কোম্পানি ফরেনসিকস

বিশ্ব গণমাধ্যমে নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী পত্রিকা “দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস”

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়েশা আক্তার

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে কিংবা নাশতার টেবিলে চা খেতে খেতে আমাদের অনেকেরই পত্রিকা পড়ার অভ্যাস রয়েছে। অনেকেই আবার কাজের ফাঁকে অনলাইন পত্রিকা থেকে সারাদিনের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ জেনে নেয়। আধুনিক এই যুগে এসেও কিন্তু পত্রিকার চাহিদা কমেনি। বরং আমরা এখনো আগের মতোই দেশ-বিদেশের নানা সংবাদ জানার জন্য পত্রিকার উপর নির্ভরশীল। শুধু পার্থক্য এতটুকুই যে, আগে আমরা পত্রিকার উপর এককভাবে নির্ভরশীল ছিলাম। আর এখন আমরা অনলাইন পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়া, ব্রডকাস্ট চ্যানেল সহ নানা জায়গা থেকে তথ্য জানতে পারি।

আচ্ছা, আমাদের মনে কি কখনো প্রশ্ন জেগেছে যে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকার নাম কি? এর উত্তর কিন্তু আমরা অনুমান করতে পারি। সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকার নাম একক ভাবে বলা যাবে না। এ বিষয়ে নানা তর্ক- বিতর্ক থাকতে পারে। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকার তালিকায় রয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের নাম। চলুন আজকে আমরা জেনে নেই কেনো নিউ ইয়র্ক টাইমস জনপ্রিয় পত্রিকার তালিকায় রয়েছে। সেইসাথে এর ইতিহাস সম্পর্কেও আজকে আমরা আলোচনা করবো।

শুরুর ইতিহাস

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের লক্ষ্যে ১৮৫১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে নিউ ইয়র্ক টাইমস নামে একটি পত্রিকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নিউইয়র্ক ট্রিবিউনের সাংবাদিক হেনরি জার্ভিস রেমন্ড এবং জর্জ জোন্সের হাত ধরে পত্রিকাটি যাত্রা শুরু করে। এটি প্রাথমিকভাবে সাফল্য অর্জন করেছিলো কারণ এর সম্পাদকেরা একটি গণ শ্রোতার পত্রিকার পরিবর্তে একটি সংস্কৃতিবান, বুদ্ধিজীবী পাঠকদের লক্ষ্য করে পত্রিকাটি চালু করেছিলেন। টাইমস প্রথম ব্রেক থ্রু লাভ করে ১৮৭০-এর দশকে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ উইলিয়াম এম. টুইডের আক্রমণাত্মক কভারেজের মাধ্যমে। এরপর এই পত্রিকা জাতীয় স্বীকৃতি লাভ করে।

১৮৯৬ সালের আগস্টে, চ্যাটানুগা টাইমসের প্রকাশক অ্যাডলফ ওচস নিউইয়র্ক টাইমস ক্রয় করেন। তিনি যখন  এটি কিনেছিলেন তখন টাইমস সপ্তাহে $১,০০০ করে হারাচ্ছিল। টাইমস কেনার সাথে সাথেই তিনি সংবাদপত্রের কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বাস্তবায়ন করেন। ওচস টাইমসকে একটি বণিকের সংবাদপত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন এবং সংবাদপত্রের নাম থেকে হাইফেনটি সরিয়ে দেন। ১৯০৫ সালে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস,  টাইমস টাওয়ার খুলেছিল। ১৯১২ সালের এপ্রিলে নিউ ইয়র্ক টাইমস টাইটানিক ডুবে যাওয়ার বিষয়ে রিপোর্ট করে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসকে একটি আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত দৈনিকে পরিণত করতে ওচসের অবদান অভাবনীয়। ওচস দিনের সংবাদের সম্পূর্ণ প্রতিবেদনের উপর অনেক বেশি জোর দেয়। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক সংবাদের ভালো কভারেজ বজায় রাখার জন্য জোর দেয় এবং কাগজ থেকে কল্পকাহিনী বাদ দেয়। তিনি কাগজের নিউজস্ট্যান্ডের দাম এক পয়সায় কমিয়ে দেয়। দুটি বিশ্বযুদ্ধের কভারেজের মাধ্যমে টাইমস বিশ্ব সংবাদে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য তার খ্যাতি বাড়াতে থাকে।

একটি খ্যাতনামা পত্রিকার শুরুর ইতিহাস, যার মধ্যে রয়েছে এর প্রাথমিক যাত্রা ও ভিত্তি।

টাইমসের পথচলা 

টাইমস নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে প্রযুক্তির ব্যবহার অব্যাহত রাখে। ১৯৯৫ সালে তারা অনলাইন সংস্করণ চালু করে। ১৯৯৭ সালে তারা পত্রিকার মুদ্রণ সংস্করণের জন্য রঙিন ফটোগ্রাফার নিয়োগ করে। শুধু তাই নয়, প্রকাশনাটি ২০০৫  সালে টাইমস সিলেক্ট নামে একটি সাবস্ক্রিপশন পরিষেবা চালু করে এবং এর অনলাইন সংস্করণের অংশগুলোতে অ্যাক্সেসের জন্য গ্রাহকদের চার্জ করে। ২০০৬ সালে টাইমস একটি ইলেকট্রনিক সংস্করণ চালু করে। যার নাম ছিলো টাইমস রিডার। এটি গ্রাহকদের বর্তমান মুদ্রণ সংস্করণ ডাউনলোড করার অনুমতি দেয়। পরের বছর প্রকাশনাটি ম্যানহাটনের নবনির্মিত নিউইয়র্ক টাইমস বিল্ডিং-এ স্থানান্তরিত হয়। ২০১১ সালে টাইমস তার ডিজিটাল সংস্করণের জন্য একটি সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান প্রতিষ্ঠা করে যা বিনামূল্যে অ্যাক্সেসকে সীমিত করেছে। 

বিতর্ক এবং টাইমস 

১৯৭১ সালে টাইমস বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। কারণ, সেসময় এটি “পেন্টাগন পেপারস” এর উপর ভিত্তি করে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার একটি গোপন সরকারি গবেষণা, সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা গোপনে টাইমসকে দেওয়া হয়েছিল। তবে “পেন্টাগন পেপারস”-এর প্রকাশনার জন্য ১৯৭২ সালে টাইমস পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিল। বর্তমানেও নানা সময়ে ইসরাইল- ফিলিস্তান যুদ্ধ সংক্রান্ত ইস্যুতে টাইমসের কভারেজ নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে।

টাইমস ঘিরে বিতর্ক, এর চ্যালেঞ্জ ও জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে।

কেনো টাইমস এতো জনপ্রিয়? 

টাইমসের জনপ্রিয়তার কারণ হলো তারা প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে আপডেট করেছে। যখনই কোনো নতুন প্রযুক্তি এসেছে, তারা সেই প্রযুক্তির প্রয়োগ করে নিজেদেরকে অন্যদের থেকে আলদা করেছে। নানা তর্ক- বিতর্ক থাকলেও টাইমস চেষ্টা করে গেছে সাংবাদিকতার মান রক্ষা করতে। আর তাই তাদের রয়েছে ১৩০ টিরও বেশি পুলিৎজার পুরস্কার। যা এই পত্রিকাকে  বিশ্বব্যাপী পরিবেশিত সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে একটি করে তুলেছে। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস তার মানসম্পন্ন সাংবাদিকতা এবং গভীর প্রতিবেদনের জন্য বেশ বিখ্যাত। পত্রিকাটির দৈনিক পাঠকের গড় মোট সংখ্যা ১৫.২ মিলিয়ন। প্রতিদিন এর প্রিন্ট সার্কুলেশন প্রায় ৬২০,০০০ এবং ডিজিটাল গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১০.৫ মিলিয়ন। 

শেষ কথা 

আমরা অনেকসময় ভাবি ডিজিটাল এই যুগে পত্রিকা ইন্ডাস্ট্রিজ আর টিকে থাকবে না, তারা তাদের সোনালি অতীত হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস যেনো আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, আপনি যদি বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে পারেন এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করতে পারেন তবে আপনি কখনোই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না। প্রায় দুই শতক জুড়ে চলা এই পত্রিকা এখনো নিজেদের গৌরব ধরে রেখেছে।

“তথ্যসূত্র”

ব্রহ্মপুত্রে চীনের মেগা বাঁধঃ বাংলাদেশে’র জন্য কতটুক ক্ষতিকর

Previous article

গুগল স্কলার: একাডেমিক গবেষণার প্রবেশদ্বার

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *