ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন

কীভাবে এক অনন্য ব্যবসার মডেল দাঁড় করালো টেসলা

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তায়্যিবা

বৈদ্যুতিক গাড়ির কোম্পানি হিসেবে টেসলা বেশ সুপরিচিত। ২০০৩ সালে বিশ্বখ্যাত ধনকুবের ইলন মাস্ক, জেবি স্ট্রাউবেল, মার্টিন এভারহার্ড এবং মার্ক তার্পেনিং প্রতিষ্ঠিত করেন এই বিখ্যাত অটোমোবাইল কোম্পানি । যদি বলি  বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরিতে টেসলা বিশ্বব্যাপী বিপ্লব ঘটিয়েছে, খুব একটা ভুল হবে না। 

তবে এত অল্প সময়েই অটোমোবাইল কোম্পানি হিসেবে শীর্ষস্থান দখলের পেছনে মূল কারণ কী? কেবলই ইলন মাস্কের পরিচিতি ও সাফল্য? না! বরং অনন্য এক ব্যবসায়িক মডেল দাঁড় করিয়ে টেসলা আজ বিশ্বের সর্ববৃহৎ বৈদ্যুতিক গাড়ির কোম্পানি হিসেবে মাথা তুলেছে। 

টেসলার এই অন্যতম ব্যবসায়িক মডেলটি হলো ভার্টিক্যাল ইন্ট্রিগ্যাশন স্ট্রাটেজি যা মূলত উন্নত প্রযুক্তি এবং টেকসই ভবিষ্যতের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। 

এই পদ্ধতিই অন্যান্য প্রচলিত গাড়ি নির্মাতাদের থেকে আলাদা করেছে টেসলাকে। অন্যান্য কোম্পানিগুলো যেখানে গাড়ি তৈরির মূল পার্টস বা উপাদান আলাদা আলাদাভাবে বহিরাগত সরবরাহকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে, টেসলা অধিকাংশ পার্টস নিজেই উৎপাদন করে। ব্যাটারি প্যাক থেকে শুরু করে সফটওয়্যার, সবেতেই টেসলার নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এই কৌশল টেসলাকে  এর যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে, খরচ কমাতে এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে।

টেসলার ভার্টিক্যাল ইন্ট্রিগ্যাশন স্ট্রাটেজি চিত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে কোম্পানিটি তাদের উৎপাদন ও বিতরণ প্রক্রিয়াকে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে রাখে।

টেসলার গিগাফ্যাক্টরি 

বিশ্বব্যাপী স্থাপিত টেসলার গিগাফ্যাক্টরি এর মূল উৎপাদনস্থল। এসব বিশাল কারখানাগুলোতে তৈরি হয় ব্যাটারি, শক্তি সংরক্ষণ পণ্য এবং যানবাহনের ছোট-বড় বিভিন্ন পার্টস। উদাহরণস্বরূপ, টেসলার অন্যতম একটি গিগাফ্যাক্টরি হলো নেভাদা গিগাফ্যাক্টরি যা বিশ্বের বৃহত্তম পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর মধ্যে একটি। টেসলার ব্যাটারি উৎপাদন ও এর ব্যয় কমানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে এই নেভাদা গিগাফ্যাক্টরি ।

টেসলার গিগাফ্যাক্টরির একটি চিত্র, যেখানে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্যাটারি ও অন্যান্য অংশ তৈরির জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।

সরাসরি বিক্রয় পদ্ধতি 

এছাড়াও টেসলার বিক্রয় কৌশল প্রচলিত ডিলারশিপ মডেলের থেকে ভিন্ন। এটি নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং শোরুমের মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকদের কাছে যানবাহন বিক্রি করে। যাকে বলা হয় সরাসরি বিক্রয় পদ্ধতি।  ফলে টেসলা গ্রাহক অভিজ্ঞতার উপর আরও নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে, মূল্য স্থিতিশীল রাখতে পারে এবং গ্রাহকদের পছন্দ ও প্রতিক্রিয়ার উপর সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।

উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি

 নতুন কিছু উদ্ভাবন টেসলার ব্যবসায়িক মডেলের মূল ভিত্তি। কোম্পানিটি গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করে, যা প্রতিযোগীদের থেকে নিজেকে আলাদা করতে সহায়তা করে।

গাড়িতে অটোপাইলট এবং স্বয়ংক্রিয় চালনার সংযোগ টেসলার অন্যতম প্রধান উদ্ভাবন। ক্যামেরা, সেন্সর এবং মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে এই প্রযুক্তি আধা-স্বয়ংক্রিয় এবং সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় গাড়ি চালনার সুবিধা প্রদান করে।

টেসলার উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে স্বয়ংচালিত গাড়ি, অটোনোমাস সফটওয়্যার ও টেকসই শক্তি ব্যবহারের দিকগুলো দেখানো হয়েছে।

ব্যাটারি প্রযুক্তি 

উন্নত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি টেসলার ব্যাটারি এর যানবাহনের পরিসর ও কার্যকারিতা বাড়িয়েছে। কোম্পানিটি পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাটারি প্রযুক্তি, যেমন সলিড স্টেট ব্যাটারি- এর উন্নয়নে গবেষণা করছে, যা শক্তির ঘনত্ব বৃদ্ধি, ব্যয় হ্রাস এবং ব্যাটারির স্থায়িত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে ভবিষ্যতে কাজ করবে বলে আশা রাখে।

এছাড়া টেসলা শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক গাড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; এটি শক্তি পণ্য ও অন্যান্য পরিষেবাও প্রদান করে। টেসলা এনার্জি সৌরশক্তির প্যানেল, সৌর ছাদ এবং শক্তি সংরক্ষণের জন্য পাওয়ারওয়াল, পাওয়ারপ্যাক এবং মেগাপ্যাকও  সরবরাহ করে থাকে। এসব পণ্য ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক গ্রাহকদের জন্য পুনর্নবায়ণযোগ্য শক্তি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার সুযোগ করেদেয়।

টেসলার ব্যাটারি প্রযুক্তি প্রদর্শন করছে কিভাবে তারা দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্যাটারি তৈরি করে।

পরিবেশ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রেও টেসলা

টেসলা শুধুমাত্র কোম্পানির অধিক মুনাফার দিকেই নজর দেয় না বরং এটি টেকসই শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর প্রতিও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কার্বন নির্গমন হ্রাস করা, পরিবেশবান্ধব কারখানা পরিচালনা করা এবং পুনর্নবায়ণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে টেসলা বিশ্বকে আরও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে চায়, যা ইলন মাস্কের ভবিষ্যত পরিকল্পনা।

মূলত এতসব কারণেই প্রচলিত অটোমোবাইল শিল্পের রীতিনীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে টেসলা বৈদ্যুতিক যানবাহন শিল্পে আজ এক অগ্রণী স্থান অর্জন করেছে। হয়তো কালক্রমে ভবিষ্যতে টেসলার ব্যবসায়িক মডেল আরও পরিবর্তিত হতে পারে, তবে এর মূলনীতি—উদ্ভাবন ও টেকসই উন্নয়ন—অপরিবর্তিত থাকবে বলেই আশা করা যায়।

“তথ্যসূত্র”

স্লো ফ্যাশন: পরিবেশ সচেতন ও নৈতিক ফ্যাশনের নতুন ধারা

Previous article

নেটফ্লিক্স কিভাবে হয়ে উঠল আজকের শীর্ষ স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম?

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *