বিসনেস স্ট্রাটেজিস

স্টারবাক্সের নতুন নিয়ম : কিছু কিনুন অথবা চলে যান

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়েশা আক্তার

আপনি কি বন্ধুদের সাথে দেখা করতে, নিরিবিলি পরিবেশে কাজ করতে কিংবা বিশ্রামাগার ব্যবহার করতে স্টারবাক্সে যেতে চাচ্ছেন? আচ্ছা, কেমন হবে যদি আপনাকে ফ্রিতে একবার কফি রিফিল করার সুযোগ করে দেয়? আবার যদি অর্ডার না করার কারণে আপনাকে কফিশপ থেকে বের করে দেয়? নিশ্চয়ই এই বিপরীত মন্তব্য শুনে বেশ অবাক হচ্ছেন। আসলে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আপনাকে শুধু জানতে হবে স্টারবাক্সের নতুন নীতি সম্পর্কে।

ঠিক নতুন নয়, স্টারবাক্স মূলত তাদের পুরোনো নীতিতে ফিরে গেছে। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এই কফিহাউস চেইনশপ তাদের নীতি পরিবর্তন করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী ২৭ জানুয়ারি থেকে যারা কিছু কিনবেন না, তাদের ক্যাফে বা টয়লেট ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ, আপনি যদি স্টারবাক্সের বসে সময় কাটাতে চান কিংবা জরুরি প্রয়োজনে ওয়াশরুম ব্যবহার করতে চান, তবে আপনাকে প্রথমে অর্ডার দিতে হবে।

স্টারবাক্সের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এই কফিহাউস চেইনশপ তাদের নীতি পরিবর্তন করেছে।

‘ব্যাক টু স্টারবাক্স’ কৌশল

স্টারবাক্সের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং সিইও ব্রায়ান নিকোল দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন নিয়ম তৈরি করেন। গত ৯ জানুয়ারী তিনি একটি বিবৃতিতে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করতে, বিক্রয় উত্তোলন এবং আরও অনেক কিছুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই নীতির কথা জানান।  

এই নতুন সিদ্ধান্তকে স্টারবাক্সের ব্যবসা পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনার অংশ বলা হচ্ছে। ব্রায়ান নিকোল মূলত চিপটলির মত মেক্সিকান ফাস্ট ফুড চেইন চালানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে স্টারবাক্সে এসেছেন এবং তার মূল লক্ষ্য হলো কাস্টমার অভিজ্ঞতা উন্নত করা। নতুন নিয়ম অনুসারে, শুধুমাত্র কিছু কেনার পর গ্রাহকরা ক্যাফেতে বসতে পারবেন, এবং যদি কেউ এই নিয়মের বিরুদ্ধে চলে, তাহলে তাকে বের করে দেওয়া হবে বা প্রয়োজনে পুলিশকেও ডাকা হবে। 

স্টারবাক্সের এই পরিবর্তিত নীতিতে গ্রাহকেরা নতুন বেশ কিছু সুবিধাও ভোগ করতে পারবেন। যেমন- যদি গ্রাহকরা আউটলেটে বসে কফি পান করে, তবে তারা একবার গরম বা বরফযুক্ত কফির একটি ফ্রি রিফিল পাবেন। শুধু তাই নয়, নতুন নিয়ম অনুসারে বৈষম্য বা হয়রানি, বাইরের অ্যালকোহল গ্রহণ, ধূমপান, ভ্যাপিং, ড্রাগ ব্যবহার এবং প্যানহ্যান্ডলিং স্টারবাক্সে নিষিদ্ধ। কোম্পানির পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে চালু করা এই নীতিকে অনেকেই ‘ব্যাক টু স্টারবাক্স’ কৌশল বলে মনে করছেন।

স্টারবাক্সের নতুন নিয়ম" ও গ্রাহক প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যেই এসেছে ‘ব্যাক টু স্টারবাক্স’ কৌশল। জানুন এই উদ্যোগের পেছনের কারণ ও পরিকল্পনা।

বাতিল হওয়া ‘ওপেন ডোর’ নীতি 

স্টারবাক্সের ‘ওপেন ডোর’ নীতিটি খুব বেশিদিন আগের নয়। প্রায় সাত বছর আগে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই কফি চেইন অতিথিদের কিছু সুবিধা ভোগ করার অনুমতি দিয়েছিল। ঘটনাটি ২০১৮ সালের। ১২ এপ্রিল ডন্টে রবিনসন এবং রাশোন নেলসন নামের দুইজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি ফিলাডেলফিয়ার স্টারবাক্স চেইনের একটি দোকানে গিয়েছিলেন। তারা একটি ব্যবসায়িক বৈঠকের জন্য তৃতীয় ব্যক্তির সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাই তখনো খাবার বা পানীয়ের অর্ডার দেন নি।

তাদের মধ্যে একজন টয়লেট ব্যবহার করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু খাবার অর্ডার না দেওয়ায় স্টোর ম্যানেজার তাদের চলে যেতে বলেছিলেন। তারা আরেকজন বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিলো দেখে ম্যানেজারের চলে যাওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের দুইজনকে গ্রেফতার করেন। ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হলে  সমালোচকরা জাতিগত প্রোফাইলিংয়ের চেইনকে অভিযুক্ত করেছে এবং বয়কটের আহ্বান জানিয়েছিলো।

পরবর্তীতে স্টারবাক্স এবং কোম্পানির প্রাক্তন সিইও কেভিন জনসনের তাদের কাছে ক্ষমা চান। ঝামেলা নিষ্পত্তি শেষে কোম্পানিটি ‘ওপেন ডোর’ নীতি প্রকাশ করে। যার ফলে গ্রাহকেরা অর্ডার করা ছাড়াই আউটলেটে বসতে পারতেন, ওয়াশ রুম ব্যবহার করতে পারতেন।

স্টারবাক্সের নতুন নিয়মের অংশ হিসেবে বাতিল করা হয়েছে 'ওপেন ডোর' নীতি। জানুন এই পরিবর্তনের পেছনের কারণ ও এর প্রভাব।

শেষ কথা

স্টারবাক্স ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বয়কট সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। কোম্পানিটি যাতে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে তাই প্রধান নির্বাহী ব্রায়ান নিকোলকে গত বছর নিযুক্ত করা হয়। তিনি মেনু এবং দোকানগুলোর অভিজ্ঞতা পরিবর্তন করার মাধ্যমে ব্যবসাটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চেষ্টা করছেন। আর তারই অংশ হিসেবে তিনি এই নতুন নিয়ম চালু করেছেন। কোম্পানি থেকে জানানো হয় যে, নতুন নিয়মগুলো প্রতিটি দোকানে প্রদর্শিত হবে এবং কেউ যদি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে, তবে কর্মীরা তাকে চলে যেতে বলবেন। প্রয়োজনে কর্মীরা পুলিশকে কল করতে পারবেন।

“তথ্যসূত্র”

কীভাবে খেলনার দোকান দিবেন অনলাইনে কিংবা অফলাইনে।

Previous article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *