কোম্পানি ফরেনসিকস

‘পেপারফ্লাই’ অধ্যায়ের সমাপ্তি

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়েশা আক্তার

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোকে থার্ড পার্টি লজিস্টিকস (টিপিএল) সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান- পেপারফ্লাই  ২০২৩ সালে তাঁদের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন। দেশের ই-কমার্স ইকোসিস্টেমের অপরিহার্য চাহিদা হলো – লাস্ট মাইল ডেলিভারি (গ্রাহকের দ্বারপ্রান্তে পণ্য সরবরাহের সেবা)। পেপারফ্লাই এর মতো প্রতিষ্ঠান এই ক্ষেত্রে জোরালো অবদান রেখেছে। আর তাই তহবিল সংকটের কারণে পেপারফ্লাইয়ের বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের ই-কর্মাস খাতের জন্য এক বিশাল ধাক্কা। আজকে আমরা এই প্রতিষ্ঠানের উত্থান-পতন  সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

উত্থান পতন

২০১৬ সালে স্থানীয় চার উদ্যোক্তার হাত ধরে যাত্রা শুরু করে পেপারফ্লাই। যাত্রা শুরুর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই ২০২১ সালে ভারতের টিপিএল ব্যবসার জায়ান্ট ইকম এক্সপ্রেস থেকে ১০০ কোটি টাকার শেয়ার বিনিয়োগ পায় পেপারফ্লাই। এই বিনিয়োগ পাওয়ার পরেই পেপারফ্লাই গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ ও সংগ্রহ (পিকআপ সার্ভিস)- উভয় ধরনের সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করে।

পেপারফ্লাই-এর উত্থান ও পতনের স্মরণীয় অধ্যায়। | ছবি সংগৃহীত।

কুরিয়ার সার্ভিসকে স্মার্ট লজিস্টিকসে রূপান্তরের এই যাত্রায় ২০২২ সালের এপ্রিলে আরও ১০২ কোটি টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পায় তারা। কিন্তু, এরমধ্যে বৈশ্বিক বিনিয়োগের পরিবেশে ব্যাপক পরিবর্তন আসায় সেই বিনিয়োগ তারা পায় না। এই বিশাল বিনিয়োগের পর পেপারফ্লাইয়ের প্রায় ৮২ শতাংশ শেয়ারের মালিক হয় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইকম এক্সপ্রেস। 

প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হওয়ার আগে সারা দেশে পেপারফ্লাইয়ের ৩৫ হাজারের বেশি নিবন্ধিত মার্চেন্ট ছিলো। এছাড়াও ফুডপান্ডা, দারাজ, সিঙ্গার, গ্রামীণফোন, রবি, সাজগোজ ও আড়ংয়ের মতো বড় গ্রাহকও তাদের ছিলো। প্রায় ১২৫টি সরবরাহকেন্দ্র থেকে দেশের ৪৯১টি উপজেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বন্ধ হওয়ার আগে পেপারফ্লাইয়ের কর্মীসংখ্যা প্রায় এক হাজার ছিলো।

পেপারফ্লাইয়ের বন্ধের পেছনে জড়িত নানা কারণের বিশ্লেষণ। | ছবি সংগৃহীত।

পেপারফ্লাইয়ের বন্ধের পেছনে নানা কারণ জড়িত ছিলো। যেমন, রাশিয়া – ইউক্রেন  যুদ্ধ শুরুর পরে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় স্টার্টআপে বিনিয়োগ সংকট দেখা যায়। আবার দেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজ- এর সেবাদাতা রেডএক্স। পেপারফ্লাইকে প্রতিনিয়ত টিকে থাকার জন্য রেডএক্স-এর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছিলো। শুধু তাই নয়, জালিয়াতির ঘটনায় বন্ধ হওয়া ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির কাছে লজিস্টিক সেবা বিল বাবদ ৭ কোটি টাকার বেশি পেতো  পেপারফ্লাই। যে পাওনা টাকা পরিশোধ না হওয়ায় পেপারফ্লাইকে সমস্যায় পড়তে হয়।

সংশ্লিষ্টদের মতামত 

কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিকভাবে তহবিল–সংকটে পড়েছে দেশের অনেক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। পেপারফ্লাইয়ের কার্যক্রম বন্ধ হওয়া ও সেই ধারাবাহিকতার অংশ। এবিষয়ে বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, পাঠাও ও স্টিডফাস্টের মতো লজিস্টিকস কোম্পানিরা রাজধানীর বাইরে পণ্য সরবরাহে ১২০-১৪০ টাকা চার্জ করতো। কিন্তু দারাজের মতো গ্রাহক ধরার লক্ষ্যে তৈরি হওয়া প্রতিষ্ঠানের সহযোগী হওয়ার জন্য আগ্রাসী প্রতিযোগী মেতে উঠে পেপারফ্লাই ও রেডএক্স এর মতোন প্রতিষ্ঠান ডেলিভারি চার্জ ৭৫-৮০ টাকায় নামিয়ে আনে।

কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিকভাবে তহবিল–সংকটে পড়েছে দেশের অনেক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। | ছবি সংগৃহীত।

এদিকে গত বছরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর, পণ্য ডেলিভারির খরচও বাড়ে। কিন্তু লজিস্টিকস প্রতিষ্ঠানগুলো সে অনুযায়ী চার্জ বাড়াতে পারেনি, ফলে তাদের হাতে নগদ অর্থ কমতে থাকে বলেও জানান মাশরুর। পেপারফ্লাই এর কুরিয়ার ও কার্গো শাখার সাবেক প্রধান আহসানুল হক মো. শামীম বলেন, ‘পেপারফ্লাইয়ের প্রোডাক্ট-মার্কেট ফিট (সঠিক বাজারে সঠিক পণ্য সরবরাহের) সমস্যাও ছিল। ফলে বাজারে টেকসই প্রভাব বিস্তার করতে না পারার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও উচ্চকাঙ্খী প্রতিষ্ঠানটি এজন্য চড়া মূল্য দিয়েছে।’ 

দেশের ই-কমার্স খাত ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ এর মতো নানা প্রতারণামূলক প্রতিষ্ঠানের কারণে বেশ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সে ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে পেপারফ্লাইয়ের মতো কোম্পানির বন্ধ হওয়ার ঘোষণা সবাইকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। দেশের এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক মডেলভিত্তিক কোনো ত্রুটি আছে নাকি সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা উচিত।

“তথ্যসূত্র”

পারকিনসনের সূত্র: কাজের সময় বাড়লে কি কর্মদক্ষতা বাড়ে?

Previous article

শপআপ: দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রসারের অন্যতম মাধ্যম।

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *