কারেন্সী

চীনের ডিজিটাল ইউয়ানের আধিপত্যে কি চাপা পড়বে ডলার?

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তায়্যিবা

বিভিন্ন দেশের নিজস্ব সরকারী মুদ্রা চালু থাকলেও বিদেশ বিভূঁইয়ে মার্কিন ডলারই ভরসা। বিদেশভ্রমণ, আমদানী রপ্তানি ও আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সব কাজ হয়ে থাকে মার্কিন ডলারের মাধ্যমে। তাই এটিকে বলা হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা। এবং নিঃসন্দেহেই পুরো বিশ্বের ওপর এই নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক ধরণের প্রভাব আছে। 

যুগ পাল্টেছে। পূর্ব এশিয়ার দেশ চীন এখন নিজেকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে শক্তিশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কৌশলগতভাবে কাজ করে চলেছে। বর্তমানে দেশটির অর্থনীতি প্রায় ১৭.৭ ট্রিলিয়ন ডলার জিডিপি নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির খাতায় নাম লিখিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত মার্কিন ডলার বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৮৭% নিয়ন্ত্রণ করে, তবে চীনের নতুন ডিজিটাল মুদ্রা, “ডিজিটাল ইউয়ান” বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরও প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

ডিজিটাল ইউয়ান: কী এবং কেন?

ডিজিটাল ইউয়ান, যা ই-ইউয়ান নামেও পরিচিত, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইস্যু করা একটি ডিজিটাল মুদ্রা। এটি বর্তমান টাকার ডিজিটাল সংস্করণ, যা ডিজিটাল ক্যাশ উত্তোলন, ইলেকট্রনিক লেনদেন, এবং পিয়ার-টু-পিয়ার ট্রান্সফারে সক্ষম। বর্তমানে এটি চীনের ১৭টি প্রদেশ এবং ২৬টি শহরে চালু রয়েছে এবং এর ব্যবহারকারী সংখ্যা ২৬ কোটিরও বেশি।
চীন এই মুদ্রাকে দেশব্যাপী জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নিয়েছে, যেমন সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ডিজিটাল ইউয়ানে প্রদান এবং উৎসবকেন্দ্রিক প্রচারণার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মধ্যে এটি ছড়িয়ে দেওয়া। ২০২২ সালের প্রথম আট মাসে ডিজিটাল ইউয়ানের মাধ্যমে লেনদেন ছিল ১০০ বিলিয়ন ইউয়ান, যা ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৮ ট্রিলিয়নে ।

ডলারের বৈশ্বিক আধিপত্য

দশকের পর দশক ধরে, মার্কিন ডলার বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। এটি বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বৈশ্বিক ঋণের বাজারে প্রাধান্য বিস্তার করে। ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের প্রায় ৮৮% মার্কিন ডলারে সম্পন্ন হয়েছিল। এই আধিপত্য যুক্তরাষ্ট্রকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়, যেমন বিভিন্ন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা এবং অর্থ পাচার প্রতিরোধ।

তবে চীনের ডিজিটাল ইউয়ান ডলারের এই আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার ধারণা করছে। ডিজিটাল ইউয়ান যদি সফল হয়, তবে এটি ডলারের বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশ যেমন রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে ডলারের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ইউয়ানের দিকে ঝুঁকছে। পাশাপাশি, চীন এম-ব্রিজ নামে একটি ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে, যা এমনকি সুইফট সিস্টেমের বিকল্প হতে পারে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, ই-ইউয়ান ডলারের অবস্থান সরিয়ে দেবে, এমন সম্ভাবনা কম। কারণ এখন পর্যন্ত ডলার একটি শক্ত অর্থনৈতিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। তবে চীনের ডিজিটাল মুদ্রার আগমন বহুমুখী আর্থিক ব্যবস্থার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিজিটাল ডলার নিয়ে আলোচনা চললেও তা বাস্তবায়নে এখনও পিছিয়ে রয়েছে, যেই সুযোগ চীন কাজে লাগাতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ডলার যদি নিজস্ব শক্তিমত্তা ও ক্ষমতার ওপর আস্থা হারায়, সেটাই তার জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে।

“তথ্যসূত্র”

এনএলপি: যন্ত্র যখন হবে আপনার কথা বলার সঙ্গী

Previous article

নতুন যুগের প্রতিরক্ষা “জিরো ট্রাস্ট সিকিউরিটি”

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *