বিজনেস আইডিয়াস

আপনি যেভাবে সোশাল মিডিয়া ম্যানেজার হতে পারেন

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়শা মারিয়া

আপনি কি সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে রাজত্ব করতে চান? অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে ছড়িয়ে দিতে চান আপনার ব্র্যান্ডের রাজত্ব? বর্তমান ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে একটি অপরিহার্য মাধ্যম। আর এই মাধ্যমটিকে সফলভাবে ব্যবহার করতে চাইলে, আপনার অবশ্যই প্রয়োজন হবে একজন দক্ষ সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের। কিন্তু কী কী গুণ থাকলে একজন ব্যক্তিকে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে নির্বাচিত করা যায়? আজকের আর্টিকেলে আমরা সেই বিষয়েই আলোকপাত করব।

লিংকডিনের তথ্য অনুযায়ী মহামারীর পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার পেইড স্কিলসের চাহিদা ১১৬.৪% এবং ইনস্টাগ্রাম স্কিলসের চাহিদা ২৮.৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিএলএস) এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০৩২ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞাপন, প্রচার এবং বিপণন ব্যবস্থাপনা পদের চাহিদা ৬% বৃদ্ধি পাবে।

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার কি?

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হলেন একজন ব্যক্তি যিনি কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ড বিল্ডিং এর দায়িত্ব নেন। তাদের কাজ হলো সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট তৈরি করা, পোস্ট করা, তার পারফরম্যান্স ট্র্যাক করা এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ফলোয়ারদের সাথে যোগাযোগ করা।

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজাররা প্রায়শই একটি সংস্থার সোশ্যাল মিডিয়া কৌশল তৈরি করতে সহায়তা করে। এই কৌশলটি নির্দেশিকা প্রদান করে যে কোন ব্র্যান্ড সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলিতে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করতে চায়। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার তাদের ব্র্যান্ডের সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে ব্যবহারকারীদের জড়িত রাখার পাশাপাশি সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে মার্কেটিং প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্বেও রয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের কাজ কি?

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের দৈনন্দিন কাজের চিত্র।

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের পেশাগত ভূমিকা এবং কাজের বিস্তারিত। | ছবি সংগৃহীত।

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার সাধারণত ফলোয়ার বাড়ানোর কৌশল তৈরি করেন, এছাড়াও ব্র্যান্ড নির্দেশিকা তৈরি, ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি, বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করা, অনলাইন দর্শকদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারী-সৃষ্ট কনটেন্ট সংগ্রহ করেন এছাড়াও সোশ্যাল ক্যাম্পেইন তৈরি ও পরিচালনা করা এবং কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডারদের সাথে যোগাযোগ করার দায়িত্বে থাকে। এসব ভূমিকা একটি ব্র্যান্ডের অনলাইন উপস্থিতি বাড়ানোর এবং সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষণ বোঝার জন্য দায়ী।

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের নিজ কাজ সঠিকভাবে ও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেমন-

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার সাধারণত কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের অংশ হয়ে থাকে। তারা প্রায়ই প্রেস রিলেশন ও মার্কেটিং টিমের সাথে মিলে সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন ও স্ট্র্যাটেজি তৈরি করে। কোম্পানির আকার অনুযায়ী, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজাররা মার্কেটিং, গ্রোথ বা কমিউনিকেশন বিভাগের ডাইরেক্টর বা ভাইস প্রেসিডেন্টের অধীনে কাজ করে। তারা প্রায়ই নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য টিমকে ডাটা প্রেজেন্ট করে, কোন সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্র্যাটেজি সবচেয়ে ভালো ফলাফল দিচ্ছে, সে সম্পর্কে অবহিত করে।

একজন সোশাল মিডিয়া ম্যানেজার হতে আপনাকে যা যা করতে হবে-

১। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতাঃ

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হতে চাইলে প্রথম ধাপ হলো মার্কেটিং, পাবলিক রিলেশন (পিআর) বা অনুরূপ কোনো বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা। মার্কেটিং বা পিআর ডিগ্রি পেশাদারদের ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং গ্রাহক আচরণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ শিক্ষা প্রদান করে। মার্কেটিং এবং পিআর পাঠ্যক্রমে প্রায়শই সোশ্যাল মিডিয়া কৌশল বা ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স থাকে। কিছু প্রোগ্রাম সোশ্যাল মিডিয়া বা নতুন মিডিয়ায় আনুষ্ঠানিক কনসেন্ট্রেশন অফার করে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবস্থাপনায় আগ্রহী ব্যক্তিরা স্থানীয় কোনো অনুষ্ঠান বা ছোট ব্যবসার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারণা পরিচালনার স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। তারা একটি ব্লগ শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে তা প্রচার করতে পারেন অথবা ব্যক্তিগত প্রোফাইলের অনুসারী বাড়াতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিপণন কৌশল ব্যবহার করতে পারেন।

২। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ইন্টার্নশিপ বা এন্ট্রি-লেভেলের চাকরির অভিজ্ঞতাঃ

সোশ্যাল মিডিয়ায় ইন্টার্নশিপ বা এন্ট্রি-লেভেল চাকরি করার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ইন্টার্নশিপ বা এন্ট্রি-লেভেল চাকরি দিয়ে ক্যারিয়ার গড়া। | ছবি সংগৃহীত।

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হতে চাইলে প্রথমে ইন্টার্নশিপ বা এন্ট্রি-লেভেল সোশ্যাল মিডিয়া জব করুন। এই ক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার অভিজ্ঞতা কম থাকে, তাহলে প্রথমে এমন একটি এন্ট্রি-লেভেল পজিশনের জন্য দেখুন যেখানে আপনি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর নীতি-নিয়ম শিখতে পারবেন। তারপর ম্যানেজার পজিশনে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে অনেকেই প্রথমে ইন্টার্ন হিসেবে অথবা সোশ্যাল মিডিয়া কোঅর্ডিনেটর, ডিজিটাল কনটেন্ট প্রডিউসার বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাসোসিয়েট এর মতো এন্ট্রি লেভেল পজিশন থেকে শুরু করে।

৩। কোর্সের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শিখুনঃ

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজাররা একটি সংস্থার মুখপাত্র হিসাবে কাজ করতে পারে এবং জনগণের সাথে যোগাযোগ করে তাদের দর্শন প্রচার করতে পারে। যদি আপনি শিখতে প্রস্তুত হন, তাহলে কোর্সের মেটা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং প্রফেশনাল সার্টিফিকেটটি বিবেচনা করুন – প্রথম সপ্তাহটি বিনামূল্যে। এই প্রোগ্রামটি সামাজিক মিডিয়া উপস্থিতি তৈরি এবং পরিচালনা করা, বিজ্ঞাপন প্রচারণা চালানো এবং তাদের ফলাফল পরিমাপ করা এবং আরও অনেক কিছু কভার করে।

৪। সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করুনঃ

অনেক ম্যানেজার পদের জন্য অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। ছাত্র থাকাকালীন  সামাজিক মাধ্যম সম্পর্কিত ইন্টার্নশিপগুলো আপনার রিজিউম গড়ে তোলার একটি দুর্দান্ত উপায়। সামাজিক মাধ্যম ব্যবস্থাপকরা বিনামূল্যে অনলাইন কোর্সগুলো থেকেও উপকৃত হতে পারেন। ইন্টার্নশিপ এবং জুনিয়র পদগুলি মূল্যবান অন-দ্যা-জব প্রশিক্ষণ প্রদান করে। অনেক সামাজিক মাধ্যম ব্যবস্থাপক, সামাজিক মাধ্যম অ্যাসোসিয়েট, মার্কেটিং সহকারী বা ডিজিটাল কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের মতো এন্ট্রি-লেভেল পিআর বা মার্কেটিং পদে শুরু করেন। কোনো ক্লাব বা অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার কথা বিবেচনা করুন। আপনার ব্যক্তিগত সামাজিক মাধ্যম উপস্থিতি গড়ে তোলা আপনার দক্ষতা প্রদর্শনের আরেকটি উপায়।

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের বেতন ও চাকরির সম্ভাবনা:

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের বেতন ও চাকরির সুযোগের বিবরণ।

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের পেশাগত ভবিষ্যত এবং বেতন সম্পর্কিত তথ্য। | ছবি সংগৃহীত।

বর্ধনশীল এই শিল্পে বেতন অনেকটাই পরিবর্তনশীল, তবে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজাররা সকল ব্র্যান্ডের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠছে। এর ফলে, সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে অভিজ্ঞ পেশাদারদের চাহিদা বজায় থাকছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিএলএস) বিজ্ঞাপন ও প্রচার প্রচারণা ব্যবস্থাপকদের জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল চাকরির সম্ভাবনা বর্ণনা করেছে, যার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজাররাও অন্তর্ভুক্ত। বিএলএস-এর মতে, এই পেশাদাররা ২০২২ সালে গড় বেতন ১২৭,৮৩০ ডলার উপার্জন করেছিলেন এবং ২০২১ থেকে ২০৩১ সালের মধ্যে গড়ের চেয়ে দ্রুত ৭% বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

পেস্কেলের মতে, ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজাররা গড়ে প্রায় ৫৪,৬০০ ডলার বার্ষিক বেতন পেয়েছেন। অভিজ্ঞতার সাথে, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজাররা সোশ্যাল মিডিয়া পরিচালক হতে পারেন, যারা বার্ষিক প্রায় ৮০,৭০০ ডলার উপার্জন করেন।

“তথ্যসূত্র”

দেশে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি আনলো “পালকি মোটরস”

Previous article

স্বপ্নবাজ হুসাইন এম. ইলিয়াস-এর “পাঠাও” যাত্রা

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *