গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির
নিজের ভাগ্য বদলাতে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই ঝুঁকছেন বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের দিকে। উন্নত জীবনমান, নিত্যনতুন গবেষণা ও সৃজনশীলতার দ্বার উম্মোচন করতে ইউরোপ, আমেরিকা ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন অনেকে। এক্ষেত্রে স্টেটমেন্ট অব পারপাস বা এসওপি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। একটি সুন্দর ও গোছানো এসওপি আপনার আবেদনকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্নকে বাস্তবে রুপান্তরিত করতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এসওপি লেখার খুঁটিনাটি সর্ম্পকে।
এসওপি কি?
স্টেটমেন্ট অব পারপাস বা এসওপির হচ্ছে আপনার অভীষ্ট লক্ষ্যের বিবৃতি। যে আপনি কেন উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যের বিদেশে পাড়ি দিতে চান? আপনার ভাবনা পরিকল্পনা বর্ণনাপত্রে লিখে বলায় এসওপি। আপনি কেন পরতে চান নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে, কি বিষয়ে পড়তে চান, কি কারণে পরতে চান, কি নিয়ে গবেষনা করতে চান, গবেষণার সাথে কিভাবে সম্পৃক্ত-এসব বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর গুছিয়ে লিখতে হয় এসওপিতে। তবে অনেক ক্ষেত্রে এসওপিকে রিসার্চ স্টেটমেন্টও বলা হয়।
একজন শিক্ষার্থীর আগ্রহের জায়গা, তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চায় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়। পিএইচডি ও বিভিন্ন মাস্টার্স ডিগ্রি প্রগ্রামে অতীতের গবেষণা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা লিখতে হয় এসওপিতে। শিক্ষার্থীর পেশাগত দক্ষ্যতা সম্পর্কে এবং তার অতীতে সম্পন্ন করা কোর্সে সম্পর্কে উল্লখ করতে হবে এসওপিতে। এককথায়, আপনি কেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট বিভাগের জন্য উপযুক্ত তা গুছিয়ে লিখায় এসওপি।
এসওপি লিখার ক্ষেত্রে যে বিষয় গুলি মাথায় রাখবেনঃ
উচ্চশিক্ষার জন্য যারা বিদেশে অবস্থান করছেন, তাদের সবাই এই একটা জায়গায় বেশি গুরুত্ব দিতে বলেন। তার আর যায় হোক এসওপি লিখার ক্ষেত্রে ভুল করা যাবেনা। এটির ওপর অনেকটা নির্ভর করে আপনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন কি না।
অনেকেই আছেন যারা অন্যদের এসওপিঁ হুবহু কপিঁ করে পাঁঠিয়ে দেয়। যেটা করা একদম ঠিক না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চায়, অন্য কারো না। তাই আপনার ইতিবাচক উদ্দেশ্য আপনার থেকে আর ভালো কেউ প্রকাশ করতে পারবে না। একটি দারুণ ও কার্যকর এসওপিতে পরিষ্কার ভাবে আপনি কোন বিষয়ে পড়তে চান এবং এই শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে আপনি কী প্রত্যাশা করছেন, তা সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে হবে। আপনি কোন কোন বিষয়ে গবেষণা করতে আগ্রহী, তা স্পষ্ট করে গুছিয়ে লিখতে হবে।
আপনার সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা এবং পরিস্থিতির মাধ্যমে আপনার আগ্রহের চিত্র তুলে ধরতে পারেন। এই বিষয়ে কানাডার স্যাস্কাচুয়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লেসমেন্ট কো-অর্ডিনেটর পলাশ রঞ্জন সান্যাল জানিয়েছেন, ” এসওপিতে আপনি আগে কোন কোন বিষয়ে কাজ করেছেন তা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। ” তাই স্নাতক বা মাস্টার্স করার সময় যে বিষয়ের উপরে আপনি থিসিস করেছিলেন বা যদি বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করে থাকেন তা নিয়ে অবশ্যই আপনার লিখতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বুঝাতে হবে যে আপনি যে বিষয়ে গবেষণা করতে চান তার জন্য কেন এই বিশ্ববিদ্যালয় সেরা। আপানার অতীত কাজ এই গবেষণার সাথে কতটা প্রাসঙ্গিক তা লিখতে হবে। এর আগে আপনি যদি কোন ইনস্টিটিউটে কাজ করে থাকেন তা লিখুন। কারণ এই এসওপিঁর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় জানতে পারবে আপনি সংশ্লিষ্ট কোর্স বা গবেষণায় কতটা আগ্রহী।
কি লিখবেন, কি লিখবেন না এসওপিতেঃ
১। আপনদের মধ্যে যাদের ইংরেজিতে দুর্বলতা আছে তারা এসওপিঁ লিখার ক্ষেত্রে লেখার মানের দিকে খেয়াল রাখবেন।
২। চেষ্টা করবেন পরিষ্কার বাক্য লিখতে। নিজর যে অভিজ্ঞতা নেই তা নিয়ে একদম লিখবেন না।
৩। প্রয়োজনে ইন্টারনেট থেকে এসওপির বিভিন্ন টেম্পলেট দেখতে পারেন তবে তা অনুকরণ করলে চলবে না।
৪। সময়ের আগে এসওপিঁ লিখে শেষ করবেন। বার বার পরুন নিজের লিখা। চেষ্টা করবেন অভিজ্ঞদের থেকে দিকনির্দেশনা নিয়ে এসওপি লেখার।
কিছু টিপস অনুসরণ করুণ এসওপি লিখার ক্ষেত্রেঃ
_যখনই আপনি এসওপি লিখতে বসবেন তার আগে নির্দিষ্ট একটি কাগজে আপনার আগ্রহ, কাজের অভিজ্ঞতা, গবেষণা, থিসিস পেপার, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ গুলির কথা লিখে রাখুন। যা আপনার কোন কিছু ভুলে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিবে।
_অন্য একটি কাগজে আপনর পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় কি চায়, কি ধরনের দিক নির্দেশনা তারা দিয়ে রেখেছে তার একটি তালিকা তৈরি করুন।
_আপনি যে বিষয়ে গবেষণা করতে চান তার তিনটি কারণ এবং এর বিশেষত্ব তা লিখে রাখুন।
_চেষ্টা করবেন আপানর ছোট থেকে ছোট অভিজ্ঞতা কিভাবে সুন্দর ভাবে এসওপিতে উল্লখ করা যায়।
_পুরো এসওপি দুই পৃষ্ঠার মধ্যে বাধার চেষ্টা করুন।
মনে রাখবেন এসওপি মূলত আপনার যোগাযোগ দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ। আপনার ভাষা গত দক্ষতার মাপকাঠিও এই এসওপি। তাই আপনার লিখা যত সুন্দর হবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক পাবার সুযোগ ততটায় বাড়বে।
Comments