গ্লোবাল ট্রেড

কেন তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের নতুন ভরসা মালদ্বীপ?

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আনিকা তায়্যিবা

পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলো মূলত তাদের রপ্তানি আয়ের উপর নির্ভরশীল । যে দেশ যত বেশী মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে থাকে, তাদের অর্থনীতি তত বেশী শক্তিশালী। এক্ষেত্রে পণ্যের আমদানি রপ্তানির রুটের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কমখরচে দ্রুততম সময়ে পণ্য রপ্তানি করা দেশের জন্য লাভজনক। এটি দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। 

বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হলো বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে এই পণ্য রপ্তানির জন্য নতুন রুট হিসেবে দেশটি মালদ্বীপকে বেছে নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমুখী প্রভাব ফেলতে পারে।

মালদ্বীপ রুট কেন বেশি সুবিধাজনক?

মালদ্বীপের রুটের সুবিধা নিয়ে আলোচনা, যা ভ্রমণকারীদের জন্য একটি জনপ্রিয় ও সময়সাশ্রয়ী গন্তব্য।

স্বল্প খরচে ও দ্রুত ভ্রমণের জন্য মালদ্বীপ রুটের বিশেষ সুবিধা। | ছবি সংগৃহীত।

মালদ্বীপকে তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য নতুন রুট হিসেবে বেছে নেওয়ার প্রতি বাংলাদেশের ঝোঁক এসেছে বেশ কয়েকটি কারণে। প্রথমত, কম খরচে দ্রুত পণ্য পরিবহন। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো পরিবহনের খরচ প্রতি কেজি ৬.৩০-৬.৫০ ডলার, যেখানে মালদ্বীপ রুটে এটি মাত্র ৩-৩.৫০ ডলার যা প্রায় অর্ধেক। এই রুটে সরাসরি পণ্য পরিবহন দ্রুত হওয়ায় উৎপাদকরা ক্রেতাদের নির্ধারিত সময়সীমা পূরণ করতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, বিকল্প রুটের প্রয়োজনীয়তা। জুলাই ও আগস্ট মাসে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হয়। চট্টগ্রাম বন্দর তখন কার্যত বন্ধ ছিল, যা বিকল্প রুটের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে। মালদ্বীপ সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে সক্ষম হয়।

পরেই আসে, ভারত ও অন্যান্য রুটের সীমাবদ্ধতার কথা। ভারতের কলকাতা ও অন্যান্য বিমানবন্দরগুলো প্রায়ই তাদের নিজস্ব পণ্যকে অগ্রাধিকার দেয়। উপরন্তু, বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত খরচ এবং সময় লেগে যায়। ফলে মালদ্বীপ একটি সহজলভ্য এবং নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে উঠে আসে। এছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশের সাথে মালদ্বীপের বিমান সংযোগের সুবিধা। মালদ্বীপের রাজধানী মালে থেকে ইউরোপে সরাসরি বিমান সংযোগ রয়েছে। এই রুটে বিমান পরিচালনা করে কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, তার্কিশ এয়ারলাইন্স, এবং আরও অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা। যা বাংলাদেশের বাণিজ্য বিস্তারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

কম খরচে এবং দ্রুত পোশাক রপ্তানির জন্য আদর্শ পরিবহন ব্যবস্থা।

পোশাক রপ্তানিতে সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের আধুনিক পরিবহন সমাধান। | ছবি সংগৃহীত।

এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রভাব
বাংলাদেশের এই পদক্ষেপের বেশ কয়েকটি ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব দেখা যেতে পারে। যেমন-

১। বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে
কম খরচে পণ্য পরিবহন করার ফলে বাংলাদেশে রপ্তানির পরিমাণ বাড়তে পারে। এটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

২। ভারতীয় বন্দরগুলোর আয় হ্রাস
বাংলাদেশের এই রুট পরিবর্তনের কারণে ভারতের বিমানবন্দর ও বন্দরগুলোর আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে। এর ফলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে এতে বাংলাদেশের উপর থেকে ভারতের প্রভুত্ব কিছুটা কমতে পারে।

৩। সরবরাহ চেইনের ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি
মালদ্বীপ রুট বাংলাদেশের সরবরাহ চেইনের ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে। এটি দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে পারে।

৪। রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রভাব
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে। এটি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক আলোচনাকে জটিল করে তুলতে পারে।

পোশাক রপ্তানির কারণে ভারত ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা।

ভারত ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং পোশাক রপ্তানির বর্তমান চ্যালেঞ্জ। | ছবি সংগৃহীত।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

মালদ্বীপ রুট দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হতে পারে যদি এটির ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করা হয়। তবে, ভারতসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের এই কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত কৌশলগতভাবে সঠিক এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের অবস্থান আরও সুসংহত করতে পারে। তবে, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নির্ভর করবে রপ্তানি খাতে টেকসইতা বজায় রাখার ওপর।

“তথ্যসূত্র”

এআই বদলে দিচ্ছে গ্রাহকের কেনাকাটার অভিজ্ঞতা।

Previous article

পাকিস্তান-বাংলাদেশ সরাসরি কার্গো শিপমেন্ট: দেশের বানিজ্য ও অর্থনীতিতে নতুন মোড়ের সূচনা।

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *