এন্ট্রেপ্রেনিউরশিপ

“ঘরের বাজার বিডি” সফলতার পেছনের গল্প

0

গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির

ফেসবুক ব্যবহার করেন কিন্তু একবারও ঘরের বাজারের জমশেদ মজুমদারকে দেখেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ঘরের বাজার একটি অনলাইন ভিত্তিক ব্রান্ড যারা সুন্দরবন থেকে খাঁটি মধু, খাঁটি সরিষার তেল, খাঁটি ঘি এছাড়া আরোও অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে থেকে।

ফেসবুকে ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ ঘরের বাজার বিডিকে অনুসরণ করে। অনেক মনে করে ঘরের বাজার মানেই জমশেদ মজুমদার কিন্তু না নাজমুস সাকিবও প্রতিষ্ঠানটির সহ_প্রতিষ্ঠাতা। চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক ঘরের বাজার কীভাবে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হলো।

ঘরের বাজার তাদের যাত্রা শুরু করেছিল ২০২০ এর সেপ্টেম্বরে। প্রথম দিকে চট্রগ্রামে তারা একটা দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করার চেষ্টা শুরু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টাকার জোগান না থাকায় তারা তাদের ঘি এবং মধু বিভিন্ন মসজিদের সামনে গিয়ে তারা বিক্রি করেন। সে সময় তাদের চেনা পরিচিত মানুষই শুধু তাদের পণ্য কিনেছিল। একবার ঈদে মিলাদুন্নবির দিনে জমশেদ এবং সাকিব মিলে ১৮ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করে যা তাদের জন্য ছিল বড় অনুপ্রেরণার জায়গা।

জমশেদের পরিবার থেকে তিনি ব্যবসা করার উদ্দেশে টাকা চাইলে তারা পরিবার তাঁকে টাকা দিতে ভয় পাচ্ছিলেন। তার পরিবার ভেবে নিয়েছিল যে জমশেদ টাকা নষ্ট করে ফেলবে। এরপর জমশেদ তার এক ভারতের বন্ধুর থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসাকে বড় করে।

ঘরের বাজার বিডি: সফলতার পেছনের গল্প। অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে কীভাবে ঘরের বাজার বিডি দ্রুত জনপ্রিয়তা ও সফলতা অর্জন করেছে, তা জানুন।

ঘরের বাজার বিডির সফলতার পেছনের গল্প। | ছবি: সংগৃহীত

ঘরের বাজারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিটি ঘরে নিরাপদ খাবার পৌঁছে দেওয়া। এই সেরা পণ্যটি পেতে দেশের যেকোনো প্রান্তে যেতে জমশেদ মজুমদার প্রস্তুত। তাদের প্রথম খাঁটি মধু সংগ্রহ ছিল ভৈরবে। যেখানে পুরো একটা মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারে ৩৬ টি মধুর চাক ছিল। জমশেদ তার ক্রেতাদের কাছে প্রতিনিয়ত খাঁটি মধু পৌঁছে দেবার চেষ্টা করছেন। যে কারণে তিনি এবং তার দল গহিন সুন্দর বনেও যেতে ভয় পায় না। মধু ছাড়াও ঘরের বাজার আমাদের সময়ে আম, খাঁটি সরিষা তেল, ঘি, হানিনাট, খেজুর, আখরোট, মরিচ পাউডার, কাজু বাদাম সহ আরো বেশ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকে।

জমশেদ তার পণ্যের সুনাম করতে দিয়ে অন্যের পণ্য নিয়ে খারাপ কথা বলে না। এইটা তার অন্যতম একটি গুণ। এছাড়া ব্যবসায়িক সততা এবং তার সাবলীল উপস্থাপনা সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। জমশেদ চেয়েছেন  যে দেশের মানুষ

ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মধু না খেয়ে দেশের উৎপাদিত মধু খেয়ে দেখুক। তিনি বলেন আমরা পণ্যের ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ করি, কোন জিনিসটা মানুষের জন্য নিরাপদ এই সব বিষয় নিয়ে তারা কাজ করে। । তার মতে সবার ভালো খাবার খাওয়ার অধিকার আছে।

একবছর আগে “2 সেন্ট পডকাস্ট” একটি ইউটিউব চ্যানেলে এসে ঘরের বাজারের প্রতিষ্ঠাতা সাকিব বলেন, 

তিনি দুইবার এই ব্যবসায় বিব্রত হয়েছিলেন। প্রথমবার একজন ব্যক্তি এসে তাদের বলেন যে, আপনার ছেলেকে যেন আপনি এই মধু খাওয়াতে পারেন এমন মধু বিক্রি করবেন। ব্যাপারটি তাদের কাজের ধরণ পাল্টে দেয় এবং তাদের আরো চিন্তা করতে বাধ্য করে। এবং দ্বিতীয়বার এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন যে সরিষার ঘানিতে কি তেল দেওয়া হয়? সেখানে তো মবেল দেওয়া হয়। সে সময় সাকিবের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর ছিলোনা।

তাই তিনি বলেন, আপনি যে বিজনেসেই করেন না কেনো সেই সম্পর্কে আপনার সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন যে একজন ব্যক্তি যিনি গত ৫০ বছর ধরে মধু খেয়ে আসছেন। আর আপনি মাত্র ২ বছর ধরে মধুর ব্যবসা করছেন। তার মানে আপনাকে মধু সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে নয়ত আপনি ক্রেতার প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারবেন না।

ঘরের বাজার সফল হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে, তাদের ” পণ্য বিক্রির পরের সার্ভিস” ।একবার একজন ক্রেতা  ২৫ কেজি পণ্য অর্ডার দিয়েছিল। যার মধ্যে ১৮ কেজি তিনি হাতে পেয়েছিলেন এবং ৭ কেজি পাননি। ঘরের বাজের সেই ক্রেতাকে কোনো প্রশ্ন না করে সঙ্গে সঙ্গে সেই ৭ কেজি টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছে।এই ব্যাপারে জমশেদ বলেন, আপনি সৎ ভাবে ব্যবসা করতে চাইলে আপনাকে খুব বেশি কিছু জানতে হবেনা।

ঘরের বাজার বিডির পণ্য বিক্রির পরের সার্ভিস, যা গ্রাহকদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে দ্রুত এবং কার্যকরী সেবা প্রদান করে।

ঘরের বাজার বিডির পণ্য বিক্রির পরের সেবার কার্যক্রম। | ছবি: সংগৃহীত

জমশেদ মজুমদার সম্পর্কে মজার ব্যাপার হচ্ছে, তিনি ছোট থেকে সৌদি আরবে বেড়ে উঠেছেন। ২০১৪ সালে তিনি দেশে এসে কিছু করার চেষ্টা শুরু করেন। তিনি বলেন ফেসবুক কীভাবে কাজ করে এই  ব্যাপারেও তার স্পষ্ট ধারণা ছিলোনা।

ঘরের বাজার বিডির মধ্যে লুকানোর কিছু নাই। তারা সবসময় চেষ্টা করে কোথায় গেলে তারা সেরা পণ্য পাবে এবংসেই পণ্য তারা সংগ্রহও করে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেন। পণ্য কোথা থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে এবং কীভাবে কোন পরিবেশে তাদের পণ্য গুলো প্যাকেজিং করা হচ্ছে তার পুরোটায় তারা ফেসবুক লাইভে দেখায়। তবে ঘরের বাজার বিডি শুধু ফেসবুকেই তাদের পণ্য অর্ডার নেয় না, তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও তারা পণ্য অর্ডার নিয়ে থাকে।

অনেকে প্রশ্ন করেন হুজুররা কেনো শুধু মধু নিয়ে কাজ করে? জমশেদ মজুমদার এই প্রশ্নের জবাবে বলেন বাংলাদেশে মধুর বাজার প্রায় ৭৫০ কোটি টাকার। এখানে যে কেউ এসে ব্যবসা করতে পার। আমার প্রত্যাশা রাখব ঘরের বাজারের মত অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলোও তাদের পণ্য নিয়ে সৎ ভাবে ব্যবসা করবে। সাধারণ মানুষকে সেরা খাবের স্বাদ দিবে।

“তথ্যসূত্র”

পমোডরো টেকনিকঃ অল্প সময়ে অধিক কাজ করার কার্যকরী উপায়

Previous article

ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অ্যাপল ওয়াচের ভূমিকা

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *