সালে ফোর্ডের আয় ১৬০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ২০২৪ সালের তথ্য বলছে ফোর্ডর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। ফোর্ড মোটর কোম্পানি তাদের উৎপাদন ও বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করেছিল মূলত ইউরোপে। পরবর্তীতে ১৯৯০ এর দিকে ফোর্ড এশিয়ার বাজারে প্রবেশ করে। কোম্পানিটির সব থেকে বেশি আয় হয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। বাংলাদেশে ফোর্ড প্রথম যাত্রা শুরু করে ২০০০ সালের শুরুর দিকে। বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের ডিলারশিপ রয়েছে। সাশ্রয়ী দামে উন্নত প্রযুক্তির গাড়ি সরবরাহের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশি ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করেছে।
ফোর্ডের সাফল্যের কারণ
ফোর্ডের সাফল্যের পিছনে রয়েছে একাধিক বিপ্লবী প্রযুক্তি এবং ব্যবসায়িক কৌশল। হেনরি ফোর্ড প্রথমবারের মতো অ্যাসেম্বলি লাইনের ধারণা উদ্ভাবন করেন। যা মূলত একটি উৎপাদন প্রক্রিয়া, যেখানে পণ্যের বিভিন্ন অংশ লাইন ধরে যোগ করা হয়, যা উৎপাদন সময় এবং খরচ কমিয়ে দ্রুত উৎপাদন নিশ্চিত করে। এই পদ্ধতি প্রথমবার ফোর্ড দ্বারা ১৯১৩ সালে গাড়ি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ফোর্ডর গুণগত মানের পাশাপাশি, ফোর্ডের গাড়ির ডিজাইন, শক্তিশালী ইঞ্জিন এবং নিখুঁত প্রযুক্তির ব্যবহারও তাদের বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত করেছে।
এর বাইরে ফোর্ড মোটর কোম্পানির গাড়ি গুলো “ফর্মুলা-১” এবং অন্যান্য মোটরস্পোর্টস ইভেন্টেও অংশগ্রহণ করে। তাদের গাড়িগুলো “ফর্মুলা-১” এবং “লে মানস’র”২৪ ঘন্টা রেসে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে আসছে।
ফোর্ডের ভবিষ্যৎ
বর্তমানে ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে আছে টেসলা। তবে ফোর্ডেও বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং প্রযুক্তিতে প্রচুর বিনিয়োগ করছে। তাদের বৈদ্যুতিক ট্রাক F-150 Lightning এবং Mustang Mach-E গাড়ি ইতিমধ্যেই বিপুল সাড়া ফেলেছে গাড়ি প্রেমিকদের মাঝে। ফোর্ড বিশ্বাস করে, ভবিষ্যতের গাড়ি শিল্পে তাদের নেতৃত্ব অটুট থাকবে।
ফোর্ডের বর্তমান সিইও জিম ফার্লি বলেছেন, “ফোর্ড শুধু একটি গাড়ি কোম্পানি নয়, এটি একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ড। আমাদের লক্ষ্য কেবল লাভ করা নয় বরং সবার জন্য সাশ্রয়ী এবং টেকসই গাড়ির সমাধান দেওয়া।”
ফোর্ড মোটর কোম্পানির এই অসাধারণ যাত্রা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনেছে। তাদের উদ্ভাবনী কৌশল এবং ব্যবসায়িক মডেল অন্য কোম্পানিগুলোর জন্য অনুপ্রেরণামূলক।
Comments