কোম্পানি ফরেনসিকস

দেশে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি আনলো “পালকি মোটরস”

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তায়্যিবা

মধ্যবিত্তের বাংলাদেশে একটি গাড়ির স্বপ্ন সবারই থাকে। স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের জন্য নিজস্ব গাড়ির তুলনা হয়না। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এর দাম। বিশেষ করে মধ্যবিত্তদের জন্য গাড়ি কেনা আকাশ ছোঁয়ার মতো। কিন্তু এবার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এগিয়ে এসেছে দেশীয় অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান ‘পালকি মোটরস লিমিটেড’। পালকি মোটরস এমন একটি গাড়ি তৈরি করেছে যা মিলবে মাত্র পাঁচ লাখ টাকায়। গত বছরের জানুয়ারিতে বাজারে এসেছে গাড়িটি।

বাংলাদেশ গাড়ি উৎপাদন শিল্প এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে ‘পালকি মোটরস’ এই পরিস্থিতি বদলে দিতে চায়। এমনকি দেশে প্রথমবারের মতো স্থানীয়ভাবে তৈরি বিদ্যুৎচালিত গাড়ি চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, যা দেশের পরিবেশবান্ধব পরিবহনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

শুরুর গল্প: স্বপ্ন থেকে বাস্তবায়নের পথে

পালকি মোটরসের যাত্রা শুরু হয়েছিল একটি ছোট গ্যারেজে। প্রতিষ্ঠানটির মালিকেরা প্রথমে উদ্বিগ্ন ছিলেন যে কীভাবে একটি ছোট ওয়ার্কশপের ভাড়া পরিশোধ করে কাজ শুরু করবেন। তবে, বহু খুঁজাখুঁজির পর কম খরচে একটি ওয়ার্কশপ ভাড়া করে তারা উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। শুরুর সময় তারা বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। তবে তারা থেমে যাননি।

পরবর্তীতে আরও বড় জায়গায় প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তরিত হয়ে ৮,০০০ বর্গফুটের একটি কারখানায় কাজ শুরু হয়, ধীরে ধীরে কাজের পরিমাণ বাড়তে থাকে। বিশাল কারখানায় ওয়েল্ডিং, পেইন্টিং, অ্যাসেম্বলি এবং পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা ছিল। এরপর আরও উন্নত মানের প্রোডাক্ট তৈরির লক্ষ্যে তারা স্ট্যাম্পিং মেশিনেরও ব্যবস্থা করে। পালকি মোটরসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা আল মোমিন বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ছিল সবার জন্য সাশ্রয়ী দামে শতভাগ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি বিদ্যুৎচালিত গাড়ি বাজারে আনা।“

পালকি মোটরসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা আল মোমিনের ছবি।

বাংলাদেশে ইলেকট্রিক গাড়ি শিল্পে নতুন দিগন্ত খুলছেন মোস্তফা আল মোমিন। | ছবি সংগৃহীত।

পালকি মোটরসের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্য

পালকি মোটরসের প্রধান পণ্য হলো চার চাকার বিদ্যুৎচালিত গাড়ি যাতে থাকে পরিবর্তনযোগ্য ব্যাটারি। এটি দেশের বাজারে অত্যন্ত জনপ্রিয়। গাড়ির প্রাথমিক দাম ৪.৯৯ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা দেশের বাইরে এবং ভেতরে সাধারণ মানুষের জন্য একটি সাশ্রয়ী বাহন হিসেবে দিন দিন পরিচিতি পাচ্ছে।

পালকির প্রোটোটাইপ এই গাড়ির ৪০% যন্ত্রাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হচ্ছে এবং বাকি অংশ চীন ও তাইওয়ান থেকে আমদানি করা হচ্ছে। মুস্তাফা আল মোমিন জানান, একজন বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী এবং উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি মনে করেন, ইঞ্জিনবিহীন বিদ্যুৎচালিত গাড়ি স্থানীয় বাজারে ধীরে ধীরে আরও সাশ্রয়ী ও কার্যকর হবে।

পালকি মোটরস এর একেকটি গাড়ি বর্তমানে ৬০ ভোল্টেজ ও ১০০এএইচ ক্ষমতাসম্পন্ন লেড অ্যাসিড ব্যাটারির উপর নির্ভরশীল, যা একবার চার্জ করলে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত চালানো যায়। ব্যাটারি চার্জ করতে  সময় লাগে ৬-৮ ঘণ্টা। গাড়ির একেকটি ব্যাটারি প্রায় ৩৬,০০০+ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে। এতে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয় কেবল ১.৭৩ টাকা।  গাড়ির গতি ঘণ্টায় ৬০ কিমি হওয়ায় এটি বর্তমানে স্থানীয় মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে দাবি করেছেন মোমিন। পালকি মোটরস এরই মধ্যে প্রায় ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে।

প্রতিষ্ঠাতা মুস্তাফা আল মোমিন জানান, , তেলের গাড়িতে খরচ বেশি। ডিজেল বা অকটেনচালিত গাড়িতে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হয় ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত। আর সিএনজিতে প্রতি কিলোমিটার খরচ হয় সাড়ে চার টাকা। কিন্তু আমাদের গাড়িতে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হয় মাত্র ৩০-৫৫ পয়সা, এসি চালালেও এই খরচ হয়। যখন আমরা দুটো গাড়ি বানাচ্ছি, একটা গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ স্টকে রাখছি। ঢাকার বাইরে সব জেলায় আমরা প্রত্যেক গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ সহজলভ্য করছি।

পালকি মোটরসের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্যের প্রদর্শনী।

টেকসই পরিবেশের জন্য পালকি মোটরসের প্রযুক্তিগত সমাধান। | ছবি সংগৃহীত।

দেশের জন্য গর্ব ও অনুপ্রেরণা

পালকি মোটরস দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি অনুপ্রেরণা। দেশের মাটিতে তৈরি গাড়ি দেশের জন্য গর্বের। নিজেদের শ্রম, মেধা এবং উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব যানবাহনের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে পালকি মোটরস। এটি দেশের ভবিষ্যৎ পরিবহন ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়।

মোস্তফা আল মোমিন বলেন, শুরুতে পরিকল্পনা থাকলেও পর্যাপ্ত মূলধন না থাকায় বেশিদূর এগোতে পারিনি। পরে বৈদ্যুতিক প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতকোত্তর করতে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাই। তবে ইচ্ছা ছিল পড়াশুনা শেষে দেশে আসবো। একটা প্লাটফর্ম করার স্বপ্ন ছিল। পুলিশ স্টেশন ও ডাম্পিংয়ে পড়ে থাকা গাড়ি নিয়ে প্রথমে কাজ শুরু করি। এরপর ২০২২ সালে পুরোপুরিভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ির কাজে মনোনিবেশ করি। ফলে তৈরি হয় আজকের পালকি।

“তথ্যসূত্র”

অল্প বিনিয়োগে কটন ক্যান্ডি ব্যবসা শুরু করার উপায়

Previous article

আপনি যেভাবে সোশাল মিডিয়া ম্যানেজার হতে পারেন

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *