গ্লোবাল ট্রেড

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল: থাইল্যান্ড, লাওস এবং মিয়ানমারের মাদক পাচার কেন্দ্র

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি কুখ্যাত এলাকা, যা থাইল্যান্ড, লাওস এবং মিয়ানমারের মধ্যবর্তী সীমান্ত অঞ্চলকে নির্দেশ করে। এই অঞ্চলটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অবৈধ মাদক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে আফিম ও হেরোইন উৎপাদন এবং পাচারের জন্য এই অঞ্চল কুখ্যাত সারা বিশ্বে। মাদক ব্যবসার কারণে এই অঞ্চলটি শুধু স্থানীয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক ভাবেও সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের ভৌগলিক অবস্থান

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মেকং নদীর তীরে অবস্থিত। এটি তিনটি দেশের সীমান্তে বিস্তৃত। থাইল্যান্ড, লাওস এবং মিয়ানমার এই অঞ্চলটির মূল অংশ। মেকং নদী এই অঞ্চলের যোগাযোগ এবং মাদক পরিবহনের একটি প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর আশেপাশে পাহাড়ি অঞ্চলে মাদক চাষ এবং উৎপাদনের জন্য আদর্শ পরিবেশ প্রদান করে।

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের ভৌগলিক অবস্থান, থাইল্যান্ড, লাওস ও মিয়ানমারের সংযোগস্থলে অবস্থিত।

মাদক উৎপাদন ও বাণিজ্য

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল মূলত আফিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এই অঞ্চল থেকে উৎপাদিত আফিমকে প্রক্রিয়াজাত করে হেরোইন তৈরি করা হয়। একসময় এই অঞ্চলটি বিশ্বের মোট আফিম উৎপাদনের প্রায় ৭০% পর্যন্ত সরবরাহ করত। তবে বর্তমানে আফগানিস্তান আফিম উৎপাদনে শীর্ষস্থান দখল করায় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের ভূমিকা কমে এসেছে। তবুও, এটি এখনও বিশ্বের মোট আফিম উৎপাদনের প্রায় বড় একটি অংশ সরবরাহ করে বলে ধারণা করা হয়।

এই ব্যবসা চালানোর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, অভিজাত গোষ্ঠী ও গেরিলা গ্রুপের প্রভাব এই ব্যবসার একটি বড় চালিকাশক্তি। দ্বিতীয়ত, সরকারি নিয়ন্ত্রণের বেশ অভাব রয়েছে এই অঞ্চলে তাই আইনশৃঙ্খলার অবস্থাও দুর্বল। এছাড়া, দারিদ্র্য এবং জীবিকার অভাবে স্থানীয় জনগণ বাধ্য হয়ে আফিম চাষে জড়িয়ে পড়ে। মাদক উৎপাদন ও বাণিজ্য থেকে আসা অর্থ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র সংগ্রহ এবং প্রভাব বিস্তারে সাহায্য করে।

বিশ্বব্যাপী প্রভাব

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল থেকে উৎপাদিত মাদক শুধুমাত্র এশিয়ায় সীমাবদ্ধ নয়; এটি দক্ষিন-এশিয়া  এবং অস্ট্রেলিয়াতেও পাচার হয়। মাদক পাচার থেকে আসা অর্থ সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক অপরাধমূলক নেটওয়ার্ককে সমর্থন দিচ্ছে, যা বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি।

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল অঞ্চলে মাদক উৎপাদন ও বাণিজ্যের কার্যক্রম।

বাংলাদেশের উপর প্রভাব

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের নিকটবর্তী হওয়ায় বাংলাদেশও এই মাদক ব্যবসার নেতিবাচক প্রভাব অনুভব করছে। বিশেষ করে অনেক ইয়াবা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসছে সীমান্ত পেরিয়ে। ইয়াবার সহজলভ্যতা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মাদকের ব্যবহার বাড়িয়ে তুলছে, যা সামাজিক এবং পারিবারিক বন্ধন নষ্ট করছে। একইসাথে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই মাদক মোকাবিলায় ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল মাদক উৎপাদন ও পাচারের ক্ষেত্রে একটি গুরুতর আন্তর্জাতিক সমস্যা। এর নেতিবাচক প্রভাব শুধুমাত্র স্থানীয় পর্যায়েই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী অনুভূত হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিকস্তরে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

মাদক ব্যবসা বন্ধ করার জন্য সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সাধারণ জনগণকে একত্রে কাজ করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিকল্প জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি করলে এই সমস্যা থেকে ধীরে ধীরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

“তথ্যসূত্র”

রূপা গ্রুপের পথচলাঃ সাফল্যের পেছনের গল্প

Previous article

জেনে নিন কোনটি এখনকার সবচেয়ে নিরাপদ মেসেজিং অ্যাপ

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *