বিজনেস আইডিয়াস

যেভাবে বাংলাদেশে শুরু করতে পারেন কোকো পিট ব্যবসা

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তায়্যিবা

জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের এই যুগে সকলে চায় সবক্ষেত্রেই পরিবেশের জন্য উপযোগী ও ক্ষতিকর নয় এমন পদ্ধতি অনুসরন করতে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকাল কৃষিকাজ এবং বাগান চর্চায় টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। বাগান চর্চা বা কৃষিকাজে এমনই এক পরিবেশবান্ধব উপাদান হলো কোকো পিট, যা নারকেলের খোসা বা ছোবড়া থেকে পাওয়া যায়।

কোকো পিট এখন শুধুমাত্র বাগানীদের জন্য নয়, বরং উদ্যোক্তাদের জন্যও একটি লাভজনক ব্যবসা হয়ে উঠছে। চলুন জেনে নেই বাংলাদেশে কোকো পিট ব্যবসা শুরু করে কীভাবে আপনিও চাইলে সফল হতে পারবেন।

কোকো পিট কী?

কোকো পিট হলো নারকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা মাটির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি বাগানের মাটির পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় এবং মাটির চেয়ে আরও ভালো পানি ও বাষ্প ধারণক্ষমতাসম্পন্ন, যা বায়ুপ্রবাহ ও পিএইচ নিয়ন্ত্রণের সুবিধা দেয়। সাধারণত কোকো পিট ব্লক আকারে পাওয়া যায়, যা পানিতে ভেজালে ফুলে ওঠে এবং মাটির মতো ব্যবহার করা যায়।

কোকো পিট, যা নারকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি একটি প্রাকৃতিক উপাদান এবং কোকো পিট ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।

কোকো পিট, নারকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি একটি প্রাকৃতিক উপাদান। | ছবি সংগৃহীত।

কোকো পিট ব্যবসা শুরু করার ধাপ

১. বাজার গবেষণা এবং প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ

কোনো ব্যবসা শুরুর আগে, বাজারের চাহিদা এবং প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা করা উচিত। বাংলাদেশে কৃষিকাজ এবং বাগান চর্চায় কোকো পিটের ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই কোকো পিট ব্যবসায় কী ধরনের ক্রেতারা আগ্রহী হতে পারেন এবং কীভাবে তাদের চাহিদা পূরণ করা যায় তা শুরুতে  নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

২. সরবরাহ উৎস এবং কাঁচামাল সংগ্রহ

কোকো পিট উৎপাদনের জন্য নারকেলের ছোবড়া প্রয়োজন হয়। নারকেলের প্রধান উৎপাদক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ফলে কাঁচামাল সহজেই স্থানীয় উৎসগুলো থেকে পাওয়া সম্ভব। তবে কোকো পিট উৎপাদনের জন্য যথাযথ প্রসেসিং মেশিন এবং সরঞ্জাম দরকার হয়, যা ব্যবসার মূলধনের একটি অংশ । তাই আগেই এসবের যথাযথ ব্যবস্থা করে নিতে হবে।

৩. ব্যবসায়িক লাইসেন্স এবং নিবন্ধন

বাংলাদেশে যে কোনো ব্যবসা শুরু করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স এবং কর সংক্রান্ত নিবন্ধন করতে হয়। কোকো পিট ব্যবসার জন্য বিশেষ কোনো লাইসেন্স দরকার না হলেও, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন এবং রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নিতে হবে। এছাড়াও, পরিবেশবান্ধব উপাদান হিসেবে কোকো পিট ব্যবসার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সনদপত্র সংগ্রহ করা যেতে পারে।

৪. উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং সরঞ্জাম

কোকো পিট ব্লক বা ব্রিক্স আকারে তৈরি করা হয়। এটি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন নারকেলের ছোবড়া, পানি এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের মেশিন। প্রথমে নারকেলের ছোবড়া সংগ্রহ করে তা ভালোমতো শুকাতে হয়। তারপর মেশিনে ছোবড়া পিষে কোকো পিট তৈরি করতে হয়। পরবর্তীতে কম্প্রেস মেশিনের সাহায্যে  ব্লক আকারে তৈরি করা হয় কোকো পিট।

৫. প্যাকেজিং এবং ব্র্যান্ডিং

কোকো পিট পরিবেশবান্ধব পণ্য হওয়ায় প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে ক্রেতাদের সেটি জানিয়ে পণ্যটির প্রচার প্রসার করা যেতে পারে। পরিবেশবান্ধব ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্যাকেজিং ব্যবহার করলে বাজারে এই পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে পণ্যের গুণগত মান, এর সুবিধা, এবং পরিবেশ রক্ষায় এর অবদান তুলে ধরা যেতে পারে। 

৬. বাজারজাতকরণ এবং বিক্রয়

বাংলাদেশে কোকো পিটের বাজার মূলত কৃষক, বাগানপ্রেমী, এবং নার্সারিগুলির মধ্যে বিদ্যমান। তবে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পণ্য প্রচার করে ক্রেতা বাড়ানো যায়। এছাড়াও, কৃষি প্রদর্শনী ও বাগান চর্চার সাথে সম্পর্কিত ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে পণ্যের গুণগত মান তুলে ধরে প্রচারণা চালানো যায়।

কোকো পিট ব্যবসার বাজারজাতকরণ এবং বিক্রয় প্রক্রিয়া, যা ব্যবসার সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কোকো পিট ব্যবসার বাজারজাতকরণ এবং বিক্রয়ের প্রক্রিয়া। | ছবি সংগৃহীত।

কেন কোকো পিট ব্যবসা লাভজনক?

১. বাড়তি চাহিদা: বাংলাদেশে কোকো পিটের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে। কৃষিক্ষেত্রে টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধির ফলে কোকো পিটের চাহিদা সামনে আরো বাড়বে।

২. কাঁচামালের সহজলভ্যতা: বাংলাদেশের দক্ষিণানঞ্চলে থাকা সেন্ট মার্টিনকে বলা হয় নারিকেল জিঞ্জিরা। এই দেশে যথেষ্ট পরিমাণে নারকেল উৎপাদিত হয়। প্রচুর নারকেল উৎপাদিত হওয়ায় কোকো পিটের কাঁচামাল সহজলভ্য এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে পাওয়া যায়।

৩. উৎপাদন খরচ কম: অন্যান্য কৃষি উপকরণের তুলনায় কোকো পিট উৎপাদনের খরচ কম। শুধুমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ে মেশিন এবং প্রসেসিং সরঞ্জাম কিনতে কিছুটা বিনিয়োগ প্রয়োজন।

তাই, বাংলাদেশে এখনই কোকো পিট ব্যবসা শুরু করা একটি লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে, বিশেষ করে যেহেতু পরিবেশবান্ধব কৃষি উপকরণের চাহিদা বাড়ছে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে যথাযথ মানের কাঁচামাল পাওয়া, উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সঠিক ব্যবসা পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করলে সহজেই এই ব্যবসায় লাভবান হওয়া সম্ভব। সুতরাং, যদি আপনার পরিবেশবান্ধব কৃষি উপকরণের ব্যবসা শুরু করার ইচ্ছে থাকে, তাহলে কোকো পিট উৎপাদনের ব্যবসা হতে পারে আপনার জন্য একটি উত্তম বিকল্প।

“তথ্যসূত্র”

হলিউডের মাধ্যমে আমেরিকা বিশ্বে সাম্রাজ্য তৈরি করেছে

Previous article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *