কোম্পানি ফরেনসিকস

কীভাবে তৈরি হলো আজকের রকমারি?

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির

বই পড়তে কে না ভালোবাসে? বই প্রেমীদের কাছে বই হচ্ছে তাদের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস গুলোর একটি। কিন্তু কাঙ্খিত বইটি চাওয়া মাত্রই হাতের নাগালে পাওয়া কিছুকাল আগেই ব্যাপারটি ছিল প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এই অসম্ভব কেই সম্ভব করেছে রকমারি ডট কম। মাত্র ১০০ বই দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল রকমারি। এখন তাদের ১৪ হাজারের বেশি দেশি ও বিদেশি প্রকাশক, ৮০ হাজারের বেশি লেখকের এবং ২ লক্ষের বেশি বই  রয়েছে। রকমারিই প্রথম দেশে ক্যাশ অন ডেলিভারি প্রক্রিয়াটি গ্রাহকদের জন্য চালু করে। চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক  কীভাবে তৈরি হলো আজকের রকমারি।

গল্পটা শুরু হয় আজ থেকে ১২ বছর আগে ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি কিছু স্বপ্নবাজ তরুণের হাত ধরে। রকমারির ৫ জন প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মাহমুদুল হাসান সোহাগ ও আবুল হাসান। রকমারি ডট কম মূলত অন্যরকম গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।

রকমারি ডট কম-এর চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগের ছবি, যিনি বাংলাদেশে বই প্রেমীদের জন্য অনলাইন বই কেনাকাটার পথপ্রদর্শক।

রকমারি ডট কম-এর চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগ: বাংলাদেশের অনলাইন বই বিপ্লবের পথিকৃৎ। | ছবি: সংগৃহীত।

প্রতিষ্ঠানটির শুরুর দিকে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি ছিল বিভিন্ন পাবলিকেশনের সাথে সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা। কারণ বেশির ভাগ প্রকাশকই ধারণা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি মূলত পরের মাসের একুশে বই মেলাকে টার্গেট করে ব্যবসা করতে চাচ্ছে। তবে বেশ কিছু প্রকাশনী রকমারির কার্যক্রম না বুঝলেও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে কয়েকটি প্রকাশনী তাদের সাথে হাত মিলায়। এরই মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে রকমারি।

রকমারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রথম বইটি ছিল “সুশাসনের সন্ধানে” এবং প্রথম অর্ডার করা বইটি ছিল উনিশ একাত্তর। কার্যক্রম শুরু করার পরে প্রথম আলো রকমারিকে নিয়ে নিউজ প্রকাশিত করলে রকমারির বই বিক্রি বেড়ে যায়। পাশাপাশি জনসাধারণের কাছে পরিচিতি পায়। শুরুরতে রকমারির অফিস কাওরান বাজারে থাকলেও পরবর্তীতে তা মতিঝিলে সরিয়ে নেওয়া হয়।

প্রতিষ্ঠানটির শুরু থেকেই তারা তাদের প্রচার প্রচারণা নিয়ে ছিল বেশ সচেতন। লেখক প্রকাশক এবং বই পাঠকদের রকমারি সম্পর্কে জানাতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বিভিন্ন প্রকাশনীর সামনে তাদের ব্যানার পোস্টার রাখতো। এছাড়া বই মেলা চলাকালে পাঠকদের মধ্যে রকমারির নামটি পৌঁছে দিতে কর্মীরা রকমারির টি-শার্ট পরে ঘুরে বেড়াতো। মাঝে মাঝে রকমারি তাদের প্রচারের জন্য বিভিন্ন বিলবোর্ডও  ব্যবহার করেছে।

রকমারির প্রতিষ্ঠাতা সকলেই ছিলেন তথ্য প্রযুক্তিতে বেশ অভিজ্ঞ। তাই এক মাসের মধ্যেই একটি সঠিক কাঠামো পায় রকমারির ওয়েবসাইট। প্রচার প্রচারণা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রথম বছর শেষেই রকমারি ৫০০-র বেশি প্রকাশনী ২৫০০-র বেশি লেখকের বই যুক্ত করতে সক্ষম হয়।

২০১২ সালের দিকে তখনও অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা ততটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি আর পেমেন্ট সিস্টেম নিয়ে সমস্যাত আছেই। সে সময় রকমারির দৈনিক অর্ডার ছিল ৩০-৫০ টি এবং মাস শেষে তা দাঁড়াত ১ থেকে ২ হাজারে। নতুন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে রকমারির জন্য গ্রাহকদের আস্থা অর্জন ছিল অনেক কষ্টসাধ্য। তাই এই সমস্যার সমাধান করতে দেশের সর্ববৃহৎ কুরিয়ার সার্ভিস

সুন্দরবনের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে প্রথমবারের মত দেশে ক্যাশ অন ডেলিভারি চালু করে। যা গ্রহকদের বিশ্বাস অর্জন করতে রকমারিকে বেশ সাহায্য করে। এই ব্যপারে রকমারির প্রতিষ্ঠাতা সোহাগ বলেন, ” বাংলাদেশ পোস্ট অফিস যত জায়গায় পৌছায় আমাদের (রকমারির) পণ্যও ততো জায়গায় পৌঁছায়।”

একজন ডেলিভারি ম্যান বইগুলো গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন, অনলাইনে অর্ডার করা বই সরবরাহের দৃশ্য।

অনলাইনে অর্ডার করা বই গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন একজন ডেলিভারি ম্যান। | ছবি: সংগৃহীত।

২০১৪ সাল থেকে রকমারি তাদের ডাটা এনালাইসিস নিয়ে কাজ শুরু করে। কোম্পানিটির চেয়ারমেন সোহাগ বলেন এটি ছিল তাদের ব্যবসার মূল টার্নিং পয়েন্ট। যেহেতু রকমারি একটি অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান তাই যেটাকে সঠিক ভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে রকমারির উন্নতি হয় চোখে পরার মত। কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে রকমারি সকল প্রকার বিনিয়োগকে তাদের মাদার কোম্পানি অন্যরকম গ্রুপই করে থাকে। রকমারির ব্যবসায় উন্নতি পুরোটাই প্রোডাক্ট বিক্রির মাধ্যমেই হয়ে থাকে। এই ব্যপারে সোহাগ বলেন, ” আমরা কিন্তু অনেকটা গতানুগতিক ধারায় এগিয়ে যাচ্ছি, লভ্যাংশের উপর লক্ষ্য রেখেই আমরা আগাচ্ছি। রকমারি কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ৮-৯ বছরের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের কাছে যায়নি। পুরোটায় আমাদের পকেটের টাকা দিয়ে।”

যদিও রকমারি তাদের যাত্রা শুরু করেছিল শুধু মাত্র বই দিয়ে। বর্তমানে তাদের ওয়েবসাইটে ক্যালকুলেট করে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ ফুড এর পাশাপাশি হ্যান্ডস স্যানিটাইজার , মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ এবং হ্যান্ড জেল এর মত হাইজিন পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।

রকমারির সকল অপারেশন পরিচালনা করা হয় তাদের মতিঝিলের অফিস থেকেই। এছাড়া কাঁটাবন এবং বাংলা বাজারে তাদের একটি করে হাব রয়েছে। যেখান থেকে তাদের পন্য বাছাই করে রাখা হয় । এরপর বইগুলো পাঠানো হয় মতিঝিলে এবং সেখান থেকে বইয়ে কিউয়ার কোড বসানো হয়। বই এর অর্ডার আসলেই রকমারির সফটওয়ারের মাধ্যমে অপারেটরকে জানিয়ে দেওয়া হয় বইটি কোন সেলে রাখা আছে। পরবর্তীতে বইটি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দয়া হয়।

ঢাকর ভেতর ২-৩ দিনে এবং ঢাকার  বাইরে ৩-৫ দিনের মধ্যে বই পৌঁছে দেয় রকমারি। এখন পর্যন্ত রকমারি দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের ৩০ টি দেশে বই ডেলিভারি করেছে। অনলাইন অর্ডারের ক্ষেত্রে রকমারি নিয়ে থাকে ৫০ টাকা এবং ফোন অর্ডারের ক্ষেত্রে নিয়ে থাকে ৭০ টাকা।

তবে রকমারি শুধু কাগজের বই বিক্রিই করেনা। ২০২০ সালে তারা দেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের জন্য ই-বই অ্যাপ চালু করে যার নাম মুঠোবই। রকমারির প্রতি বছর বই মেলায় সেরা বই, সেরা লেখক, সেরা ক্রেতাকে পুরষ্কার দিয়ে থেকে রকমারি। রকমারি প্রতি মাসে প্রায় ৯০ হাজার বই বই প্রেমিকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। আমরা আসা করছি মানুষ আরো বই পরার ক্ষত্রে আগ্রহী হয়ে উঠবে এবং সুন্দর দেশ গড়তে সাহায্য করবে।

“তথ্যসূত্র”

বাংলাদেশ সরকার কেন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে অনিচ্ছুক?

Previous article

চায়নাপণ্য আমদানি ও ব্যাবসা: শুরু থেকে শেষ

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *