কোম্পানি ফরেনসিকস

ম্যাকডোনাল্ডস: বর্তমান বিশ্বের সফলতম ফাস্টফুড চেইন

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির

ম্যাকডোনাল্ডস এক সাফল্যের গল্প

একটি ছোট রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ফাস্ট ফুড চেইনে পরিণত হওয়া—ম্যাকডোনাল্ডসের গল্প এক অনুপ্রেরণার নাম। সহজলভ্য, সুস্বাদু খাবার আর উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক কৌশল দিয়ে ম্যাকডোনাল্ডস শুধু মানুষের ক্ষুধাই মেটায়নি, বরং আধুনিক রেস্তোরাঁ সংস্কৃতির রূপকার হয়ে উঠেছে। আজ ম্যাকডোনাল্ডসের ১০০টিরও বেশি দেশে তাদের ৩৮,০০০-এর বেশি শাখা চালু আছে। তাই জনমানুষের মনে প্রশ্ন জাগে: কীভাবে ম্যাকডোনাল্ডস এত বড় হতে পেরেছে? কেন মানুষ তাদের খাবার এত ভালোবাসে? এই সফলতার পিছনে লুকিয়ে থাকা গল্প জানবো আজকের আর্টিকেলে।

ম্যাকডোনাল্ডসের উত্থান

ম্যাকডোনাল্ডসের ইতিহাসের শুরু ১৯৪০ সালে, যখন ডিক এবং ম্যাক ম্যাকডোনাল্ড ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্ডিনোতে একটি বারবিকিউ রেস্তোরাঁ চালু করেছিলেন। তবে, ম্যাকডোনাল্ডস তার আসল রুপ পেতে শুরু করে ১৯৫৫ সালে, যখন রে ক্রোক এই ছোট রেস্তোরাঁটি নিয়ে আন্তর্জাতিক এক রেস্তোরাঁ চেইন তৈরির স্বপ্ন দেখেন। তিনি একটি নতুন মডেল তৈরিতে মনোযোগ দেন, যেখানে “গুণমান, সেবা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং মান” ছিল মূল স্তম্ভ। ক্রকের ভিশন ও ব্যবসায়িক কৌশলের কারণে ম্যাকডোনাল্ডস আজ একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে, যা প্রতিদিন প্রায় ৬৩ মিলিয়ন গ্রাহককে সেবা প্রদান করে।

ম্যাকডোনাল্ডসের যাত্রা: শুরু থেকে একটি বৈশ্বিক ফাস্ট ফুড জায়ান্ট হয়ে ওঠার গল্প।

ম্যাকডোনাল্ডসের অসাধারণ বিকাশের গল্প। | ছবি সংগৃহীত।

ক্রক মূলত ম্যাকডোনাল্ডসের লোগো দেখে এটিকে পুরো আমেরিকায় ছড়িয়ে দেবার চিন্তা করেন। কারণ ম্যাকডোনাল্ডসের লোগোটি এতটাই আইকনিক যে অনেক দূর থেকেও যে কেউ এই লোগো দেখে বুঝতে পারবে এটা ম্যাকডোনাল্ডসের লোগো। এবং তিনি প্রথমেই দায়িত্ব নিয়ে ম্যাকডোনাল্ডসের অন্য সব খাবারগুলো বাদ দিয়ে মাত্র দুইটি খাবার রাখেন হ্যামবার্গার এবং জুস।

কীভাবে ম্যাকডোনাল্ডস সাফল্য অর্জন করল?

১. ফ্র্যাঞ্চাইজ মডেল: ম্যাকডোনাল্ডসের দ্রুত প্রসারের মূল কারণ ছিল এর ফ্র্যাঞ্চাইজ সিস্টেম। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তারা দ্রুত নতুন শাখা খোলার সুযোগ পায়। আর মানুষ তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজ কিনতেও আগ্রহ প্রকাশ করছিল কারণ ছিল ম্যাকডোনাল্ডসের আইকনিক লোগো এবং তাদের দোকানের মডেল দেখে।
২. উদ্ভাবনী মেনু ও স্টাইল: তাদের মেনুতে বার্গার, ফ্রাই, মিল্কশেক ইত্যাদি জনপ্রিয় আইটেমগুলো সহজলভ্য দামে সরবরাহ করা হয়। তবে ম্যাকডোনাল্ডস তাদের মেনুতে এর বেশি কিছু যোগ করে না এটাও তাদের একটা বৈশিষ্ট্য যা তাদের অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছে। 
৩. স্মার্ট ব্র্যান্ডিং: গোল্ডেন আর্চেসের লোগো এবং “আমি ভালোবাসি” স্লোগানটি ম্যাকডোনাল্ডসকে একটি সাংস্কৃতিক আইকনে পরিণত করেছে। তাই ম্যাকডোনাল্ডসকেও আমেরিকার মানুষ ভালোবাসা দিতে শুরু করে এবং পরবর্তীতে এটা বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে যায়। 

মানুষ কেন ভালোবাসে ম্যাকডোনাল্ডস?

ম্যাকডোনাল্ডসের জনপ্রিয় খাবারের আইটেম, যেখানে তাদের আইকনিক বার্গার, ফ্রাই ও পানীয় প্রদর্শিত হয়েছে।

ম্যাকডোনাল্ডসের জনপ্রিয় খাবারের ঝলক। | ছবি সংগৃহীত।

সাশ্রয়ী ও মানসম্মত খাবার: প্রতিযোগিতামূলক দামে মানসম্মত খাবার সরবরাহ করার জন্য এটি জনপ্রিয়।
উপলভ্যতা: বিশ্বের ১০০ টিরও বেশি দেশে ৩৮,০০০ এর বেশি রেস্তোরাঁ আছে, যা যেকোনো স্থানে সহজলভ্য।
পরিবার-বান্ধব পরিবেশ: ম্যাকডোনাল্ডস কিডস মেনু, হ্যাপি মিলে টয় এবং রেস্তোরাঁয় পরিবারবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে।

ম্যাকডোনাল্ডস এখন কোথায়?

ম্যাকডোনাল্ডসের আজ ৩৮,০০০ এর বেশি আউটলেট রয়েছে এবং এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ফাস্ট ফুড চেইন। তাদের কার্যক্রমে পরিবেশ সচেতনতা এবং টেকসই প্যাকেজিংয়ের মতো পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক প্রভাব রাখছে। এই সফলতার গল্প শুধু খাবারের নয়, এটি উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা, গুণমানের প্রতি প্রতিশ্রুতি, এবং মানুষের জীবনে আনন্দ নিয়ে আসার কৌশলের উদাহরণ।

“তথ্যসূত্র”

বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট চেইনের সাফল্যের নতুন নাম খানা’স

Previous article

যেভাবে আপনি ব্যবসায় বিনিয়োগকারির দ্বারস্থ হবেন

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *