Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তায়্যিবা |
কোন বিষয়বস্তু নিয়ে খুঁটিয়ে জানার জন্য পড়াশোনা বা গবেষণার বিকল্প নেই। তবে চাইলেই তো যেনতেন উৎস থেকে তথ্য আস্বাদন করা যায় না। এর পেছনে থাকতে হবে অকাট্য যুক্তি ও প্রমাণ। গবেষকদের করে যাওয়া সেসব একাডেমিক প্রবন্ধ, থিসিস ও গবেষণাপত্রই আমাদের চারপাশের অজানা সব প্রশ্নের উত্তর মিলিয়ে দেয়। আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার জন্য গবেষকদের অন্যতম এক হাতিয়ার হলো গুগল স্কলার। এই লেখায় আমরা জানব কী এই গুগল স্কলার , কীভাবে এটি থেকে আপনিও সর্বোচ্চ লাভবান হতে পারবেন।
গুগল স্কলার কী?
গুগল স্কলার হলো সহজ কথায় গুগলের একটি বিশেষায়িত সার্চ ইঞ্জিন যা গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। এখানে বিভিন্ন শাখার গবেষণা প্রবন্ধ সংগৃহিত ও সূচিবদ্ধ থাকে। ২০০৪ সালে চালু হওয়া এই প্ল্যাটফর্মটি গবেষক, শিক্ষার্থী এবং পেশাদারদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, যেখানে একাডেমিক প্রবন্ধ, থিসিস, বই, বিভিন্ন সম্মেলনের গবেষণাপত্র এবং পেটেন্টের তথ্য পাওয়া যায়। গবেষণার কাজে ব্যবহৃত গতানুগতিক ডাটাবেসগুলোর তুলনায় এটি বিনামূল্যে প্রচুর গবেষণা সামগ্রী সরবরাহ করে, যা গবেষণার জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
গুগল স্কলার কীভাবে কাজ করে?
গুগল স্কলার গুগলের ওয়েব ক্রলার প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক সামগ্রী খুঁজে বের করে এবং সূচিবদ্ধ করে। এই প্রক্রিয়াটি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমত, গুগল স্কলার একাডেমিক প্রকাশনাগুলোকে স্ক্যান করে এবং গবেষণা প্রবন্ধ, সম্মেলন পত্র ও প্রাক-প্রকাশনা সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে, সেগুলোর শিরোনাম, লেখক, সারাংশ এবং উদ্ধৃতি সংক্রান্ত তথ্য সূচিবদ্ধ করে গবেষণা সামগ্রী সংরক্ষণ করে।
যখন ব্যবহারকারী কোনো অনুসন্ধান করে, গুগল স্কলার এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ আই) ও মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে সার্চের উদ্দেশ্য বুঝতে চেষ্টা করে। এতে অনুসন্ধান ফলাফল প্রাসঙ্গিকতা, উদ্ধৃতির সংখ্যা এবং উৎসের বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে র্যাংকিং করা হয়। অনুসন্ধানের ফলে প্রাসঙ্গিক গবেষণা পত্রের তালিকা প্রদর্শিত হয় যেখানে উদ্ধৃতি সংখ্যা, লেখকের তথ্য এবং পূর্ণ-পাঠের লিঙ্ক অন্তর্ভুক্ত থাকে। অনেক ক্ষেত্রে সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক গবেষণা পত্রের পরিবর্তে মুক্ত-প্রকাশনা সংস্করণ পাওয়া যায়।
গুগল স্কলারের ব্যবহারকারীরা কারা?
গুগল স্কলার বিভিন্ন একাডেমিক ও পেশাদার ক্ষেত্রের ব্যবহারকারীদের জন্য উপযোগী:
১. শিক্ষার্থী ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ
- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণা প্রবন্ধ, থিসিস ও প্রবন্ধ লিখতে এটি ব্যবহার করেন।
- অধ্যাপক ও গবেষকরা গবেষণা পর্যালোচনা, উদ্ধৃতি বিশ্লেষণ ও গবেষণার শূন্যস্থান চিহ্নিত করতে গুগল স্কলার ব্যবহার করেন।
২. পেশাদার ও বিশেষজ্ঞরা
- বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও গবেষণা সম্পর্কে হালনাগাদ থাকতে এটি ব্যবহার করেন।
- চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা ক্লিনিকাল গবেষণা, কেস স্টাডি ও মেডিকেল গাইডলাইন খুঁজতে গুগল স্কলার ব্যবহার করেন।
৩.গবেষণা প্রতিষ্ঠান
- বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারিকরা গবেষণাপত্র সংরক্ষণ ও একাডেমিক প্রকাশনাকে আরও সহজলভ্য করতে গুগল স্কলারকে ব্যবহার করেন।
- গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এটি ব্যবহার করে গবেষণা ডাটাবেসের পরিপূরক হিসেবে।
গুগল স্কলারের সুবিধাসমূহ
- বিস্তৃত তথ্যসম্ভার: এটি বিভিন্ন শাখার গবেষগুগল স্কলারণা সংগ্রহ করে, যা একক কোনো ডাটাবেসের চেয়ে বেশি তথ্যবহুল।
- বিনামূল্যে গবেষণার সুযোগ: এখানে বিনামূল্যে অনেক গবেষণা প্রবন্ধ পাওয়া যায়, যা ব্যয়বহুল জার্নালের উপর থেকে নির্ভরতা কমায়।
- সহজ অনুসন্ধান পদ্ধতি: বুলিয়ান অপারেটর এবং উন্নত অনুসন্ধান বৈশিষ্ট্যগুলি নির্দিষ্ট ফলাফল খুঁজতে সহায়তা করে।
গুগল স্কলার গবেষণার জন্য একটি শক্তিশালী টুল যা গবেষকদের জন্য বিশাল একাডেমিক কন্টেন্ট সহজলভ্য করে তুলেছে। যদিও এটি বিশেষায়িত গবেষণা ডাটাবেসের বিকল্প নয়, তবে এটি শিক্ষার্থী, গবেষক ও পেশাদারদের জন্য একটি সহায়িকা হিসেবে কাজ করে। এর কার্যকারিতা বুঝে যথাযথ ব্যবহার করলে এটি গবেষণা ও পেশাদার ক্ষেত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে।
Comments