মানি ম্যানেজমেন্ট এন্ড পার্সোনাল ফিনান্স

দম্পতি হিসেবে যেভাবে অর্থ ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করবেন।

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়েশা আক্তার

শৈশব থেকে আমাদের অর্থ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো কিছু শেখানো হয় না। বরং, শৈশবকাল থেকেই আমাদেরকে বলা হয় – “অর্থই সকল অনর্থের মূল”। আর তাই আমাদের দেশে মানুষ টাকাপয়সা নিয়ে কিংবা অর্থ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরাসরি কথা বলতে ইতস্ততাবোধ করে থাকে। অথচ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে অর্থ ব্যবস্থাপনাকে দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হিসেবে দেখা হয়, জীবনের সাধারণ দক্ষতা হিসেবে দেখা হয়। আজকে আমরা কিভাবে আপনি দম্পতি হিসেবে অর্থ ব্যবস্থাপনায় অংশ নিবেন এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

অর্থ ব্যবস্থাপনা কি?

মানি ম্যানেজমেন্ট বা অর্থ ব্যবস্থাপনা বলতে বোঝায় আপনি কীভাবে আপনার সমস্ত অর্থ পরিচালনা করেন, বাজেট থেকে বিনিয়োগ, সঞ্চয় এবং লক্ষ্য নির্ধারণ পর্যন্ত।অর্থাৎ, আপনি কিভাবে আপনার সীমিত আয় থেকে নিজের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করবেন তাকে অর্থ ব্যবস্থাপনা বলে। 

অর্থ ব্যবস্থাপনা আমাদের সকলের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। হাভার্ড বিজনেস রিভিউ-এর একটি গবেষণায় (২০২০) বলা হয়েছে, “যাদের একটি সুনির্দিষ্ট আর্থিক পরিকল্পনা থাকে, তারা প্রায় ৩০% বেশি সফল হয় তাদের আর্থিক লক্ষ্য অর্জনে।” অন্যদিকে ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো-এর একটি গবেষণায় (২০১৯) বলা হয়েছে, “ইম্পালসিভ কেনাকাটা এবং বিলাসিতার পেছনে অতিরিক্ত খরচ করা ব্যক্তিদের মধ্যে আর্থিক হতাশা বেশি দেখা যায়।” এ থেকেই বোঝা যায় যে, অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য কতবেশি গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থ ব্যবস্থাপনার ধারণা এবং এর গুরুত্বপূর্ণ দিক।

অর্থ ব্যবস্থাপনা পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো এবং কেন এটি আমাদের জীবনে প্রাসঙ্গিক। | ছবি সংগৃহীত।

দাম্পত্য জীবনে অর্থ ব্যবস্থাপনা

আমাদের দেশে অর্থ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সাধারণত কেউ আলোচনা করতে চায় না। তবে অর্থ আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে দম্পতিদের জন্য অর্থ নিয়ে আলোচনা করা আরো বেশি জরুরি। দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতির বাজারে পরিকল্পনা ব্যতীত চলা সম্ভব নয়। আর তাই নিজের জীবনসঙ্গীর সাথে অর্থ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরাসরি কথা বলতে হবে। এতে সহজেই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। আমরা এখন তিনটি  অ্যাকাউন্ট সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করবো যা দাম্পত্য জীবনে অর্থ ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করবে।  

জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট

দম্পতি হিসেবে আপনারা জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে আপনারা উভয়েই টাকা জমা রাখতে পারবেন এবং উত্তোলন করতে পারবেন। দুইজনের কাছেই অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস থাকবে। অনেকেই জয়েন্ট অ্যাকাউন্টকে দম্পতি হিসাবে অর্থ পরিচালনা করার সবচেয়ে সহজ উপায় বলে মনে করে। কারণ, জরুরি সময়ে কারো কাছে টাকা ধার চাইতে হয় না।  বরং উভয়েই একটি দল হিসেবে সমস্ত খরচ মোকাবেলা করে।

কিন্তু যদি একটি বিশাল আয়ের অসঙ্গতি থাকে, তাহলে এই পদ্ধতিটি দ্বন্দ্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে। দুজনের মধ্যে কেউ যদি বেশিরভাগ অর্থ উপার্জন করে তবে উভয় পক্ষেই অস্বস্তি এবং বিরক্তি হতে পারে। জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট মানে  হলো যৌথ সিদ্ধান্ত। অনেক সময় যৌথভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হতে পারে।

জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দম্পতিরা অর্থ ব্যবস্থাপনা পরিচালনার সুবিধা।

জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ ব্যবস্থাপনা পরিচালনা সহজতর করার উপায়। | ছবি সংগৃহীত।

আলাদা অ্যাকাউন্ট 

আপনি আপনার অর্থব্যবস্থা পরিচালনা করতে আলাদা অ্যাকাউন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। বেশিরভাগ দম্পতিরা এভাবেই শুরু করে থাকে। তবে আলাদা অ্যাকাউন্ট থাকলে প্রথমেই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কীভাবে দায়িত্ব ভাগ করে নিবেন। আপনি চাইলে বিলগুলোকে ৫০-৫০ ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু আপনি চাইলে এর পরিবর্তে আয় অনুযায়ী দায়িত্ব ভাগ করে নিতে পারেন। 

আলাদা অ্যাকাউন্টে ব্যক্তিস্বাধীনতা বজায় থাকে এবং কোনো জবাবদিহিতা থাকে না। যেহেতু দায়িত্ব ভাগ করা থাকে, তাই একসাথে কাজ করতেও সমস্যা হয় না। তবে এই পদ্ধতিটি আপনাকে পুরোপুরি আর্থিক দলের মতো অনুভব করা থেকে বিরত রাখতে পারে। যখন যৌথ অ্যাকাউন্ট থেকে বিল পরিশোধ করা হয় না, তখন আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোন খাতকে বেশি গুরুত্ব দিবেন। এই পদ্ধতিটি দ্বন্দ্বের কারণ হতে পারে যদি আপনার মধ্যে একজন উল্লেখযোগ্যভাবে অন্যকে ছাড়িয়ে যায় বা কেউ বাচ্চাদের যত্ন নেওয়ার জন্য বাড়িতে থাকে। দেখা যায় একজন ব্যক্তিগত কাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে যখন তাঁর সঙ্গী সংসারের প্রয়োজন মেটাতে সংগ্রাম করছে।

জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দম্পতিরা অর্থ ব্যবস্থাপনা পরিচালনার সুবিধা।

জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ ব্যবস্থাপনা পরিচালনা সহজতর করার উপায়। | ছবি সংগৃহীত।

হাইব্রিড পদ্ধতি

হাইব্রিড পদ্ধতি বলতে সাধারণত জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট এবং আলাদা অ্যাকাউন্ট উভয় পদ্ধতি অবলম্বন করাকে বোঝানো হয়। দম্পতি হিসাবে আপনারা একটি শেয়ার্ড অ্যাকাউন্ট বা ক্রেডিট কার্ড বজায় রাখতে পারেন যা পরিবারের খরচ মেটাতে ব্যবহার করবেন। একই সময়ে ব্যক্তিগত খরচ বা অন্যান্য নির্দিষ্ট খরচের উদ্দেশ্যে নিজস্ব পৃথক অ্যাকাউন্ট রাখতে পারেন।

হাইব্রিড পদ্ধতিতে সাধারণত দ্বন্দের সুযোগ থাকে না। এই পদ্ধতিতে নিজের স্বাধীনতার পাশাপাশি দল হিসেবে কাজ করার সুযোগও থাকে। যদি আয়ের বৈষম্য থাকে, তাহলে আপনাকে দম্পতি হিসাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কে যৌথ অ্যাকাউন্টে কতটা অর্থ প্রদান করবে সংসারের প্রয়োজন মেটানোর জন্য। 

কারো সাথে আপনার জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি বড় সিদ্ধান্ত। আর দাম্পত্য জীবনে আমি-তুমি থেকে সবকিছু আমরা হয়ে যায়। আর অর্থ ব্যবস্থাপনাও এর ব্যতিক্রম নয়। অনেক সময় দম্পতিদের মধ্যে অর্থ নিয়ে মনোমালিন্য দেখা যায়। এই সমস্যা এড়াতে সম্পর্কের শুরুতেই ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করা উচিত। দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিলে সম্পর্কে সমঝোতার সৃষ্টি হবে। যখন আপনারা এক দল হয়ে কাজ করবেন, তখন দম্পতি হিসেবে অর্থ ব্যবস্থাপনা করা বেশ সহজ হয়ে যায়।

“তথ্যসূত্র”

নতুন যুগের প্রতিরক্ষা “জিরো ট্রাস্ট সিকিউরিটি”

Previous article

ব্যবসার সাফল্যে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উপাদান।

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *