মানি ম্যানেজমেন্ট এন্ড পার্সোনাল ফিনান্স

ধাপে ধাপে জরুরী তহবিল গঠন করার উপায়

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তায়্যিবা

জরুরি পরিস্থিতি কখনও বলে কয়ে আসে না। হঠাৎ গাড়ি মেরামতের খরচ, চিকিৎসার বিল, বা আয়ের সাময়িক ক্ষতি—এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যে কারও জীবনে যেকোনো সময় ঘটতে পারে। ফলে তা ব্যক্তির জন্য আর্থিক চাপ তৈরি করতে পারে। জরুরী তহবিল হলো এমন একটি সঞ্চয় যা আপনাকে এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ঋণে না পড়তে বা দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক লক্ষ্য হারিয়ে না ফেলতে সাহায্য করে। এখানে ধাপে ধাপে জরুরী তহবিল তৈরি করার ধাপ সমূহ বর্ণনা করা হলঃ

ধাপ ১: জরুরী তহবিলের গুরুত্ব বোঝা

প্রথমেই বুঝতে হবে আমাদের আর্থিক জীবনে আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখা ও জরুরী তহবিল তৈরি করা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। জরুরী তহবিল হলো একটি আলাদা সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট, যা অপ্রত্যাশিত খরচের জন্য গড়ে তোলা হয়। এটি নিম্নলিখিত সুবিধা দেয়: 

– জরুরি পরিস্থিতিতে ঋণের প্রয়োজন এড়াতে সাহায্য করে।  

– মানসিক শান্তি বজায় রাখে।  

– দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক লক্ষ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। 

যদি আপনি নতুন সঞ্চয় শুরু করতে চান বা আর্থিক প্রস্তুতি বাড়াতে চান, তবে আজ থেকেই আপনার জরুরী তহবিল তৈরি শুরু করুন। 

একজন ব্যক্তি একটি নোটবুক এবং ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে জরুরী তহবিলের পরিকল্পনা করছেন।

জরুরী তহবিলের গুরুত্ব ও পরিকল্পনা। | ছবি সংগৃহীত।

ধাপ ২: একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা  

সঞ্চয় শুরু করার আগে, আপনার জরুরী তহবিলে কত টাকা থাকা উচিত তা নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে শুরুতে মাসিক খরচ হিসাব করুন। তার জন্য প্রথমে আপনার মাসিক প্রয়োজনীয় খরচগুলো তালিকাভুক্ত করুন, যেমন: বাড়িভাড়া, ইউটিলিটি বিল, মুদিখানা খরচ, পরিবহন খরচ ইত্যাদি। বিনোদনের মতো খরচে কিছুটা কাটছাঁট করতে পারেন।

ধাপ ৩: সঞ্চয়ের পরিমাণ ও সময় নির্ধারণ করা

আপনার আয় ও বাজেট মূল্যায়ন করুন। আপনার আয় ও ব্যয়ের ধরন বিশ্লেষণ করে প্রতি মাসে কত টাকা সঞ্চয় করা সম্ভব তা চিহ্নিত করুন। আপনার আর্থিক চাপ এড়াতে সঞ্চয়যোগ্য টাকার একটি অংশ, যেমন ৫০%  সঞ্চয়ের জন্য রাখুন।

ধাপ ৪: সঞ্চয়ের জন্য সঠিক জায়গা নির্বাচন করুন

আপনার জরুরী তহবিল সহজলভ্য হলেও সাধারণ ব্যয় থেকে আলাদা থাকা উচিত। বিকল্পগুলো হতে পারে আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যা অনিচ্ছাকৃত খরচ থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ, যেমন শেয়ার বাজার, জরুরী তহবিলের জন্য এড়িয়ে চলুন।

ধাপ ৫: ধীরে ধীরে শুরু করুন, তবুও করুন  

যদি আপনি বেতন-নির্ভর জীবনযাপন করেন, তাহলে ছোট ছোট পরিমাণে সঞ্চয় শুরু করুন। যেমন আয়ের ১–২% সঞ্চয় করুন। স্বয়ংক্রিয় সঞ্চয় ব্যবস্থা চালু করুন। বোনাস, ট্যাক্স রিফান্ড বা অতিরিক্ত আয় জরুরী তহবিলে রাখুন।  নিয়মানুবর্তিতা বজায় রাখুন। সময়ের সাথে ছোট ছোট সঞ্চয় বড় আর্থিক সুরক্ষা তৈরি করবে।

ধাপ ৬: সঞ্চয় পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করুন

আপনার আর্থিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হলে জরুরী তহবিলকেও সেই অনুযায়ী সমন্বয় করুন। এক্ষেত্রে জীবনযাত্রার পরিবর্তনে লক্ষ্য পুনর্নির্ধারণ করুন। আয় বাড়লে সঞ্চয়ের হার বাড়ান। জরুরি প্রয়োজনে টাকা সহজে পাওয়া যায় কিনা তা  নিশ্চিত করুন।

একজন ব্যক্তি টেবিলে বসে ল্যাপটপ ও কাগজপত্র ব্যবহার করে সঞ্চয় সমন্বয় ও জরুরী তহবিল ব্যবস্থাপনার কাজ করছেন।

সঞ্চয় পর্যবেক্ষণ ও জরুরী তহবিল সমন্বয় করুন। | ছবি সংগৃহীত।

ধাপ ৭: সঠিকভাবে ব্যবহার করুন

শুধু টাকা জমালেই হবেনা তা যথাযথভাবে ব্যবহারও করতে হবে। জরুরী তহবিল শুধু প্রকৃত অর্থেই জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহার করুন, যেমন:  চাকরি হারানো, বড় ধরনের চিকিৎসার খরচ, জরুরি গৃহ মেরামত।  তবে খেয়াল রাখতে হবে ব্যবহারের পর ফান্ডটি যেন পুনরায় পূরণ করা হয়। 

জরুরী তহবিল তৈরি করতে ধৈর্য ও নিয়মিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, তবে এটি মানসিক শান্তি ও আর্থিক সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য। লক্ষ্য নির্ধারণ, নিয়মিত সঞ্চয়, সঠিক অ্যাকাউন্ট নির্বাচন এবং শৃঙ্খলা বজায় রেখে আপনি একটি শক্তিশালী ফান্ড তৈরি করতে পারবেন যদি আপনি চান।  

ছোট পরিমাণে হলেও আজ থেকেই শুরু করুন। আপনার সঞ্চয় যত দ্রুত শুরু করবেন, তত বেশি প্রস্তুত থাকবেন জীবনের যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য।

“তথ্যসূত্র”

কেন বিনিয়োগে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ?

Previous article

বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট চেইনের সাফল্যের নতুন নাম খানা’স

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *