Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়েশা আক্তার |
একুশ শতকের এই দ্রুতগতির পৃথিবীতে আমরা সকলেই যেনো এক ম্যারাথন দৌড়ে আছি। অবিরাম এই ছুটে চলার মাঝে কোথাও যেনো একটু অবকাশও নেই। অবিরাম এই ছুটে চলার কারণেই হোক কিংবা একসাথে অনেক কাজ করার কারণে হোক, আমরা প্রায়ই সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। আচ্ছা কেমন হয় যদি আমরা শান্ত , স্থির এবং মননশীল থাকার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো অধিক দক্ষতার সাথে করতে পারি?
আজকে আমরা এমন একটি উপায় নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবো। যার নাম হলো কৃতজ্ঞতা জার্নালিং বা ইংরেজিতে গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং। চলুন জেনে নেই কিভাবে গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং ব্যবহার করে আমরা কাজের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করবো এবং এটিকে দৈনন্দিন রুটিনের একটি অর্থপূর্ণ অংশ হিসেবে গড়ে তুলবো।
গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং কি?
গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং বলতে মূলত বোঝায় আপনি যে জিনিসগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ তা নিয়মিত লিখে রাখা। এই কৃতজ্ঞতা হতে পারে জীবনের বড় কোনো সাফল্য নিয়ে কিংবা রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে মেঘের আনাগোনা দেখে সন্তুষ্ট হওয়া নিয়ে। নভেম্বরের শেষদিকের বৃষ্টি কিংবা বর্ষার প্রথম কদম যদি আপনাকে আনন্দ দেয়, তাহলে আপনি সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে আপনি এই কৃতজ্ঞতা জার্নালিং করতে পারেন।
গ্র্যাটিটিউড জার্নালিংয়ের অনুশীলন আপনার মনোযোগ বৃদ্ধি, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং আপনাকে করণীয় সম্পর্কে ধারণা দেয়। এটি আপনাকে বর্তমানের দিকে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে। গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং লেখা একটি শক্তিশালী কিন্তু সহজ অনুশীলন যা শুধু একটি ইতিবাচক মানসিকতাকে লালন করে না বরং অতিরিক্ত কাজের ফাঁদে না পড়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ফোকাস করতে সহায়তা করে।
গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং কীভাবে শুরু করবেন?
আপনি যদি জার্নালিংয়ে নতুন হন তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। এটি লেখার কোনো সঠিক বা ভুল উপায় নেই। কিছু সহজ পদক্ষেপ অনুসরণ করলেই আপনি কৃতজ্ঞতা জার্নালিং শুরু করতে পারবেন:
১. একটি উৎসর্গীকৃত স্থান নির্বাচন করুন
এমন একটি শান্ত, আরামদায়ক জায়গা নির্বাচন করুন যেখানে আপনি কোনো ধরনের বিভ্রান্তি ছাড়াই লিখতে পারবেন। গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং লেখার জন্য একটি ডায়েরি, প্রিয় কলম, নিজের কাছাকাছি রাখুন যাতে অভ্যাসটি সহজে আয়ত্ত করতে পারেন।
২. দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করুন
আপনি জার্নাল লিখতে প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যায় ৫-১০ মিনিট নির্ধারণ করুন। এটি আপনার সকালের কফির রুটিনের অংশ হিসাবে হোক বা ঘুমানোর আগে হোক নির্ধারণ করতে পারেন।
৩. নির্দিষ্ট প্রম্পটগুলোতে ফোকাস করুন
আপনি লেখার সময় কৃতজ্ঞতা প্রম্পটগুলো ব্যবহার করতে পারেন।যেমন-
- আজ আপনি কোন তিনটি জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞ?
- সাম্প্রতিক কোন জয় বা সাফল্যের জন্য আপনি গর্বিত?
- কে আপনার দিন ভালো করেছে এবং কেন?
৪. আপনার জয় প্রতিফলিত করুন
বড় বা ছোট যেকোনো কৃতিত্বগুলো ট্র্যাক করতে আপনার জার্নাল ব্যবহার করুন। আপনি যা অর্জন করেছেন তার প্রতিফলন আপনাকে অনুপ্রাণিত করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও আপনি যথেষ্ট করছেন না এমন অনুভূতির ফাঁদ থেকে বাঁচাতে সহায়তা করে।
৫. পরিকল্পনার সাথে কৃতজ্ঞতা যুক্ত করুন
দৈনিক পরিকল্পনার সাথে গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং একত্রিত করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি কিসের জন্য কৃতজ্ঞ তা তালিকাভুক্ত করে আপনার দিন শুরু করুন, তারপর দিনের জন্য ২-৩ টি অগ্রাধিকারের রূপরেখা দিন। এটি আপনার কাজের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতির সৃষ্টি করে।
কেন গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং করবেন?
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে কেনো আপনি গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং করবেন? এর উত্তর হলো গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং আপনার মনের নেতিবাচক মনোভাব দূর করে ইতিবাচক চিন্তার প্রসার ঘটাতে সাহায্য করবে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আপনার মস্তিষ্ককে ভালোর দিকে ফোকাস করার জন্য পুনর্ব্যবহার করে, যা চাপ কমায় এবং বৃদ্ধির মানসিকতা গড়ে তোলে।
আপনাকে বাস্তবসম্মত লক্ষ্য সেট করতে সাহায্য করে। এই মুহূর্তে যা ভালো চলছে তা স্বীকার করা আপনাকে সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে সহায়তা করে। এই স্পষ্টতা আপনাকে আপনার করণীয় তালিকা ওভারলোড এড়াতে এবং অর্থপূর্ণ লক্ষ্যগুলোতে ফোকাস করতে সহায়তা করতে পারে।
আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। আপনার অগ্রগতির প্রশংসা করার জন্য সময় নেওয়া আপনাকে মনে করিয়ে দেয় যে ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো আপনি ইতোমধ্যেই নিয়ে ফেলেছেন। এতে আপনার কাজের প্রেশার কমে।
কাজের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি মানে তাড়াহুড়ো নয় কিংবা অনেক কাজের প্রেশার নেওয়া নয়। কৃতজ্ঞতা জার্নালিংয়ের মাধ্যমে আপনি কম কাজ করে বেশি অর্জন করতে পারেন শান্তভাবে, ইচ্ছাকৃতভাবে এবং আনন্দের সাথে।
Comments