Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়শা মারিয়া |
চলুন এমন একটি ব্যবসা সম্পর্কে জেনে নেই, যে ব্যবসায় আপনার নিজের পণ্য, স্টক বা গোডাউন এর কোনো প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র একটি স্মার্টফোন এবং সাথে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই আপনি সম্পূর্ণ ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারবেন যেকোনো স্থান থেকেই। এটিই হলো ড্রপশিপিং বিজনেস। ড্রপশিপিং একটি ই–কমার্স বিজনেস মডেল।
কম্পিউটার সম্পর্কে সাধারন জ্ঞান ও একটু পরিশ্রমের মাধ্যমেই আপনি ঘরে বসেই ড্রপশিপিং বিজনেস করে মাসে ২০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকারও অধিক আয় করতে পারবেন।
ড্রপশিপিং কি?
কোন পণ্য বা সেবা একজন সাপ্লায়ারের থেকে সংগ্রহ করে কোন প্রকার বিনিয়োগ ও গুদামজাত করা ছাড়াই সরাসরি ক্রেতার নিকট পৌঁছে দেয়ার নামই হলো ড্রপশিপিং। আর এই মধ্যস্থতাকারীকেই বলা হয় ড্রপশিপার। ড্রপশিপার একটি সম্মানজনক পেশা এবং বহির্বিশ্বে অধিকাংশ মানুষই এই বিনা পুঁজির ব্যবসার সাথে যুক্ত।
ড্রপ–শিপিং বিজনেসে আপনার কাজই হবে অন্যের পণ্য বিক্রি করা, তবে তা অবশ্যই আপনার নিজের ওয়েবসাইট বা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে। এখানে বিক্রেতার বদলে পণ্য মজুদের কাজটি করে থাকে পাইকারি বিক্রেতা অথবা সরবরাহকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান।
মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এখানে আপনার কাজ হলো, ক্রেতা যখন আপনার কাছ থেকে পণ্য কিনবে, আপনি সরাসরি অর্ডারটি পাঠাবেন সরবরাহকারীর কাছে এবং সরবরাহকারী সরাসরি পণ্যটি পাঠাবে ক্রেতার কাছে। আপনার কাজ শুধুমাত্র মাঝখানে থেকে মুনাফা নেওয়া।
এই ব্যবসার সুবিধাজনক দিক হলো আপনাকে এখানে কোনো বড় বিনিয়োগ করতে হবে না। পণ্য স্টক করার কোনো ঝামেলা নেই এবং আপনাকে কোনো গোডাউনও ভাড়া করতে হবে না। আবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনো আলাদা খরচেরও প্রয়োজন নেই বলে এই ব্যবসাতে ঝুঁকিও কম। এখানে আপনার কাজ শুধুমাত্র মার্কেটিং এবং বিক্রয়।
এছাড়াও আপনি যেকোনো জায়গা থেকে নিজের অনলাইন স্টোরকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবেন। এজন্য আপনার নিকট একটি ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার থাকা আবশ্যক। এইসব কারনেই ড্রপ–শিপিং বিজনেস নিয়ে আজকাল অনেকেই নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
ড্রপশিপিং এর ধাপসমূহ–
চেইন পদ্ধতিতে ড্রপ–শিপিং ব্যবসা পরিচালিত হয়। ড্রপ–শিপিং বিজনেসের ধাপগুলি নিম্নরূপ–
- কাস্টমারের বিক্রেতার ওয়েবসাইটে (ই-কমার্স সাইটঃ Amazon, eBay, Shopify, WooCommerce ইত্যাদি) পণ্যের অর্ডার।
- বিক্রেতার সেই অর্ডারসহ কাস্টমারের যাবতীয় তথ্য যেমন– নাম, ঠিকানা ফোন নাম্বার ইত্যাদি পাইকারি বিক্রেতা অথবা সরবরাহকারী এর কাছে হস্তান্তর করা।
- পাইকারি বিক্রেতা অথবা সরবরাহকারী মাধ্যমে কাস্টমারের কাছে পণ্য পৌঁছান।
উদাহরণস্বরূপ,
মনে করুন, আপনি ‘ইবে’- অনলাইন স্টোরে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে একটা টি–শার্টি অর্ডার করলেন ও পেমেন্ট করলেন। এবার পণ্য নিজস্ব সরবরাহকারীর নিকট মজুদ থাকায়, ‘ইবে’ কর্তৃপক্ষ সে অর্ডার তাদের কাছে পাঠিয়ে দেবে। তারপর সরবরাহকারী সেই নির্দিষ্ট পণ্য সরাসরি আপনার ঠিকানায় পৌঁছে দিবে।
ড্রপশিপিং ব্যবসার শুরুতেই আপনাকে যেভাবে ধাপে ধাপে আগাবেন এবং উপার্জন করবেন তা নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিন-
১. অনলাইন মার্কেটপ্লেসে পণ্য নিবন্ধন: আপনি প্রথমে প্রাথমিক সাপ্লাই চেক করার জন্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসে পণ্যের একটি নিবন্ধন করতে পারেন। এই নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে মার্কেটপ্লেসের নিবন্ধন ফর্ম পূরণের মাধ্যমে।
২. পণ্য বাছাই করুন: পণ্য নিবন্ধনের পরে, আপনি নিজের মার্কেটপ্লেসের অন্যান্য পণ্যের মধ্যে থেকে একটি বা একাধিক পণ্য বাছাই করতে পারেন। এর মানে এই নয় যে আপনাকে নিয়মিত স্টক ধারণকারী হতে হবে, বরং পণ্যটি যে সংস্থা বা ব্র্যান্ড নির্মাণ করে তাদের সেই পণ্য আপনাকে কাস্টমারকে তা সরবরাহ করতে হবে।
৩. পণ্য সরবরাহ করুন: আপনার গ্রাহকের অর্ডার পাওয়ার পরে, পণ্যের নিজস্ব ব্র্যান্ড বা সংস্থার কাছে পাঠাতে হবে। আপনার কিন্তু কোনও পণ্য প্যাক করতে হবে না , বরং তা সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা ব্র্যান্ডটি করবে। পণ্যটি গ্রাহকের ঠিকানায় পাঠানো হবে এবং ড্রপ-শিপার হিসেবে আপনার কিন্তু কোনো নগদ লেনদেন করারও দরকার নেই।
৪.গ্রাহককে বিভিন্ন সেবা প্রদান করুন: গ্রাহকদের সেবা প্রদানের জন্য ওয়েবসাইট বা ইমেল এড্রেস , গ্রাহকদের প্রশ্নোত্তর, পণ্য পরিবর্তন, পরিবহন সেবা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করতে পারেন। এছাড়াও গ্রাহকদের নিকট পণ্য নির্মানকারী সংস্থা বা ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে প্রদানকৃত যেকোনো তথ্য সরবরাহ করতে পারেন,যেমন- পন্যের বিবরণ, পণ্যের উচ্চতা, রং, রিভিউ ইত্যাদি।
৫. নিজের বিজনেসের মার্কেটিং করুন: আপনি নিজের ই-কমার্স ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, বিজনেস ডিরেক্টরি, ইমেল মার্কেটিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, বিজ্ঞাপন, ব্লগিং ইত্যাদির মাধ্যমে আপনার ড্রপশিপিং ব্যবসায়ে প্রচার করতে পারেন। মার্কেটিং পদক্ষেপগুলি ব্যবহার করে আপনি গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে পারেন, ক্রেতাদের প্রশ্নের সমাধান করতে পারেন এবং বিক্রয় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ব্র্যান্ড উপস্থাপন করতে পারেন।
৬. আর্থিক ব্যবস্থাপনা করুন: ড্রপ-শিপাররা গ্রাহকদের থেকে প্রাপ্ত পণ্যের মূল্যের কিছু অংশ পান এবং পণ্যটি ক্রয় করার পরে সংগ্রহ করা মূল্য থেকে নিজের কমিশন চার্জ গ্রহণ করেন।
৭. কম পূঁজিতে ব্যবসা: কম পূঁজি নিয়ে ড্রপশিপিং বিজনেসটি শুরু করা যায়। এটি কোনো গতানুগতিক দোকান নয় , বরঞ্চ এটি হলো অনলাইন স্টোরের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করা।
৮. পণ্য নির্বাচনে স্বাধীনতা: ড্রপশিপার হিসাবে, আপনার বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন পণ্য নির্বাচন করতে পারবেন। গ্রাহক এখানে পণ্যের মূল্যের রেঞ্জ ও নিজের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বেছে নিতে পারবেন।
৯.যেকোনো স্থানে বসেই ড্রপ-শিপিং পরিচালনা: ড্রপশিপিং এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো আপনি বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকেই ব্যবসাটি চালাতে পারেন। যদি আপনার নিকট ইন্টারনেট সংযোগসহ কোনো ডিজিটাল ডিভাইস থাকে, তাহলেই তখন আপনি আপনার এই অনলাইন দোকান পরিচালনাসহ, সরবরাহকারীদের সাথে যোগাযোগ এবং অর্ডার গ্রহণ করতে পারবেন যেকোনো দেশ থেকেই।
১০. মার্কেটিং ও নিয়মিত গ্রাহক অর্জনের কৌশল: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন, কন্টেন্ট মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, এবং ইনফ্লুয়েন্সারদের সহযোগিতা এমন কার্যকরী মার্কেটিং আপনার অনলাইন দোকানে ট্র্যাফিক বাড়াবে।
এই ধারণাগুলির মাধ্যমে আপনি ড্রপশিপিং বিজনেস থেকে আরো সহজে আয় করার রাস্তা আরো সহজ করে দিতে পারে। প্রতিদিনের অর্ডার গ্রহণ ও প্লেস এর ব্যাপারে আরো সচেতন থাকতে পারবেন।
সফলভাবে ড্রপশিপিং বিজনেস চালানোর জন্য মার্কেট সম্পর্কে জ্ঞান ও উপরিউক্ত ব্যবস্থাপনাগুলি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে জানতে হবে। কারণ ড্রপশিপিং সহজ হলেও সহজ নয়। আপনাকে অবশ্যই ভালো সরবরাহকারী খুঁজে বের করা, ভালো মার্কেটিং করা এবং ভালো কাস্টমার সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে।
Comments