Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়েশা আক্তার |
আচ্ছা, আমরা সকলেই কি ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং সম্পর্কে জানি? নাম শুনে নিশ্চয়ই ভাবছেন- ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং! এ আবার কি! ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং আসলে নতুন কিছু না। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই বাজারে শুধু ভালো পণ্য বা পরিষেবা থাকলেই সফল হওয়া যায় না। সফল হতে চাইলে আপনাকে গ্রাহকের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে হবে। আর ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং ঠিক এই কাজটিই করে। এটি মূলত ব্র্যান্ডকে গ্রাহকের আবেগের সাথে গভীরভাবে যুক্ত করে। চলুন আজকের প্রতিবেদনে আমরা ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং কি, কিভাবে কাজ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই।
ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং কি?
ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং বলতে এমন বিপণন কৌশলকে বোঝানো হয় যা ব্র্যান্ড এবং ভোক্তাদের মধ্যে মানসিক বন্ধন তৈরি করতে সাহায্য করে। এটি মূলত পণ্য বা পরিষেবার কার্যকরী সুবিধার বাইরে একজন ভোক্তার আবেগের কাছাকাছি পৌঁছাতে চেষ্টা করে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং হলো একটি ব্র্যান্ড এবং এর গ্রাহকদের মধ্যে মানসিক সংযোগ তৈরির অনুশীলন। এই ধরনের ব্র্যান্ডিং গ্রাহকের সাথে কোম্পানির একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে যার ফলে গ্রাহক ব্র্যান্ডের প্রতি নিজের আনুগত্য প্রদর্শন করে।
কেনো ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ?
বর্তমানে ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্য প্রতিযোগীদের থেকে নিজেদের আলাদা করতে এবং গ্রাহকদের উপর একটি স্থায়ী প্রভাব ফেলতে সাহায্য করে। অনলাইন- অফলাইনের এই বিশৃঙ্খল মার্কেটপ্লেসে, ভোক্তারা প্রতিটি মোড়ে বিজ্ঞাপন এবং বিপণন বার্তা দেখতে দেখতে একঘেয়েমি হয়ে গিয়েছে। ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং ব্যবসাগুলোকে এই বিশৃঙ্খল মার্কেটপ্লেসে হৃদয়ের এক গভীর স্তরে গ্রাহকদের সাথে সংযোগ করতে সহায়তা করে ৷
শুধু তাই নয়, ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং গ্রাহকের আনুগত্য এবং সমর্থন বাড়াতে সাহায্য করে। যখন গ্রাহকরা একটি ব্র্যান্ডের সাথে একটি শক্তিশালী মানসিক সংযোগ অনুভব করেন, তখন তারা সেই ব্র্যান্ডের প্রতি অনুগত থাকেন এবং অন্যদের কাছে সুপারিশ করেন। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে ব্র্যান্ড জনপ্রিয়তা লাভ করে।
সংবেদনশীল ব্র্যান্ডিংয়ের মূল উপাদানগুলোর মধ্যে একটি হল গল্প বলা। গ্রাহকদের মূল্যবোধ এবং আবেগের সাথে অনুরণিত আকর্ষণীয় গল্প বলার মাধ্যমে, ব্র্যান্ডগুলি তাদের লক্ষ্য দর্শকদের সাথে অর্থপূর্ণ সংযোগ তৈরি করতে পারে। গল্প বলার মাধ্যমে, ব্র্যান্ডগুলো তাদের ব্র্যান্ডের বার্তাটি এমনভাবে উপস্থাপন করতে পারে যা খাঁটি, আকর্ষক এবং স্মরণীয়।
যেকোনো ব্র্যান্ডের মূল লক্ষ্য থাকে নিজেকে অন্যদের চেয়ে বেশ আলাদা হিসেবে গড়ে তোলার, ভোক্তা-কেন্দ্রিক ব্র্যান্ডে নিজেদের রুপান্তর করার। আর এই লক্ষ্য পূরণে ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উদাহরণস্বরূপ আমরা অ্যাপল কোম্পানির কথা বলতে পারি। ব্র্যান্ডটি এখন আর ডিভাইসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং এটি জীবনের একটি অংশে পরিণত হয়েছে। ভোক্তারা শুধু অ্যাপলের কোনো একটি পণ্য কিনছেন না; তারা অনুভূতি কিনছেন।
কোম্পানির মার্কেটিংয়ে ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং প্রয়োগের কৌশল
আপনি যদি কোম্পানির বিপণন কৌশলে ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং প্রয়োগ করতে চান, তবে আপনাকে গ্রাহকদের জন্য কোন আবেগগুলো আসলে সবচেয়ে কার্যকর তা নিয়ে বাজার গবেষণা করতে হবে। চলুন আমরা সংক্ষেপে ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং প্রয়োগের কিছু কৌশল সম্পর্কে জেনে নেই-
- ব্র্যান্ডের গল্প বলা: আপনি আপনার ব্র্যান্ডের আকর্ষণীয় গল্প বলার মাধ্যমে ভোক্তাদের সাথে সহজেই মানবিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারবেন। সাধারণত সফল ব্র্যান্ডগুলো তাদের মিশন, মূল্যবোধ এবং গ্রাহকদের জীবনে প্রভাব সৃষ্টি করতে গল্প ব্যবহার করে। আপনার ব্র্যান্ডের জার্নির গল্প দর্শকদের সাথে আপনাকে মানবিক স্তরে সংযুক্ত করবে। এই গল্পটি দর্শকদের আবেগকে জাগিয়ে তুলবে, তা হোক অনুপ্রেরণা, নস্টালজিয়া কিংবা সুখ। একটা খাঁটি গল্প বিশ্বাস তৈরি করে। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, ব্র্যান্ডের আখ্যানটি আসল এবং ব্র্যান্ডের মান ও লক্ষ্যের সাথে সংযুক্ত।
- ব্র্যান্ড ব্যক্তিগতকরণ: ব্র্যান্ডকে গ্রাহকের জন্য ব্যক্তিগত পছন্দ অনুসারে সাজাতে পারলে তা গ্রাহকের কাছে ব্র্যান্ডের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি বাড়ায়। যে সমস্ত ব্র্যান্ড দর্শকদের আবেগ-অনুভূতি, মানসিক চাহিদা বুঝতে পারে, তারা সহজেই দর্শকদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। যেমন- নেটফ্লিক্স এবং স্পটিফাইয়ের মতো ব্র্যান্ডগুলো ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত পছন্দ অনুসারে সেবা প্রদান করে।
- সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্র্যান্ড মেসেজিং: প্রকৃতপক্ষে, আবেগ ব্র্যান্ডের সামঞ্জস্যের কেন্দ্রবিন্দু। একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ভয়েস, টোন এবং ভিজ্যুয়াল পরিচয় ব্র্যান্ড স্বীকৃতি এবং মানসিক আবেদনকে শক্তিশালী করে। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, আপনার ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট যাতে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সুর বজায় রাখে। এজন্য কোম্পানির লোগো নির্ধারণের সময় রং, নকশার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
- কমিউনিটি বিল্ডিং: গ্রাহকেরা তাদের সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সারিবদ্ধ এবং সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখে এমন ব্র্যান্ডগুলির সাথে একটি শক্তিশালী সংযোগ অনুভব করে। সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ, ইভেন্ট বা নানা ধরনের প্রোগ্রামের মাধ্যমে কমিউনিটি বিল্ডিং তৈরি করা যায়। এটি দর্শকদের মাঝে আত্মীয়তা এবং আনুগত্যের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।
ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং এর প্রভাব
ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং গ্রাহকদের সাথে একটি গভীর, মানসিক বন্ধন তৈরি করে, যা দীর্ঘমেয়াদী আনুগত্যকে উৎসাহিত করে। এই আনুগত্য স্থিতিস্থাপক, বাজার বা প্রতিযোগিতামূলক ল্যান্ডস্কেপের পরিবর্তনের মাধ্যমে স্থায়ী হয়। ব্র্যান্ড অ্যাডভোকেসি অনুগত গ্রাহকরা ব্র্যান্ড অ্যাডভোকেট হয়ে ওঠে, ব্র্যান্ডটিকে তাদের নেটওয়ার্কে এবং তার বাইরেও প্রচার করে। ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং সাধারণত ব্র্যান্ডের সাথে গ্রাহকদের সংবেদনশীল সংযোগ দ্বারা চালিত হয়। এটি মূলত এমন একটি কৌশল যার ফলে গ্রাহকেরা বারবার ওই ব্র্যান্ড থেকে কেনাকাটা করে এবং ব্র্যান্ডের সাথে দীর্ঘ সময়ের জন্য জড়িত থাকে।
বর্তমান বিশ্বে ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং- এর চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোম্পানিগুলো নিজেদের ব্যবসাকে অপরিহার্য করে তুলতে এবং তাদের ভোক্তাদের সাথে আজীবন সম্পর্ক স্থাপন করতে ইমোশনাল ব্র্যান্ডিংকে ব্যবহার করছে। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই বাজারে টিকে থাকার জন্য যথাযথভাবে ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং -এর কোনো বিকল্প নেই।
Comments