Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়েশা আক্তার |
নতুন বছর আসলেই আমরা সকলে কোনো না কোনো রেজোলিউশন করে থাকি। বেশিরভাগ সময়েই আমরা সেসব পূরণ করতে পারি না। আচ্ছা, কেমন হয় যদি আমরা ২০২৫ শেষ হওয়ার আগেই অনলাইনে ছোটোখাটো ব্যবসা শুরু করি? শুনে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন। ভাবছেন, আমার তো পুঁজি বা মূলধন নেই। তাহলে আমি কিভাবে ব্যবসা করবো?
এর উত্তর হলো আজকে আমরা এমন কিছু অনলাইন ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করবো, যেগুলো শুরু করতে আপনার বড় কোনো মূলধন বা পুঁজির প্রয়োজন পড়বে না। অনেক ব্যবসা আপনি মূলধন ছাড়াই করতে পারবেন। আপনার প্রয়োজন হবে স্কিলের এবং ধৈর্য্যের। চলুন আমরা এমন ৫টি অনলাইন ব্যবসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি যার মাধ্যমে আমরা স্বল্প পুঁজিতে, অল্প সময়েই সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
১. কাস্টমাইজড টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করুন
আপনার যদি ফ্যাশন সচেতন হয়ে থাকেন, তবে আপনি কাস্টমাইজড টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করতে পারেন। বর্তমান বাজারে টি-শার্টের চাহিদা বিশেষ করে কাস্টমাইজড টি-শার্টের চাহিদা অনেক বেশি। যদি আপনি ডিজাইন করতে পারেন বা আপনার মধ্যে সৃজনশীলতা থাকে, তবে আপনি সহজেই এই ব্যবসায় সফলতা লাভ করতে পারবেন। এই ব্যবসা শুরু করার জন্য খুব বেশি মূলধনের প্রয়োজন হয় না। আপনি স্বল্প মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

কাস্টমাইজড টি-শার্ট ব্যবসা অনলাইনে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, যা ৫টি সেরা অনলাইন ব্যবসার অন্যতম। | ছবি সংগৃহীত।
আপনি চাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পেইজ খুলে প্রাথমিকভাবে আপনার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি প্রিন্ট- অন- ডিমান্ড ব্যবসা নীতি অনুসরণ করতে পারেন। আপনার ব্যতিক্রমী ডিজাইন এবং ভালো মানের কাপড় আপনাকে তাড়াতাড়ি মানুষের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। একইসাথে আপনি চাইলে দারাজ, অ্যামাজনের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত হতে পারেন । যা আপনাকে ক্রেতাদের খুব কাছে যেতে সাহায্য করবে। এই ব্যবসার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আপনাকে প্রতিনিয়ত নতুনত্ব নিয়ে আসতে হবে। আপনি যদি ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনতে না পারেন, তবে আপনার ব্যবসা খুব বেশি এগোতে পারবে না। একইসাথে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান বা পেইজের থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখার জন্য ভালো মানের পণ্য সরবারহের পাশাপাশি মূল্যের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
২. অনলাইনে আর্ট বিক্রির ব্যবসা শুরু করুন
বর্তমানে অনলাইনে অনেক পেইজ রয়েছে যারা ক্যানভাসে আঁকা পোর্টরেট ছবি, ক্যালিগ্রাফি বিক্রি করে। যদি আপনার এ বিষয়ে দক্ষতা থাকে, তবে আপনিও এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। প্রিয়জন কিংবা বন্ধু-বান্ধবের জন্মদিনে কিংবা যেকোনো উৎসবে পোর্টরেট ছবি উপহার দেয়া এখন বেশ ট্রেন্ডে রয়েছে। আবার অনেকে নিজেদের ঘর সাজানোর জন্য ক্যালিগ্রাফি কিংবা আর্ট অর্ডার দিয়ে থাকেন। কাস্টমাইজড করে নিজের পছন্দমতো আর্ট অর্ডার করার সুযোগ থাকায় বর্তমানে এই ধরনের পেইজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
আপনি চাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে নিজের একটি পেইজ খুলে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এর জন্য কোনো মূলধন প্রয়োজন হয় না বললেই চলে। কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী তার পছন্দের ক্যানভাসে আপনি তাঁর পোর্টরেট ছবি, আর্ট কিংবা ক্যালিগ্রাফি করে দিবেন। অনেকে শখের বসে এই কাজ শুরু করে পরবর্তীতে তা ব্যবসায় রুপান্তর করেন। এই ব্যবসার জন্য প্রয়োজন আপনার আঁকাআঁকির দক্ষতা এবং সৃজনশীলতা।

অনলাইনে আর্ট বিক্রির ব্যবসা সৃজনশীল উদ্যোক্তাদের জন্য দারুণ সুযোগ, যা ৫টি সেরা অনলাইন ব্যবসার অন্যতম। | ছবি সংগৃহীত।
৩. ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরু করুন
আপনি চাইলে ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরু করতে পারেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্ট-টাইম কিংবা ফুল টাইম জব হিসেবে অনেকের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং এর কিন্তু নানা বিভাগ রয়েছে। আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনে ভালো হন, আপনি তা করতে পারেন। চাইলে লেখালেখি, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট সহ নানা ধরনের কাজ করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য বিশ্বব্যাপী ‘ফিবার’ বেশ জনপ্রিয়। আপনি চাইলে সেখানে দক্ষতা অনুযায়ী বিভাগ নির্ধারণ করে অ্যাকাউন্ট খুলে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। আবার কারো যদি দক্ষতা না থাকে কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং করার ইচ্ছা থাকে, তারা কিন্তু সহজেই অনলাইন থেকে নানা ফ্রি কোর্স করে প্রয়োজনীয় স্কিল শিখে নিতে পারেন। ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য যে দক্ষতার প্রয়োজন তা আপনি চাইলেই সহজে আয়ত্ত করে নিতে পারবেন। তবে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা আয়ত্ত করতে হবে এবং ধৈর্য্য সহকারে কাজ করতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আপনি নিজের সুবিধামতো সময়ে কাজ করতে পারবেন। আপনি যদি একজন ভালো ফ্রিল্যান্সার হতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই কাজের প্রতি ডেডিকেটেড থাকতে হবে এবং ডেডলাইন অনুসরণ করে কাজ শেষ করতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিং কাজ এখন ঘরে বসেই আয় করার অন্যতম সহজ উপায়, যা ৫টি সেরা অনলাইন ব্যবসার মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। | ছবি সংগৃহীত।
৪. নিজের পডকাস্ট শুরু করুন
বর্তমানে পডকাস্ট সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। পডকাস্টে সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে আলোচনা করা হয়। যেখানে তারা নিজেদের মতামত শেয়ার করেন এবং বিভিন্ন রেফারেন্স দিয়ে সেই বিষয়কে দর্শকদের কাছে সহজভাবে উপস্থাপন করেন। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পডকাস্ট থেকে ভালো আয় করা যায়। আপনি চাইলে নিজের বাসায় একটি রুম সেট আপের মাধ্যমে পডকাস্ট চালু করতে পারবেন।
পডকাস্ট শুরু করতে আপনার যা দরকার তা হলো- ভিডিও ক্যামেরা, একটি উচ্চ মানের মাইক্রোফোন, অডিও রেকর্ডিং সফটওয়্যার, কল রেকর্ডিং সফটওয়্যার ইত্যাদি। পডকাস্ট শুরু করতে হলে আপনাকে কিছু মূলধন বিনিয়োগ করতে হবে যার সম্পূর্ণটাই বিভিন্ন জিনিস বা যন্ত্র কেনা-কাটাতে খরচ হবে। স্ট্যাটিস্কা থেকে পাওয়া তথ্যমতে,৭৯% আমেরিকান পডকাস্ট শুনেন। বাংলাদেশেও দিনদিন এই অডিয়েন্সের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনি যদি পডকাস্ট শুরু করতে চান, তাহ লে সবার আগে আপনাকে ইউটিউবে একটি চ্যানেল খুলতে হবে। একইসাথে ফেসবুকে পেইজ ওপেন করতে হবে। তাহলে আপনি দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন। তবে সফল হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ভালো মানের কনটেন্ট তৈরি করতে হবে।
৫. ইনফ্লুন্সার হিসেবে যাত্রা শুরু করুন
বর্তমানে সারাবিশ্বে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং একটি বিশাল শিল্পে পরিণত হয়েছে। ইনফ্লুন্সাররা তাদের পেইজ কিংবা আইডি থেকে যেমন আয় করছেন, তার থেকে বেশি আয় করেন নানা ধরনের ব্র্যান্ড প্রমোশনের মাধ্যমে। ছোট থেকে বড় সকল ধরনের ব্র্যান্ডই এখন ইনফ্লুন্সারের মাধ্যমে তাদের পণ্য মানুষের কাছে তুলে ধরেন। তারা মূলত ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মধ্যকার সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেন।

ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে যাত্রা শুরু করে অনলাইনে আয়ের সম্ভাবনা তৈরি করা যায়, যা ৫টি সেরা অনলাইন ব্যবসার অন্যতম। | ছবি সংগৃহীত।
ইনফ্লুন্সার হিসেবে যাত্রা শুরু করলে আপনি নিজের ফেইসভ্যালু তৈরি করতে পারবেন। বাংলাদেশের অনেক ইনফ্লুন্সার নিজেদের ডেডিকেটেড অডিয়েন্স তৈরি করার পরে নিজস্ব ব্যবসাও শুরু করেন। ইনফ্লুন্সার হিসেবে যাত্রা শুরু
করতে হলে প্রথমে আপনাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডেডিকেটেড অ্যাকাউন্ট বা পেইজ খুলতে হবে। তারপর আপনি কোন ধরনের কনটেন্ট তৈরি করবেন তা নির্ধারণ করতে হবে এবং ধৈর্য্য সহকারে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আপনি রাতারাতি ইনফ্লুন্সার হতে পারবেন না। এজন্য প্রয়োজন সময় এবং ভালোমানের কনটেন্টের।
চ্যালেঞ্জ
প্রতিটি ব্যবসায় নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকি রয়েছে। অনলাইনে ব্যবসার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ডাটা চুরি হওয়া। অর্থাৎ, সৃজনশীল যেকোনো ব্যবসা যা অনলাইনে করা হয়, তার হুবুহু কপি আমরা অন্য পেইজে বা অফলাইনেও দেখতে পাই। তাই এধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সৃজনশীলতার প্রমাণ দেয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অনলাইনে কাস্টমাররা অনেক সময় প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন। আর তাই কাস্টমারের বিশ্বাস অর্জন করা একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। আবার, অনেক কাস্টমার প্রতারণা করে থাকেন। এই সকল বিষয় মাথায় রেখে আপনাকে ধৈর্য্য সহকারে এগিয়ে যেতে হবে।

৫টি সেরা অনলাইন ব্যবসা পরিচালনার পথে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকি মোকাবিলা করা প্রয়োজন, যা সফলতার মূল চাবিকাঠি। | ছবি সংগৃহীত।
শেষ কথা
সফলতার কোনো শর্টকার্ট থাকে না। আপনি যদি ২০২৫ শেষ হওয়ার পূর্বে স্বল্প মূলধন বিনিয়োগ করে অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তবে সবার আগে আপনাকে নির্ধারণ করতে আপনি কোন ব্যবসা করতে চান। তারপর সেই ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় স্কিল আয়ত্ত করতে হবে। যেকোনো ব্যবসায় সফল হতে হলে আপনাকে অবশ্যই সৃজনশীল হতে হবে, ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে এবং সততার সাথে কাজ করতে হবে।
Comments