Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির |
টানা লোকসানের মধ্যে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর শেয়ারমূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কাঠামো ও আর্থিক সক্ষমতার দিক থেকে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। সেই অর্ধশতাধিক বছর পুরনো যন্ত্রাংশ দিয়ে কাজ করে আসছে দেশের চিনি কল গুলো। তাইতো গেল বেশ কিছু বছর ধরে সরকারি প্রায় ৬ টি চিনিকলের উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু কেন এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি? তারই উত্তর জানার চেষ্টা করব আজকের রিপোর্টে।
লোকসানে ডুবে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়ছে কিভাবে?
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, জিল বাংলা সুগার মিলস, শ্যামপুর সুগার মিলস ও রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি গত কয়েক বছর ধরে টানা লোকসানে থাকলেও, অস্বাভাবিকভাবে তাদের শেয়ারমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
জিল বাংলা সুগার মিলসের অডিট রিপোর্ট বলছে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান ছিল প্রায় ৫৬৮.০৯ কোটি টাকা, যা পরের বছর বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯৪.৬১ কোটি টাকায়। অথচ ডিএসই-তে ১ মার্চ (২০২৩) প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ছিল ১১৮.১ টাকা, যা ১৩ মার্চ বেড়ে দাঁড়ায় ১৪৭.৬ টাকা।
এদিকে, শ্যামপুর সুগার মিলসের উৎপাদন ২০২০ সাল থেকে বন্ধ থাকলেও, ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানিটির জমাকৃত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫৫৮.৬৭ কোটি টাকা। তার পরও, ১ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর ছিল ৬৩.১ টাকা, যা ১৩ মার্চ ৯০.৮ টাকায় উন্নীত হয়।
অন্যদিকে, চিনিকলগুলোর জন্য যন্ত্রপাতি নির্মাণকারী রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানির শেয়ারের দামও আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১ মার্চ এর শেয়ারদর ছিল ৭৪৩ টাকা, যা ১৩ মার্চ বেড়ে হয় ৭৮৩.১ টাকা।
এদিকে নিজের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কেন বাড়ছে তা নিয়ে যেন মাথা ব্যাথাই নেই জিল বাংলা সুগার মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রব্বিক হাসান এর। তিনি গনমধ্যমকে বলেন, “চিনিকল চলছে, আখ মাড়াইও হচ্ছে, তবে আর্থিক অবস্থার উন্নতি এখনো হয়নি। শেয়ারদর কেন বাড়ছে, সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’ তবে জনাব রাব্বিক শেয়ার বাজারে দাম বৃদ্ধি নিয়ে তিনি ধারণা করছেন, বিনিয়োগকারীরা হয়তো মনে করছেন, সরকার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে। এবং এ কারণেই মিল গুলোর শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই বিষয় নিয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষকদের সাথে কথা বললে তারা বলেন এসবই নাকি গুঁজব এর ফল। এ বিষয়ে এক শেয়ার বাজার বিশ্লেষক বলেন, “বাজারে তহবিল সংকট থাকলেও, কিছু অতি-সক্রিয় বিনিয়োগকারী লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়িয়ে স্বল্প মেয়াদে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করেন।”
তবে চিন্তার বিষয় গুলো হলো এমন ঘটনা শুধু এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের সাথে হচ্ছে তা নয়। সম্প্রতি আরও কিছু লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অনিয়মিত ভাবে বেড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি ও বিডি ওয়েল্ডিং।
বাজারে এমন অনিয়মিত ভাবে শেয়ারের দাম ওঠানামা করলে বা শেয়ারের দাম আসলের থেকে বেশি দেখালে তা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্তিতে ফেলে দিতে পারে। তাই শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগকারীদের উচিত শুধুমাত্র সঠিক আর্থিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া , গুজব বা বাজার কারসাজির ফাঁদে পা না দেওয়া।
Comments