এন্ট্রেপ্রেনিউরশিপ

স্বপ্নবাজ হুসাইন এম. ইলিয়াস-এর “পাঠাও” যাত্রা

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির

বর্তমান বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং বলতে সবচেয়ে জনপ্রিয় নামগুলোর একটি হলো পাঠাও। যার যাত্রাটা শুরু হয়ে ছিল ছোট আকারে, কিন্তু এখন এটি এক বিশাল প্ল্যাটফর্ম পরিণত হয়েছে। পাঠাও ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বৃহৎ জনগণের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হুসাইন এম. ইলিয়াস নেতৃত্বে পাঠাও আজ শুধু রাইড শেয়ারিং-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি এখন গ্রাহকদের বিভিন্ন সার্ভিস প্রদানকারী প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। এর মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানটি প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছ।

পাঠাও প্রতিষ্ঠার গল্প: উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য

হুসাইন এম. ইলিয়াস ও শিফাত আদনান ২০১৫ সালে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং দিয়ে পাঠাও এর যাত্রা শুরু করেন। তখন তাদের যাত্রাটা হয়েছিল মাত্র একটি মোটরসাইকেল দিয়ে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল “বাংলাদেশের মানুষকে সহজ, সাশ্রয়ী ও দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা সরবরাহ করা।” ইলিয়াসের মতে, “আমরা চাইছিলাম এমন একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে, যা সবার জন্য অ্যাক্সেসেবল এবং বিশ্বাসযোগ্য।” পাঠাও একটি ভিন্ন ধারার পরিবর্তন এনেছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো ব্যস্ত শহরগুলোতে। পাঠাওয়ের জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান হতে থাকলে তারা অন্যান্য সেবা, যেমন খাবার ডেলিভারি, পার্সেল সার্ভিস, এবং এমনকি লজিস্টিক সমাধানের দিকে নজর দেয়। এটি মূলত একটি গ্রাহকের প্রয়োজনীয়তা থেকেই শুরু হয়েছিল, যেখানে সময় সাশ্রয়ী ও নিরাপদ পরিবহনের চাহিদা ছিল।

পাঠাও প্রতিষ্ঠার গল্প এবং এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা, যা বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং ইন্ডাস্ট্রির অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত।

উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে পাঠাও-এর সাফল্যের পেছনের গল্প। | ছবি সংগৃহীত।

কর্মসংস্থান ও আয়: দেশের অর্থনীতিতে অবদান

বর্তমানে পাঠাও-এর মাধ্যমে প্রায় ৫ লক্ষাধিক ড্রাইভার এবং ডেলিভারি পার্টনার কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে শুধু রাইড শেয়ারিংই নয়, বরং খাবার ও পার্সেল ডেলিভারির জন্যও অনেকে কাজ করছেন। পাঠাওয়ের রিপোর্ট বলছে, প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখেরও বেশি ট্রিপ এবং ডেলিভারি সম্পন্ন করে থাকে তারা। এই প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত ড্রাইভাররা একটি ভালো অংকের টাকা আয়ের সুযোগ পায়, যা তাদের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। প্রায় ৫০ লাখের বেশি নিবন্ধিত ব্যবহারকারী রয়েছে এই প্ল্যাটফর্মে। পাঠাও প্রতিবছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রাজস্ব আয় করে বলে ধারণা করা হয়। এই বিপুল পরিমাণ আয় দেশের অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা স্থানীয় বাজারে ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে।

পাঠায়ের সেবা দেশও দেশের বাইরে 

পাঠাও-এর সেবা মূলত ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলে বেশি প্রচলিত হলেও বর্তমানে নেপালে তাদের সেবা বিস্তৃত হয়েছে। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো রাইড শেয়ারিং কোম্পানি আন্তর্জাতিকভাবে সেবা চালু করতে সক্ষম হয়েছে।  ইলিয়াস বলেছেন, “আমরা আমাদের সেবার মান বজায় রেখে এবং স্থানীয় চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে চাই।”

ব্যবহারকারা কিভাবে উপকৃত হচ্ছেন

পাঠাও ব্যবহারকারীরা কীভাবে সুবিধা পাচ্ছেন, বিশেষত দ্রুত রাইড শেয়ারিং, খাদ্য ডেলিভারি, এবং অনলাইন কেনাকাটার মাধ্যমে।

পাঠাও-এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের জীবনে সহজ ও দ্রুত সেবা। | ছবি সংগৃহীত।

পাঠাও শুধু রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে না। এটি মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, সিএনজি এবং এমনকি ফুড ডেলিভারি এবং পণ্য সরবরাহের সেবাও দিয়ে থাকে। এছাড়া ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ‘পাঠাও ফর বিজনেস’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যা ছোট এবং বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য পণ্য পরিবহন মূলক সেবা প্রদান করে থাকে। ব্যবহারকারীরা এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দ্রুত এবং কার্যকরী সেবা পাচ্ছেন, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সাধারণ ব্যবহারকারী/যাত্রী রাইড বুক করতে পারে বা খাবার অর্ডার করতে পারে মাত্র কয়েকটি ক্লিকে, যা তাদের সময় এবং শ্রম দুটোই সাশ্রয় করে। এই ব্যাপারে ইলিয়াস বলেন, “বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন ও মানসম্পন্ন সেবা প্রদানই আমাদের টিকে থাকার প্রধান কারণ।” এছাড়া, প্রযুক্তির উন্নতি এবং নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে তারা তাদের সেবাকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছে। উদাহরণস্বরূপ, তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গ্রাহক সেবা বৃদ্ধি করতে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে।

কমিউনিটি বিল্ডিং ও সামাজিক দায়িত্ব

পাঠাও কমিউনিটি বিল্ডিং এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে কীভাবে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সামাজিক উন্নয়নে পাঠাও-এর ভূমিকা: কমিউনিটি বিল্ডিং এবং দায়িত্বশীলতা। | ছবি সংগৃহীত।

পাঠাও প্রায় ১০ হাজারের বেশি নারী ড্রাইভার এবং পার্টনারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে, যা কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করছে। হুসাইন এম. ইলিয়াসের মতে, “পাঠাও  সবসময়ই চেয়েছে যে আমাদের সমাজের প্রতিটি অংশের মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে।” তারা বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্বমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে এবং সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কাজ করে। পাঠাও তাদের সেবা ভবিষ্যতে আরো দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছে। এ নিয়ে ইলিয়াসের একটি মন্তব্য উল্লেখযোগ্য: “আমরা বিশ্বাস করি, পাঠাও-এর সেবা শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও মানুষের দৈনন্দিন জীবন সহজ করতে সাহায্য করবে।”

শেষ কথা 

হুসাইন এম. ইলিয়াস এবং পাঠাও-এর এই যাত্রা শুধু একটি ব্যবসায়িক সাফল্য নয়, বরং এটি একটি সামগ্রিক উন্নয়ন। যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি শক্তিশালী অবদান রেখেছে। তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা, সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং সেবার মান উন্নয়ন করে তারা একটি নতুন ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করেছে যা অন্যান্য উদ্যোক্তাদের জন্য উদাহরণ স্বরূপ। আজকের বাংলাদেশে পাঠাও শুধু একটি রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং এটি প্রযুক্তির সাথে মানুষের জীবনকে সহজতর করার একটি উপায়।

“তথ্যসূত্র”

আপনি যেভাবে সোশাল মিডিয়া ম্যানেজার হতে পারেন

Previous article

সবুজ শক্তি: টেকসই উন্নয়নের নতুন যাত্রা

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *