Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তায়্যিবা |
বিনিয়োগ সর্বদাই সাধারণ সঞ্চয়ের তুলনায় অধিক লাভজনক একটি উপায়। এটি দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ বৃদ্ধি ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক, যা বার্ধক্যকালীন আর্থিক নিরাপত্তা প্রদানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মুদ্রাস্ফীতির চাপ মোকাবিলায় সঠিক স্থানে বিচক্ষণতার সাথে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এ ক্ষেত্রে বন্ড একটি নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত। কেন? আসুন জেনে নিইঃ
১. স্থির আয়ের নিশ্চয়তা
বন্ডে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট সুদের হার অনুযায়ী স্থিতিশীল আয় উপার্জন করতে পারেন। এই সুদের হার পরিচিত কুপন রেট নামে, যা বন্ড ইস্যুকারী সংস্থার সাথে চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। এই আয় প্রায়শই স্থিড় থাকে, ফলে এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিয়মিত আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে। সুতরাং, যারা ঝুঁকি কমিয়ে স্থিতিশীল আয় উপার্জন করতে চান, তাদের জন্য বন্ড একটি উৎকৃষ্ট উপায় হতে পারে।
২. ঝুঁকি কম
বন্ডের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তুলনামূলক কম। বিশেষত সরকারি ট্রেজারি বন্ডগুলোতে বিনিয়োগ করলে তা আরও নিরাপদ হয়, কারণ এসব বন্ড সরাসরি সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক ইস্যু করে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের সময়েও সরকারি বন্ড সাধারণত নিরাপদ থাকে। এছাড়া বেসরকারি করপোরেট বন্ডেও ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত কম থাকে, কারণ বন্ডের ক্ষেত্রে সুদের হার নির্ধারিত থাকে এবং এটি শেয়ারের মতো বাজার পরিবর্তনের উপর অতটা নির্ভরশীল নয়।
৩. মুনাফা লাভের উচ্চ সম্ভাবনা
অন্যান্য বিনিয়োগের তুলনায় বন্ড সাধারণত কিছুটা উচ্চ হারে সুদ প্রদান করে। সাধারণ ব্যাংক ডিপোজিট বা সঞ্চয় স্কিমের তুলনায় বন্ডের সুদের হার বেশি হয়। তাই দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ মুনাফা অর্জনের জন্য বন্ড একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ মাধ্যম।
৪. কর সুবিধা
বেশ কয়েকটি বন্ডে কর-সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধা থাকে। বিশেষ করে সরকারি ট্রেজারি বন্ডগুলোর ক্ষেত্রে কর সুবিধা বেশি পাওয়া যায়। এতে বিনিয়োগকারীরা করের প্রভাব থেকে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে রক্ষা পেতে পারেন, যা তাদের প্রকৃত আয়ের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে যারা কর সাশ্রয়ী উপায়ে আয় করতে চান, তাদের জন্য বন্ড একটি চমৎকার আয়ের মাধ্যম হতে পারে।
৫. মালিকানার ওপর প্রভাব নেই
বন্ড মূলত ঋণপণ্য, এবং এতে বিনিয়োগকারী মালিকানা দাবি করেন না। কোম্পানি শেয়ারের ক্ষেত্রে মালিকানার অংশীদারিত্ব দেয়, কিন্তু বন্ডের ক্ষেত্রে তা নেই। ফলে কোম্পানির মুনাফা বা ক্ষতির উপর বিনিয়োগকারীর আয় নির্ভর করে না। এটি বন্ড বিনিয়োগকারীদের জন্য বন্ডকে একটি স্থিতিশীল এবং নিরাপদ আয়ের উৎস হিসেবে নিশ্চিত করে।
৬. বিভিন্ন ধরণের বন্ডের প্রাপ্যতা
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরণের বন্ড বিদ্যমান; যেমন সরকারী বন্ড বা ট্রেজারি বন্ড, করপোরেট বন্ড, অ্যাজেন্সি বন্ড, ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক সুকুক বন্ড ইত্যাদি। বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার বন্ড বেছে নিতে পারেন। এই ধরণের বৈচিত্র্য বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি কমাতে ও তাদের বিনিয়োগের উদ্দেশ্য পূরণ করতে সহায়ক।
৭. নগদায়নের সুবিধা
বন্ডের মেয়াদ পূর্তির আগে নগদায়ন করা সম্ভব। বিশেষত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বন্ডগুলো যেকোনো সময় কেনাবেচা করা যায়, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে। ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রেও প্রয়োজন হলে ব্যাংকের মাধ্যমে নগদায়ন করা সম্ভব, যা আর্থিক চাপের সময়ে বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করে।
বন্ডে বিনিয়োগ, সঞ্চয় ও ঝুঁকি কমানোর জন্য একটি চমৎকার ও কার্যকরী পদ্ধতি। তাই দীর্ঘমেয়াদে নির্ভরযোগ্য আয়, উচ্চ মুনাফার সম্ভাবনা, এবং নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে বন্ডে বিনিয়োগ অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর জন্য একটি নিরাপদ ও লাভজনক পছন্দ হতে পারে।
Comments