বিজনেস আইডিয়াস

স্ট্রিটফুড ব্যাবসার শুরু থেকে শেষ স্ট্রিটফুডের ব্যবসা শুরু করতে জেনে নিন কিছু ‍টিপস এবং ট্রিকস

0
ছবি: সংগৃহীত
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির

স্ট্রিটফুডের প্রচলন বাংলাদেশে খুববেশি দিন না হলেও বিশ্বে এর আবির্ভাব ঘটেছে অনেক আগে।প্রথমবারের মতো প্রাচীন গ্রিসে স্ট্রিটফুডের প্রচলন শুরু হয়। তারপর তা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সেকালে শুধু নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীদের অল্পমূল্যে খাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্যে উদ্ভব হয়েছিল স্ট্রিটফুডের। সেখানে খাবার হিসেবে বিক্রি হতো ভাজা মাছ। তবে সময় পাল্টেছে। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে স্ট্রিট ফুডের ব্যবসা রমরমা হয়ে উঠেছে। ২০০৭ সালে জাতিসংঘ তাঁদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বিশ্বে প্রতিদিন ২৫০ কোটিমানুষ স্ট্রিটফুড খেয়ে থাকে।

স্ট্রিট ফুড হিসেবে বাংলাদেশে ফুসকা,চটপটি ,ঝালমুড়ির মতো খাবারের সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে। তবে বিদেশি কুইজিনের খাবারগুলোও স্ট্রিটফুড হিসেবে অনেকেরই পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।দেশীয় খাবারের মধ্যে ভাত, মাছ, মাংস যেমন বিক্রি হয় তেমনি বিক্রি হয় পিজ্জা, বার্গার, ফ্রাইড রাইসও কফিসহ অনেক ধরনের খাবার।

বর্তমানে আমাদের দেশে স্ট্রিটফুডের ব্যবসা রমরমা হওয়ার  একটি অন্যতম কারণ ক্রেতারা রেস্টুরেন্টে অতিরিক্ত টাকা খরচ না করে স্বল্পমূল্যে মানসম্মত ও সুস্বাদু খাবার রাস্তার পাশের দোকানগুলোতেই পাচ্ছেন। সহনীয় দাম, স্বাদ ও গন্ধে দিশেীয় এক ঐতিহ্য খুঁজে এই খাবারগুলোতে। প্রায়শই রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে ভোজনরসিকদের ভিড় দেখা যায়। তাই  অনেক তরুণ তাদের ভবিষ্যৎ দেখছেন এই ব্যবসায়।

 পৃথিবীর প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে অটোম্যান সাম্রাজ্য প্রথমবারের মতো স্ট্রিটফুড ব্যবসা পদ্ধতিগতভাবে পরিচালনার জন্য আইন পাশ করে। তবে  বাংলাদেশে স্ট্রিটফুডের ব্যবসা নিয়ে দেশের আইনে স্পষ্ট কোন নীতিমালা নেই। তাই এই ব্যবসায় আগ্রহীদের বাড়তি কোনো আইনি ঝামেলা না পোহাতে হবে না।চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আগ্রহী যে কেউই এই ব্যাবসা শুরু করে কাঙ্খিত সফলতা পেতে পারেন। কিভাবে শুরু করবেন এই ব্যবসা চলুন জেনে নেয়া যাক।

ফুডকার্ট বা ভ্যান তৈরি

এখানে রেস্তোরাঁর তুলনায় অনেক কম বিনিয়োগ করতে হয়। সর্বপ্রথম যে জিনিটি দরকার হবে সেটি হলো একটি ভালো মানের ফুডকার্ট। ২০-২৫ হাজার টাকায় ফুডকার্ট বা ভ্যান তৈরি করা যায়। কিছু  চেয়ার, রান্নার যন্ত্রপাতি, খাবার রাখার পাত্র, প্যাকেজিং সামগ্রী,খাবার তৈরিতে ব্যবহারিত কাচা মাল এবং বিভিন্ন উপকরণ এবং  দু’-একজন কর্মচারী দিয়ে নিয়ে মাত্র ৩০-৪০ হাজার টাকায় এ ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। 

জায়গা নির্বাচন

স্থান নির্বাচন: গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে এবং বিক্রয় বাড়ানোর জন্য একটি সফল স্ট্রিট ফুড ব্যবসার জন্য আদর্শ স্থান নির্বাচন করা।

আপনার রাস্তার খাবার ব্যবসার জন্য নিখুঁত অবস্থান নির্বাচন করা। | ছবি: সংগৃহীত

এক্ষেত্রে আপনার ভাবতে হবে আপনার কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক কারা। যদি আপনার লক্ষ্য থাকে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা হবে আপনার স্ট্রিটফুডের প্রধান গ্রাহক তবে আপনি কোন স্কুল কলেজের পাশে আপনার ফুডকার্ট স্থাপন করতে পারেন। তবে এমন জায়গা নির্বাচন করা ভালো যেখানে শিক্ষার্থী বাদেও আরও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আপনার দোকানে আসে।এর ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও আপনার ব্যবসা চলবে। 

মেনুতে কি রাখবেন

শুরুতে আপনি যে কোন একটি কিংবা দুইটি আইটেম দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে আপনার সময়ের সাথে সাথে মেনুকে সমৃদ্ধ করতে হবে। যেমন আপনি মেনুতে বার্গাররের সাথে কোল্ড কফি রাখতে পারেন। এবং ক্রেতাদের মতামতের উপর ভিত্তি করেও মেনুতে নতুন খাবার যোগকরতে পারেন। তবে সব খাবারের দাম হতে হবে সাশ্রয় মূল্যে। 

মানসম্পন্ন খাবার

স্ট্রিটফুডের মানসম্পন্ন খাবারের ছবি।

স্ট্রিটফুডের মানসম্পন্ন খাবার যা সবাই পছন্দ করে। | ছবি সংগৃহীত।

আমাদের নগরীগুলোর সড়ক ও অলিগলিতে বিক্রি হওয়া খাবারগুলো ঢেকে রাখারবালাই নেই বললেই চলে। ওই খাবারগুলোয় সারাক্ষণ ধুলোবালি পড়ছে, নোংরা পানি ও কাপড় দিয়ে চলে সব ধরনের ধোয়া-মোছা, একই তেল দিয়ে দিনের পর দিন খাবার তৈরি করা হয়। তাই অনেক সময় রাস্তার পাশের খাবার অনেকের পেট খারাপ হয়ে থাকে।তাই আপনার  ফুডকার্টে থাকা প্রতিটি খাবার হতে হবে মান সম্পন্ন এবং সুস্বাদু। খাবার তৈরি থেকে পরিবেশন সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। অবশ্যই খাবার যোগ্য পানি আপনার কাছে রাখতে হবে। একই ভোজ্য তেলে দিয়ে একাধিক বার খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা যাবেনা। তেলে রান্না খাবার ৬ ঘণ্টা পরে আর ক্রেতাদের কাছে পরিবেশন করা যাবেনা এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। খাবার দেখতে কেমন সেদিকে রাখতে হবে বিশেষ নজর।

প্রচার প্রচারণা

কথায় আছে প্রচারেই প্রসার। পাশাপাশি এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ তাই আপনার ব্যবসার প্রসার ঘটাতে চাইলে ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারমূলক ভিডিও ছাড়িয়ে দিতে পারেন। আমাদের দেশে উৎসব আসলেই ব্যবসায়িকরা সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দেয়। এই পরিস্থিতিতে আপনি চাইলে উৎসব পার্বণে বিভিন্ন মূল্য ছাড়ের মাধ্যমে গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জন করতে পারেন।

 বিভিন্ন সমস্যার সমাধান

এই ব্যবসায় নামতে চাইলেই আপনি প্রথমে যে সমস্যায় পরবেন তা হলো, খাবার  তৈরিতে। এক্ষেত্রে আপনি উত্তম সমধান হলো কোন ফুডকার্টে ১-২ মাস প্রশিক্ষণ নেওয়া। অথবা আপনি এমন কাউকে কাজে রাখতে পারেন যে রান্নার দিকটা সামলাবে। কেউ যদি দোকান পরিচালনা করার ক্ষেত্রে চাঁদা চায় তবে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করতে হবে। অবশ্যই খাবার যোগ্য পানি আপনার কাছে রাখতে হবে। এমন কোন জায়গায় ফুডকার্ট স্থাপন করা যাবেনা যেখানে পর্যাপ্ত আলো নেই প্রয়োজনে নিজ উদ্যোগে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেন, খাল, ডাস্টবিনের পাশে খাবারের পসরা সাজানো বন্ধ করতে হবে। 

আপনার ব্যবসায় উন্নতির জন্য ক্রেতা ধরে রাখা

ক্রেতা দের ধরে রাখতে সময়ের সাথে সাথে আপনার মেনুতে পরিবর্তন আনতে হবে। সুন্দর প্যাকেজিং এর ব্যবস্থা রাখতে হবে যেন ক্রেতারা খাবার বাড়ি নিয়ে যেতে স্বছন্দ বোধ করে। খাবার তৈরির সময় এবং পরিবেশনের সময় হাতে প্লাস্টিকের গ্লাভস পরতে পারেন। এমনকি গ্রাহকদেরও খাবার সময় পলিথিনের গ্লাভস  দিতে পারেন যেন তাঁদের জামা-কাপড় এবং হাত কাবারে মেখে না যায়। এভাবেই স্বল্প বাজেটের মধ্যে নিজের এবং অন্যার ভাগ্য বদল করতে বেছে নিতে পারের স্ট্রিটফুডের ব্যবসা ব্যবসাকে।

“তথ্যসূত্র”

কনটেন্ট ক্রিয়েশনঃ ঘরে বসে আয়ের সহজ উপায়

Previous article

শূন্য থেকে শিল্প সাম্রাজ্য: ধীরুভাই আম্বানির অবিশ্বাস্য সফলতার গল্প

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *