Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা ইসফাকুল কবির |
শিওরক্যাশ বাংলাদেশ সরকারের ভাতা, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান সহ আরও বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী একটি মোবাইল ফিনান্সিয়াল সেবা(এমএফএস)। বিকাশ, নগদ, উপায়, রকেটের মত শিওরক্যাশও এমএফএস সেবা প্রদানের মাধ্যমে বাজারে এসেছিল। তবে বিকাশ, নগদ দেশের সাধারণ জনগণকে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের ভেতরে আনার চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে শিওরক্যাশ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লেনদেন ডিজিটালাইজ করার দিকে বেশি নজর দিয়েছিল। একসময় শিওরক্যাশের মাধ্যমে ৫টি ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের সেবা প্রদান করে থাকলেও এখন শুধু রুপালী ব্যাংক শিওরক্যাশের মাধ্যমে গ্রাহকদের এমএফএস সেবা দিচ্ছে।
শিওরক্যাশের শুরু যেভাবে
শিওরক্যাশের প্রতিষ্ঠাতাও সিইও ড.শাহাদাত খানের জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলায়। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর বুয়েটেই শিক্ষকতা শুরু করলেও উচ্চশিক্ষার আসায় আমেরিকায় চলে যান। তিনি ২০০৬ সালে দেশে ফিরে এসে দেখেন দেশের মাত্র ৩০ শতাংশ জনগণ ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস আওতায় আছেন। মূলত এই জনগোষ্ঠী কে মোবাইলের মাধ্যমে সেবা প্রদান করতেই শিওরক্যাশের আবির্ভাব। ২০১০ সালে জনসম্মুখে আসে শিওরক্যাশ।
শিওরক্যাশ কি ধরনের সেবা দিয়ে থাকে?
শুরুতে শিওরক্যাশ পেমেন্ট প্ল্যাটফরম, সফটওয়্যার তৈরি, ব্যাক এন্ড সেবা, এজেন্ট নেটওয়ার্ক, বিজনেস উন্নয়ন করতে সেবা প্রদান করতো। এবং যে কোন ব্যাংক শিওরক্যাশের মাধ্যমে তাদের গ্রাহকদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ২০১২ সালে শিওরক্যাশের উপরে সবার প্রথম আস্থা রেখেছিল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। ২০১৪ সালে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও শিওরক্যাশ মিলে ওয়াসার বিল প্রদানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে। এর পর একে একে যমুনা ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট এন্ড কমার্স ব্যাংকও শিওরক্যাশের মাধ্যমে তাদের গ্রাহকদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিতে শুরু করে।
শিওরক্যাশ-এর বেড়ে ওঠা
প্রথমবারের মতো জাপানের একটি ই-কমার্স কোম্পানি শিওরক্যাশ বিনিয়োগ করে। এরপর ২০১৫ সালে দা ওসিরিস গ্রুপ থেকেও ৭ মিলিয়ন ডলাদের বিনিয়োগ পায় শিওরক্যাশ। ঢাকা কলেজ, সরকারি তিতুমির কলেজ সহ আরও বিভিন্ন স্কুল কলেজে গুলো শিক্ষার্থীদের বেতন পরিশোধে শিওরক্যাশ এর সাথে চুক্তি করে। ২০১৫ সালে ভালো কাজের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ‘অ্যাওয়ার্ড অফ এক্সিলেন্স’ প্রদান করে শিওরক্যাশকে। এছাড়া ২০১৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানে শিওরক্যাশের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। সে বছরই সরকারি ব্যাংক রুপালী ব্যাংক লিমিটেড তাদের গ্রাহকদের মোবাইল ব্যাংকিং দেবা দিতে শিওরক্যাশের সাহায্য নেয়। যার মাধ্যমে রুপালী ব্যাংক শিওরক্যাশ অ্যাপ তৈরি হয়। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের জন্য রুপালী ব্যাংক শিওরক্যাশের সেবা নিয়ে থেকে। ২০১৭ সাল থেকে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানে সরকার রুপালী ব্যাংক শিওরক্যাশের উপরই আস্থা রাখে আসেছে।
শিওরক্যাশ যত সমস্যা
বর্তমানে শিওরক্যাশের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২ কোটি এবং ১ লক্ষ ৮০ হাজার এজেন্ট রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শিওরক্যাশে ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৯ লক্ষ অ্যাকাউন্ট পেন্ডিং আছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের উপ বৃত্তির ১২০ কোটি টাকা আটকে আছে। এই ব্যাপারে শিওরক্যাশের সিইও বলেন, শিক্ষার্থীদের সিম কার্ড হারিয়ে যাওয়ার কারণে স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকের অনুরোধে টাকা গুলো আটকে রাখে হয়েছে। এমএফএস নীতিমালা অনুসারে অ্যাকাউন্ট খুলতে গ্রাহকদের জাতীয় পরিচয় পত্র থাকা বাধ্যতামূলক।
কিন্তু যমুনা টিভির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিওরক্যাশের ২ কোটি গ্রাহকের মধ্যে ৬০ লক্ষ গ্রাহকেরই কোন এনআইডি নেই। দা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর একটি প্রতিবেদন বলছে, শিওরক্যাশের ৩৭টি অ্যাকাউন্টে নেগেটিভ ব্যাল্যান্স দেখা গেছে। যার মানে এই অ্যাকাউন্টগুলোতে যে পরিমাণ অর্থ আছে তার বেশি উত্তোলন করে হয়েছে। এই ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় শিওরক্যাশের সিস্টেমে ত্রুটি থাকায় গ্রাহকরা তাদের অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স থেকে বেশি টাকা উত্তোলন করতে পেরেছে।
এসব ঘটনার কারণে শিওরক্যাশের সাথে কাজ করা ব্যাংক গুলো একে একে শিওরক্যাশের সাথে চুক্তি বাতিল করে। বর্তমানে শুধু রুপালী ব্যাংক শিওরক্যাশের মাধ্যমে গ্রাহকদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসছে।
Comments