Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়শা মারিয়া |
অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করা বা শক্তির অভাব অনুভব করা খুবই সাধারণ একটি অভিজ্ঞতা। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা আমাদের শরীরকে ক্লান্ত করে তোলে। অনেকেই সারাক্ষণ ক্লান্তি, অবসাদ এবং নিষ্ক্রিয়তা অনুভব করে। কিন্তু এর পেছনে কী কারণ?
ক্লান্তি হলো শারীরিক বা মানসিক শক্তির অভাব, যার ফলে কোনো কাজ করার ইচ্ছা বা শক্তি থাকে না। এটি একটি সাধারণ অবস্থা যা সাময়িক বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ক্লান্তি শুধু শারীরিক নয়, মানসিক কার্যকলাপকেও প্রভাবিত করে।
দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি দূর করতে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে, ক্লান্তি দূর করার জন্য এর মূল কারণ নির্ণয় এবং এর চিকিৎসা করা জরুরী।
ক্লান্তির কারণ
কী কী কারণে সারাক্ষণ ক্লান্ত অনুভব হতে পারে, চলুন জেনে নিই-
স্লিপ অ্যাপনিয়া, আসীন জীবনধারা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, সর্দি বা ফ্লু হওয়া, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ হতে শুরু করে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যাও হতে পারে। এই সমস্যাগুলির মধ্যে পুষ্টির ঘাটতি, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের অভাব, থাইরয়েডের সমস্যা, অ্যানিমিয়া, টাইপ 2 ডায়াবেটিস, মানসিক চাপ বা এমনকি কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এছাড়াও অস্বাস্থ্যকর ডায়েট, ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম বা ‘সিএফএস’ থেকে ক্লান্তি লাগতে পারে, প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে, ব্লাড সুগার বা রক্তে শর্করার পরিমাণ ওঠানামার কারণেও ক্লান্তি অনুভব হতে পারে।
শারীরিক ক্লান্তি প্রতিরোধের উপায়
পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। ঘুমের অভাব ক্লান্তির প্রধান কারণ।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসঃ মানুষের খাদ্যাভ্যাস তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। সুষম ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতিই ঘটায় না, ভালো ঘুমের জন্যও তা সহায়ক ।
নিয়মিত শারীরিক কসরতঃ নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ক্লান্তি কমাতে এবং ঘুমের মান উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে। যারা কিছুদিন ধরে শারীরিকভাবে সক্রিয় ছিলেন না, তাদের ক্রমশ ক্রমশ ব্যায়াম শুরু করা উচিত।
সুষম খাদ্য: শাকসবজি, ফল, প্রোটিন এবং সম্পূর্ণ শস্য খেতে হবে। তেল-মশলাযুক্ত খাবার কম খাওয়া উচিত।
মানসিক চাপ কমানো: মেডিটেশন বা যোগ ব্যয়াম করলে মানসিক চাপ কমে।
পর্যাপ্ত পানি পান: শরীরে পানির ঘাটতি হলে ক্লান্তি অনুভূত হয়। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
যোগব্যায়াম এবং মননশীলতা
২০০৯ সালের দুটি পুরনো গবেষণায় মননশীলতা ও যোগের উপকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছিল। একটি গবেষণায়, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস রোগীরা দুই মাস ধরে মননশীলতা ধ্যান অনুশীলন করার পরে ক্লান্তি, উদ্বেগ এবং হতাশার মাত্রা হ্রাস পেয়েছে এবং তাদের জীবনের মান উন্নত হয়েছে।
অন্য একটি গবেষণায় ক্যান্সার সারভাইভারদের উপর চার সপ্তাহের একটি যোগ প্রোগ্রামের প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছিল, যাতে আসন, ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং অন্যান্য কৌশল অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই প্রোগ্রামের ফলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ক্লান্তি এবং ঘুমের মান কিছুটা উন্নত হয়েছে।
শারীরিক ক্লান্তি দূর করার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক শান্তি ক্লান্তি দূর করার মূল চাবিকাঠি। মনে রাখবেন, প্রত্যেক ব্যক্তির শরীর ভিন্ন। তাই একজনের জন্য যা উপকারী সেটা অন্যের জন্য কাজ নাও করতে পারে। তাই আপনার জন্য সেরা উপায় খুঁজে বের করতে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
Comments