ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের গুরুত্ব

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আনিকা তায়্যিবা

বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি বিদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের পাঠানো টাকা। যাকে বলা হয় প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স। কেননা নিজ দেশের চাইতে সাধারণত উন্নতমানের দেশেই মানুষ উচ্চ জীবনযাপনের আশায় গিয়ে থাকে। অন্যসব উন্নয়নশীল দেশের মতই বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রবাসী আয় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এই দেশের একটি বড় অংশ কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে থাকায়, তাদের পাঠানো অর্থ দেশের অনেক পরিবারকে জীবিকার সংস্থান করে দেয় এবং তা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ প্রায় ২.৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় সংগ্রহ করেছে, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মাঝেও দেশের প্রবাসী আয়ের স্থিতিশীলতা প্রমাণ করে।

তবে প্রবাসী আয় কেন আমাদের দেশের জন্য এত গুরুত্বপূর্ন , এর রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট কারণ। যেমনঃ

১. বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি
প্রবাসী আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করে। বর্তমানে অর্থাৎ ২০২৪ সালের শেষের দিকে এটি এখন ২৫.৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের কাছাকাছি হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মানদন্ড হিসেবে অবদান রাখছে।

২. দারিদ্র্য বিমোচন
প্রবাসী আয়ের মাধ্যমে দেশে থাকা পরিবারগুলো  তাদের দৈনন্দিন ব্যয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে খরচ করতে পারে, যা তাদের জীবনমান উন্নততর করে এবং দারিদ্র্যবিমোচনে সহায়তা করে।

৩. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা
বৈদেশিক রপ্তানি যখন বৈশ্বিক চাহিদার ওপর নির্ভরশীল, তখন প্রবাসী আয় তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকে। এটি দেশের অর্থনীতিতে একটি নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে।

৪. মানব সম্পদে বিনিয়োগ
এই অর্থশক্তি অনেক ক্ষেত্রে দেশের শিক্ষা খাতে এবং দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করা হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে।

প্রবাসী আয়ের গুরুত্ব: দেশের অর্থনীতিতে অবদানের কারণগুলো।

যদি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের প্রভাব চিন্তা করি, তবে যেসব বিষয় সামনে চলে আসে তা হলোঃ

১. জিডিপিতে অবদান
প্রবাসী আয় বাংলাদেশের জিডিপিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি দেশের পরিবারের ব্যয় ক্ষমতা বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উদ্দীপিত করে।

২. বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস
বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্য ঘাটতি প্রবাসী আয় দিয়ে আংশিকভাবে পূরণ হয়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পাওয়া ২.৪ বিলিয়ন ডলার এই ঘাটতি পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।

৩. মুদ্রার স্থিতিশীলতা
প্রবাসী আয়ের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের টাকার স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখে এবং আমদানি পণ্যের ওপর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে।

৪. গ্রামীণ উন্নয়ন
প্রবাসী শ্রমিকদের একটি বড় অংশ গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা। প্রাপ্ত অর্থ গ্রামের আবাসন, কৃষি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিনিয়োগে সহায়তা করে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের প্রভাব: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি ও উন্নয়ন।

প্রবাসী আয় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বহুস্তরে অবদান রাখে। অর্থনৈতিকভাবে, এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ায়, যা জাতীয় মুদ্রার স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সহজতর করতে সহায়ক। প্রবাসী আয় বাণিজ্য ঘাটতিও পূরণ করে, আমদানির জন্য ব্যয়ের ভারসাম্য বজায় রাখে। সামাজিকভাবে, এই আয় দরিদ্রতা কমাতে সরাসরি ভূমিকা রাখে, কারণ এটি পরিবারগুলোকে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং আবাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে সক্ষম করে। বিশেষত গ্রামীণ এলাকাগুলোতে এটি জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং আঞ্চলিক উন্নয়নে সহায়ক হয়। ঋণ বা বিদেশি সহায়তার তুলনায় প্রবাসী আয় ঋণমুক্ত একটি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবাহ, যা দেশের ওপর কোনো আর্থিক বোঝা তৈরি করে না। পাশাপাশি, এটি অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও স্থিতিশীল আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে। সম্মিলিতভাবে, প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রবাসী আয় কেবল আর্থিক উপার্জন নয়, এটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং উন্নয়নের একটি উত্তম মাধ্যম। এই আয়ের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে নীতিনির্ধারকদের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে প্রবাসী আয় বাংলাদেশের মতো দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব।

“তথ্যসূত্র”

কেন জাপানি ইয়েন অন্যতম সমৃদ্ধ মুদ্রা হয়েও আজ পতনের মুখে

Previous article

বাংলাদেশে যেভাবে আপনি শীতকালীন হুডি বিক্রির ব্যবসা শুরু করতে পারেন

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *