Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়শা মারিয়া |
জীবনের বিশেষ মুহুর্তগুলো ফ্রেমে আটকে রাখতে কে না চায়! স্মার্টফোন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যেমন- ইন্সটাগ্রাম, থ্রেড, ফেসবুক ইত্যাদি’র জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে একই তালে বাড়ছে ফটোগ্রাফি ক্যামেরার। ফটোগ্রাফি কিন্তু আপনার জীবনের মধুর স্মৃতিগুলি ফ্রেমবন্দী করে কষ্টের সময়ে ভাসাতে পারে সুখের দোলায় ।
বর্তমানে সৃষ্টিশীল কাজে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী তরুণ তরুণীর একাংশ ফটোগ্রাফি বা আলোকচিত্র ধারণ শখের বশে শুরু করলেও পেশা হিসেবেও গ্রহণ করা শুরু করেছে। তাই প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি শেখানোর জন্য বিভিন্ন কোর্স পদ্ধতি চালু হয়েছে, যেমন; সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা, স্নাতক এবং স্নাতক প্রোগ্রাম।
ফটোগ্রাফাররা তাদের কাজের স্বতন্ত্রতা ধরে রাখার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে ফটোগ্রাফি করেন। অর্থাৎ একেকজনের ফটোগ্রাফি একেক ধরনের প্রোগ্রাম অনুযায়ী নির্ধারিত করে ফেলেন, যেমন- কমার্শিয়াল ফটোগ্রাফার, পোর্টেইট ফটোগ্রাফার, ফাইন আর্টস এন্ড ফ্যাশন ফটোগ্রাফার, সাইন্টিফিক ফটোগ্রাফার, ফটো-সাংবাদিক, ওয়াইল্ড লাইফ ও অ্যাডভেঞ্চার ফটোগ্রাফার, ইভেন্ট ফটোগ্রাফারও ওয়েডিং ফটোগ্রাফার ।
দ্রুত নগদ অর্থ উপার্জনে পেশা হিসাবে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। প্রত্যেক ওয়েডিং ফটোগ্রাফারের চাহিদা ভিন্ন এবং কতগুলো ইভেন্ট তারা কভার করেছে এর উপর নির্ভর করে তারা তাদের চার্জ নির্ধারন করে । অভিজ্ঞতা ও জনপ্রিয়তার উপর নির্ভর করে একেক ফটোগ্রাফারের চার্জ একেক রকম। আজকের আলোচনায় ওয়েডিং ফটোগ্রাফির মাধ্যমে আপনি যেভাবে একটি ব্যবসা শুরু করতে পারেন তা নিয়েই কথা বলব।
ধরুন, আপনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি নিজের ব্যাগে থাকা পছন্দের ক্যামেরাটি দিয়ে যেকোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের চেহারায় ফুটে ওঠা হাসি-কান্না, বিস্ময় এবং প্রত্যেকটি সুন্দর মুহুর্ত নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে ও তা ফ্রেমবন্দী করতে পছন্দ করেন, তাহলে মনে করুন আপনাকে একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে আখ্যায়িত করাই যায়!
নিজের ওয়েডিং ফটোগ্রাফি বিজনেস এর ব্র্যান্ডিং কিংবা প্রোমোশন এর জন্য ক্লায়েন্টের ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করলে সকল প্রকার আইনি ঝামেলা এড়ানোর জন্য অবশ্যই আপনাকে তাদের অনুমতি নিতে হবে এবং ক্লায়েন্টদের সবসময় খুশি রাখতে সুন্দর সুন্দর কাজ উপহার দিতে হবে। এছাড়াও আপনার এই বিজনেস শুরু করতে হলে ব্যবসার সকল নিয়ম কানুন ও বৈধ পদ্ধতিসমূহ মেনে চলতে হবে। যেমন-
আপনার ওয়েডিং ফটোগ্রাফি ব্যবসা নিবন্ধন করুন
শুরুতেই আপনাকে বিজনেসটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আপনার ব্যবসার কাঠামোর উপর নির্ভর করবে ব্যবসায়িক কর বা সকল আইনি কার্যক্রম। আপনার বিজনেস এর ভবিষ্যতের জন্য এ বিষয়গুলোতে আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
কোম্পানির জন্য একটি ওয়েবসাইট চালু করুন
আপনার কোম্পানির সকল সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা থাকবে এমন একটি ওয়েবসাইট থাকতে হবে। তবে সকল প্রকার প্রাইভেসি পলিসি বজায় রেখে ওয়েবসাইটের শর্তাবলী আপনার সাইটটি মেনে চলছে কিনা তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ । কাজের উদ্দেশ্যে আপনার সাইটে ক্লায়েন্টের শেয়ার করা বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য (ইমেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য এবং এর মতো) সুরক্ষিত থাকবে এটি আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে। আপনার তোলা ছবি বা ভিডিও গুলো অন্য কোনো কোম্পানি বা লোক ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য সাধনে আপনার অনুমতি ব্যতিত ব্যবহার করলে আপনি আইনত ব্যবস্থা নিবেন এমন কোনো শর্ট নোট দিয়ে রাখতে পারেন।
নিজের সৃজনশীলতাকে রক্ষা করুন
নিজের সৃজনশীল চিন্তা ও সেই অনুযায়ী কাজ রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন ভিন্ন রকম কোনো ছবি তোলেন বা সৃজনশীল কিছু তৈরি করেন আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার অনুমতি ছাড়া কেউ আপনার কাজটি চুরি করে যেন ব্যবহার করতে না পারে। আপনি যখন নিজের কাজ নিয়ে সকল পরিকল্পনা আপনার ক্লায়েন্টস বা আপনার সঙ্গে যারা কাজ করছেন, যেমন মডেল বা ফটোগ্রাফার তাদের সাথে আলোচনা করবেন তখন চুক্তি করতে হবে আপনার অনুমতি ব্যতিত আপনার কোনো সৃষ্টি যেন কেউ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার বা কাজের বাইরের কারো সাথে শেয়ার না করে। নিজস্ব ব্র্যান্ড বজায় রাখতে ব্যবসার নাম বা লোগোর জন্য একটি ট্রেডমার্ক পাওয়ার ব্যবস্থা করুন।
গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে ব্যবসার প্রচার, আয়ের দিকে লক্ষ রাখা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার
কথায় আছে- “প্রচারেই ব্যবসার প্রসার”।
অর্থাৎ একটি ওয়েডিং ফটোগ্রাফি বিজনেস শুরু করতে এবং লাভজনকভাবে চালাতে হলে ব্যবসার প্রসার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিন্ন রকম প্রচারের কৌশল ও ক্লায়েন্টদের কে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ব্যবহার করতে পারেন। ব্র্যান্ডিং এর জন্য ব্যবহৃত ছবি, ব্যবসার সকল আইনি ডকুমেন্টস এবং একটি গোছানো ওয়েবসাইট থাকাই কিন্তু যথেষ্ট নয়। আপনার অস্তিত্ব জানতে এবং সহজেই যেন কেউ আপনার কাছে পৌছতে পারে এমন ব্যবস্থা করতে হবে।
আপনার বিজনেসটিকে নিজের পছন্দমত অবস্থানে পৌছাতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হতে পারে। অর্থাৎ বিজ্ঞাপন বা প্রচারণায় আপনার মডেল অথবা প্ল্যানিং এর জন্য লোক নিয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে। আপনি ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ এবং অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় নির্ধারণের কিছু টুলস ব্যবহার করতে পারেন।
মনে রাখবেন, আপনি যদি কঠোর পরিশ্রম করার জন্য প্রস্তুত থাকেন এবং আপনার ব্যবসার প্রসার ঠিকঠাক মত করতে পারেন তবে আপনি অবশ্যই সফল হবেন।
Comments