কোম্পানি ফরেনসিকস

জাহাজ ভাঙায় শীর্ষে বাংলাদেশ: বাড়ছে শিল্পের চাহিদা ও প্রভাব

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা ইসফাকুল কবির

বর্তমানে বিশ্বে জাহাজ ভাঙার শিল্পে বাংলাদেশ শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে। যা আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের প্রথম নয় মাসে বিশ্বের ৫৮২ টি জাহাজ ভাঙা হয়েছে, যার মধ্যে ১৯৭টি ভাঙা হয়েছে বাংলাদেশে, যা মোট জাহাজ ভাঙ্গার ৩৪ শতাংশ। এই তথ্য এটাই প্রমাণ করে, দেশের জাহাজ ভাঙা শিল্প বাংলাদেশ কতটা শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রভাব কতটুকু!

দেশের অবকাঠামো খাত বিকাশে জাহাজ ভাঙা শিল্পের ভূমিকা

বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পের বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানের অন্যতম কারণ হলো বাংলাদেশের  অবকাঠামো খাতের দ্রুত উন্নতি। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সহ বিভিন্ন বড় প্রকল্পে লোহার চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এই চাহিদা পূরণে জাহাজ ভাঙা শিল্প প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাচ্ছে। বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি আবু তাহের জানান, “এ ধরনের বড় প্রকল্পগুলোর জন্য জাহাজ ভাঙার পরিমাণ বেড়েছে, যা দেশের রড ও লোহার চাহিদা পূরণের জন্য অপরিহার্য।”

দেশের অবকাঠামো খাতের বিকাশে জাহাজ ভাঙা শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

কেন বাংলাদেশ সেরা জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে? 

বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার শিল্পে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো যেমন ভারত, পাকিস্তান, এবং তুরস্ক। বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পের বিশেষত্ব হলো এটি বিশ্বের বৃহত্তম এবং পুরনো জাহাজগুলো ভাঙ্গার কাজ করে। এর ফলে বাংলাদেশের এই শিল্পে গুরুত্ব বেড়ে যায়। এছাড়া, বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পে নীতি এবং শর্তাবলীর দিন দিন উন্নতি করা হয়েছে, যা আমাদেরকে শিল্পটিকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরো প্রতিযোগিতামূলক করে তুলেছে। তবে, ভারতে আগে জাহাজ ভাঙা শিল্পে শীর্ষ অবস্থান ছিল, কিন্তু বাংলাদেশে শিল্পের আধুনিকীকরণের ফলে এখন বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করছে।

কেন বাংলাদেশ জাহাজ ভাঙা শিল্পে সেরা।

স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও পরিবেশগত সমস্যা

যদিও বাংলাদেশ জাহাজ ভাঙা শিল্পে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে, তবে এই শিল্পের কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে পরিবেশ এবং শ্রমিকদের পররে। জাহাজ ভাঙ্গার কাজে শ্রমিকরা বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করছেন, যেখানে তীক্ষ্ণ ধাতু, বিষাক্ত পদার্থ, এবং রাসায়নিক উপাদান দিয়ে ভরা । ইতিমধ্যে দেখা গেছে শ্রমিকদের মধ্যে জাহাজ ভাঙ্গার কাজ ২-৩ বছর করার পরে তাদের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। 

এছাড়াও, ভাঙা জাহাজের অবশিষ্টাংশ এবং তেলসহ অন্যান্য বর্জ্য উপকূলীয় অঞ্চলে দূষণ সৃষ্টি করে, যা সমুদ্রে প্রাণীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তবে, এদের মধ্যে ব্যতিক্রমও আছে বেশ কিছু কোম্পানি। যারা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

জাহাজ ভাঙা শিল্পের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও পরিবেশগত সমস্যা।

ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি

বাংলাদেশকে এই শিল্পের বিকাশে আরও বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে সরকারি উদ্যোগ এবং সুরক্ষা নীতিমালা শক্তিশালী করা গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পের টেকসই বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে নৈতিকভাবে পরিচালিত, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া চালু করার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

বাংলাদেশে জাহাজভাঙা শিল্পের শীর্ষস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি, বিশ্বব্যাপী পরিবেশ এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত মানদণ্ড মেনে চলতে হবে, যাতে দেশের জন্য এটি আরও উন্নত ও টেকসই একটি শিল্প হয়ে উঠতে পারে।

“তথ্যসূত্র”

জলবায়ু সংকটে বিবিসি ১০০ নারীর তালিকায় প্রশংসিত যে ১১ জন

Previous article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *