গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির
শাইখ সিরাজের পরিচালিত ‘হৃদয়ে মাটিও মানুষ’ কৃষি ভিত্তিক অনুষ্ঠান নিয়ে পি এইচডি গবেষণা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গবেষণায় উঠে এসেছে হৃদয়ে মাটিও মানুষগত চল্লিশ বছরে কৃষকের অর্জন এবং কৃষির বহুমুখি উন্নয়ন প্রসঙ্গ। একটি কৃষি ভিত্তিক অনুষ্ঠান দেশের কৃষি খাতকে কিভাবে বদলে দিতে পারে? তার উত্তর হৃদয়ে মাটিও মানুষ। আমরা আজ জানবো শাইখ সিরাজ ও তার কৃষি নিয়ে করা অনুষ্ঠান ‘মাটি ও মানুষ’ এবং ‘হৃদয়ে মাটিও মানুষ’ নিয়ে।
শাইখ সিরাজ ১৯৫৪ সালে চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ঢাকায় স্কুল জীবন শেষ করে ভূগোলের উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছাত্রজীবনেই তিনি সম্পৃক্ত হন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও সংবাদপত্রের সঙ্গে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে তিনি বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন। আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে এই অনুষ্ঠান গ্রাম বাংলার মানুষের মাঝে ব্যপক সারা ফেলে। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত শাইখ সিরাজ পরিচালনা করেন ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়লেও শাইখ সিরাজ তার আগ্রহের জায়গা ছাড়তে পারেননি। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারি চ্যানেল আইতে প্রথম বারের মত প্রচারিত হয়
কৃষি ভিত্তিক তথ্যমূলক অনুষ্ঠান ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’। এখন পর্যন্ত ৫৭ টি জেলায় কৃষির বিভিন্ন সমস্য, সম্ভাবনা ও উদ্ভাবন নিয়ে অনুষ্ঠান হয়েছে। গবেষণা বলছে দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে এই অনুষ্ঠান। শাইখ তার অনুস্থানের মধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কৃষক এবং সরকারের নীতি নির্ধারকদের মাঝে দূরত্ব কমেছে অনুস্থানের নিয়মিত আয়োজন “কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট” আয়জনের মাধ্যমে। যেখানে কৃষক তাদের প্রশ্ন সরাসরি করতে পারেন কৃষি নিয়ে কাজ করা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে। কৃষকদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে শাইখ সিরাজ বিশেষ পর্বের আয়জন করেন। যেখানে কৃষকরা বিভিন্ন খেলার মাধ্যমে ঈদ উদযাপন করেন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খেলা বউ সাজানো, বালিশ লড়াই, তেল যুক্ত কলা গাছে ওঠা।
বর্তমানে শাইখ সিরাজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে সেখানকার কৃষি নিয়ে তথ্য চিত্র তুলে ধরছেন। গবেষণায় উঠে এসেছে এই অনুষ্ঠানটি দেখা চার ভাগের তিন ভাগ মানুষ এই পদ্ধতি ব্যবহার করছেন তাদের কৃষি কাজে। শাইখ সিরাজ তার কথা ও কাজ দিয়ে গ্রাম বাংলার কৃষকদের কাছে এমন ভাবে পৌঁছে গেছেন যে কৃষকের তাঁকে তাদের একজন ভাবেন।
বর্তমানে শহরে ছাদ বাগান বেশ জনপ্রিয় তবে এর পেছেনে রয়েছে “হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ এর বিশেষ অবদান। শাইখ তার অনুষ্ঠানে ছাদ বাগান এর বিষয়টি উপস্থাপন করেন যার মাধ্যমে অনেক মানুষ এই পদ্ধতিতে বাগান করতে উদ্বুদ্ধ হন। অন্যদিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। তাই এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উঠে আসে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষ করার প্রক্রিয়া। যা এখন দেশের বন্যা কবলিত এলাকা গুলোতে ব্যবহারের মাধ্যমে চাষাবাদ চালু রাখেন কৃষকের।
শাইখ সিরাজ কৃষি ক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দুটি রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচন বিষয়ে সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ২০০৯ সালে অর্জন করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থার এ এইচ বুর্মা অ্যাওয়ার্ড। বর্তমানে তিনি ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কৃষি বিষয়ক তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলোর মধ্যে রয়েছে ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’, ‘মাটির কাছে মানুষের কাছে’ ও ‘কৃষি ও গণমাধ্যম’।
Comments