কোম্পানি ফরেনসিকস

কীভাবে শুরু হয়েছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যাত্রা?

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির

ছোট একটি পাঠ চক্রের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল আজকের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে। ১৯৭৮ সালে ঢাকা কলেজের পেছনে শিক্ষা সম্প্রসারণ কেন্দ্রের ছোট্ট মিলনায়তনটিতে পাঠচক্রের মাধ্যমে সেই যাত্রা শুরু করে।। প্রথমদিকে এর সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ জন। প্রতি সপ্তাহে তখনকার পাঠকরা একটি নির্দিষ্ট বই পড়ত। পরের সপ্তাহে সেই বই নিয়ে চলতো আলোচনাসভা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ  আবু সায়ীদ। 

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্রে পড়া প্রথম বইটি ছিল “দ্য প্রিন্স”। সেই পাঠচক্রের মাধ্যমে উঠে এসেছিল যে কে কীভাবে “দ্য প্রিন্স” বই এর প্রিন্সকে দেখেছিল। নিয়মিত বই পড়তে গেলে যে পয়সা লাগে, পয়সার জোগান দিতে সদস্যরা আট আনা করে টাকা তুললো। বাকি টাকা আবু সায়ীদ জোগাড় করবেন এই পরিকল্পনায় কার্যক্রম শুরু করেছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে। এভাবে পাঁচ বছর চলে সেই ২৫ সদস্যের পাঠচক্র। ঢাকা কলেজের সাবেক এই শিক্ষক পাঁচ বছরে পাঠচক্রের সাফল্য দেখে এই প্রক্রিয়াটি দেশের সর্বত্র  ছড়িয়ে দিতে চাইলেন। সে সময় সাবেক অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রায় ৫ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। তারপর ইন্দিরা রোডে একটি বাসা ভাড়া করে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়।

সে সময় মূলত আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় এবং সরকারি অনুদানে চলত এর কাজ। পরবর্তীতে ঢাকার বাংলামোটরে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দ পায় কেন্দ্রটি। যেখানে একটি লাইব্রেরি স্থাপন করা হয় । লাইব্রেরি যে যার মত বই পড়তো পাশাপাশি পাঠচক্রগুলো পরিচালিত হতো।

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মূল দুইটি উদ্দেশ্য হল:

১। তরুণদের মন-বয়সের উপযোগী শ্রেষ্ঠ ও অনিন্দ্যসুন্দর বইগুলো পড়ানোর মাধ্যমে তাদের জীবনকে অনুভূতিময় সুন্দর ও উচ্চ মূল্যবোধ সম্পন্ন করে তোলা।

২। পড়ার পাশাপাশি সুস্থ্য সাংস্কৃতিক কর্মসূচির ভেতর দিয়ে তাদের বড় করে তোলা।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উপস্থাপক আবদুন নূর তুষারের ছবি।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার – সাহিত্যের আলো ছড়ানোর অগ্রযাত্রায়। | ছবি: সংগৃহীত।

১৯৮৪ সালে সারা দেশের স্কুল কলেজে “বই পড়া ও উৎকর্ষ” কর্মসূচি নামের একটি বই পড়া কার্যক্রম শুরু করে কেন্দ্রটি। কর্মসূচিতে অংশ নেবার নিয়ম ছিল শিক্ষার্থীরা ১৬টি করে বই নিয়ে পড়ে শেষ করবে এবং পরা শেষে তা ফেরত দিবে। সেই বইতে থাকা বিষয়ের উপরে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয়দের পুরস্কৃত কর হতো বই দিয়ে। 

চারিদিকে বই পড়া কর্মসূচিটি খুব জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। পরবর্তীতে কেন্দ্র বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে আলোর ইশকুল, ভ্রাম্যমাণ বইমেলা, জাতীয় ভিত্তিক লাইব্রেরি কার্যক্রম ইত্যাদি। তখন দেশি-বিদেশি থেকে সহায়তাও আসতে শুরু করে।

সংগঠনটির সে সময়ের সদস্য উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার বলেছেন, ” অর্থাভাব ছিল, যথেষ্ট মানুষ ছিল না। ধার করে, প্রায় ভিক্ষা করে স্যার টাকা এনে কেন্দ্র চালাতেন। কিন্তু আমি একবারও তাকে আশা হারাতে দেখিনি।”

কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ  আবু সায়ীদ সম্পর্কে তুষার আরও বলে, “যখন বই পড়া শুরু হয়, পুরস্কারের বই থেকে মাইক – সব তার দুই দরজার ভঙ্গুর পাবলিকা গাড়ি পেছনে নিয়ে আমরা দুজন যাত্রা করতাম। স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে তিনি তাঁর স্বপ্নের কথা বলতেন।”

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রমের ছবি।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রম – জ্ঞানের আলোয় এগিয়ে চলা। | ছবি: সংগৃহীত।

বর্তমানে কেন্দ্রীয় ও ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিসহ ২,১০০ স্কুল ও কলেজে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কার্যক্রম চলছে, যার নিয়মিত পাঠক সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ১৭ হাজার। তবে কেন্দ্রের বর্তমান সভ্য সংখ্যা আজ ২৮ লক্ষ। এছাড়া ঢাকা সহ দেশের বড় শহর গুলোতে তারা ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বই পরতে আগ্রহী এবং বই বিতরণ করে চলেছে।

“তথ্যসূত্র”

চ্যাটজিপিটি: ওপেন এআই এর নতুন দ্বার উম্মোচনের গল্প

Previous article

ভাষাগত দক্ষতা বাড়াতে আপনি যে ৬টি মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *