ইনভেস্টমেন্ট স্ট্রাটেজিস

২০২৫ সালে সেরা কিছু বিনিয়োগ আইডিয়া

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা ইসফাকুল কবির

কথায় আছে কৃপণের টাকা পিঁপড়ায় খায়। আপনি কৃপণ না কিন্তু টাকা বিনিয়োগ করতেও ভয় পান। এমন হলে আপনার টাকা প্রতিদিন তার মান হারাতে থাকবে। আজকের ১০০ টাকা আগামীতে ৯০ টাকার সমান হয়ে যেতে পারে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সব কিছু বুঝেও কি টাকা বাসায় ফেলে রাখবেন? অনেকেই ভাবে যে টাকা বিনিয়োগ করা খুব ঝামেলা এবং জটিল একটি কাজ তাই তারা নিজের অর্থ বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকে। আসলে, টাকা বিনিয়োগের ব্যাপারটা খুব একটা কঠিন নয়। চলুন সহজভাবে বোঝার চেষ্টা করি।

বিনিয়োগ মানে কী?

বিনিয়োগ হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে আপনি আপনার টাকা এমন জায়গায় রাখেন, যার ফলে সময়ের সাথে সাথে আপনার টাকা আপনা আপনি বাড়বে। যেমন, যদি আপনি ১০০০ টাকা জমিয়ে রাখেন, সেটা হয়তো ৫ বছর পরও ১০০০-ই থাকবে। কিন্তু যদি আপনি বিনিয়োগ করেন, তাহলে সেটা ৫ বছরে ১৫০০ বা ২০০০ টাকা হয়ে যেতে পারে।

একজন ব্যক্তি টাকা হাতে নিয়ে বিনিয়োগ সম্পর্কে ভাবছেন—“বিনিয়োগ মানে কী?” প্রশ্নটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে।

কোথায় বিনিয়োগ করবেন?

অনেকেই  বিনিয়োগ করতে চান কিন্তু বুঝে উঠতে পারেন না কোথায় বিনিয়োগ করবেন, কেন করবেন। এটা নিরাপদ কিনা, কত প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে থাকে। আসুন সহজ এবং নিরাপদ কিছু বিনিয়োগের সম্পর্কে জেনে নেয়। 

শেয়ার বাজার (Stock Market): বিশ্বের প্রতিটা দেশেই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকে অনেক বেশি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে মানা হয়। কিন্তু এই ব্যাপারটিকে অনেক বেশ জটিল মনে করে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, আপনি একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার বা মালিকানা কিনছেন। আপনি চাইলে শেয়ার বাজারে একা একাই বিনিয়োগ করতে পারেন। কিন্তু আপনি নিজে এই ঝুঁকি নিতে না চাইলে দেশে অনেক ভালো ভালো ব্রোকারেজ হাউস আছে তাদের সহযগিতা নিতে পারেন। যারা আপনার টাকা নির্দিষ্ট কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে দিতে সাহায্য করবে। আমাদের ঢাকা শেয়ার বাজারে ৩৯৭ টি কোম্পানি তালিকা ভুক্ত আছে। তাই আপনি চাইলে আপনার পছন্দ মত কোম্পানি সিলেক্ট করতে পারবেন। তবে অনেক সময় শেয়ার বাজারে ম্যানিপুলেশন  দেখা যায়। আপনি কোম্পানি বাছাইয়ের ঝামেলায় যেতে না চাইলে ব্রোকারেজ হাউস আপনাকে এই ব্যপারে সাহায্য করতে পারে। 

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো এখানে অনেকেই চায়  ১/২ মাসে বড়লোক হয়ে যেতে। কিন্তু এখানেই সবাই ভুলটা করে। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রেও অন্যান্য বিনিয়োগের মতো একটু সময় দিতে হয়। তবেই এই সেক্টর থেকে ভালো কিছু লাভ করা সম্ভব।

একজন ব্যক্তি বিভিন্ন বিনিয়োগ বিকল্প (মুখোমুখি চিত্র বা বোর্ডে) দেখছেন, পাশে লেখা—“কোথায় বিনিয়োগ করবেন?

মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund): আমাদের দেশের পেনশনপ্রাপ্ত দের কাছে বহুল পরিচিত এবং আস্থার নাম মিউচুয়াল ফান্ড। কারণ এইখানে কোন প্রকার লস বা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আপনি চাইলে যেকোন বয়সে ৫ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন। বর্তমানে দেশের যেকোন ব্যাংক থেকেই আপনি এই বিনিয়োগ সুবিধা নিতে পারবেন। এখন এক লক্ষ টাকার বিপরীতে ১২ শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। আপনি চাইলে আপনার টাকার বিপরীতে সুদ প্রতি মাসে অথবা তিন মাস পর পর সুদের টাকা নিতে পারবেন, চাইলে টাকা রাখার সময়কাল শেষেও মূল টাকার সাথে অতিরিক্ত সুদের টাকা নিতে পারবেন। 

গোল্ড (Gold Investment): স্বর্ণ কিনে রেখেও হয়ে যেতে পারেন কোটিপতি। স্বর্ণ-র উপরে বিনিয়োগ করা অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে করেন বিনিয়োগ বিশ্লেষকরা। ভারতীয় উপমহা দেশের মানুষ সবথেকে বেশি স্বর্ণ-তে বিনিয়োগ করে।

একটি গ্রাফ বা চার্টের সামনে একজন বিনিয়োগকারী “মিউচুয়াল ফান্ড” বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন বা চিন্তা করছেন।

কত টাকা বিনিয়োগ করা উচিত?

অনেকেই ভাবে বিনিয়োগ করতে গেলে লাখ লাখ টাকা দরকার। আসলে তা নয়! মাত্র ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েও বিনিয়োগ শুরু করতে পারবেন শেয়ার বাজারে। এছাড়া বিভিন্ন হালাল বিনিয়োগের মাধ্যম আছে যেখানে চাইলেই আপনারা বিনিয়োগ করতে পারবেন।

বিনিয়োগ কি ঝুঁকি থাকে? 

বিনিয়োগে কিছুটা ঝুঁকি থাকবেই। কিন্তু ভালো গবেষণা করে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। যেমন, আপনি যদি নতুন কোম্পানির শেয়ার কেনেন, তাহলে ঝুঁকি বেশি। কিন্তু বড় কোম্পানির শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে সেক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিমাণটা কমে যায়।

ধৈর্য ধরুন, সময় দিন

বিনিয়োগ মানে রাতারাতি বড়লোক হওয়া নয়। ভালো লাভ পেতে সময় দিতে হবে। ধরুন, আপনি একটি গাছ লাগালেন, সেটা থেকে ফল পেতে সময় লাগে, বিনিয়োগও ঠিক তেমনই! বিনিয়োগ ক্ষেত্রে কোথায় বিনিয়োগ করছেন এইটা বঝা সবথেকে বেশি জরুরী। 

কোন দেশের সরকার যখন বন্ড কিংবা মিউচুয়াল ফান্ড-এ বিনিয়োগ করার মাধ্যমে ১০০ টাকায় ১০% লাভ পাচ্ছে সেক্ষেত্রে মানুষ অনেকটা শেয়ার বাজার বিমুখ হয়ে যায়। আর একটি দেশের শেয়ার বাজার যতটা শক্তিশালী সেই দেশের অর্থনীতি তত বেশি মজবুত। ১৯৩০ সালের দিকে আমেরিকায় গ্রেট ডিপ্রেশন এই জন্যই দেখে নিয়েছিল যে মানুষ সেই দেশের সরকারের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। তাই জনগণ তাদের টাকা ব্যাংক থেকে তুলে বাসায় রাখতে শুরু করে। বাজারে যখন টাকার বিচরণ কমে গেল ঠিক তখনই অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হলো পুরো আমেরিকাতে। তাই বিনিয়োগ করতে জনগণকে আগ্রহী করে তুলতে সরকারকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কমিয়ে আনতে হবে। এবং জনগণ কে বোঝাতে হবে  “টাকা শুধু জমিয়ে রাখলে বাড়বে না, বিনিয়োগ করলেই বাড়বে!”

“তথ্যসূত্র”

চ্যাটজিপিটি বনাম ডিপসিক আর ওয়ান: কে এগিয়ে?

Previous article

বিনিয়োগের জন্য বিপজ্জনক এই পাঁচ জায়গা

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *