Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আয়শা মারিয়া |
কন্টেন্ট ক্রিয়েশন বর্তমানে একটি চাহিদামূলক পেশার তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে। সময়ের দোলাচলে বিশ্বব্যাপী ডিজিটালাইজেশন, স্মার্টফোন সহজলভ্য এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা হওয়ায় তরুণ-তরুণী থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষ কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
একসময় কনটেন্ট ক্রিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি বলতে একমাত্র ‘ইউটিউব’ কেই বুঝতো সবাই। সময়ের ধারাবাহিকতায় ইউটিউবের বাইরেও ফেসবুক, ব্লগার, পডকাস্টার, স্ট্রিমার ইত্যাদিতে কনটেন্ট ক্রিয়েট চলছে সমানতালে এবং আয়ও করছে ভালো পরিমাণে।
কন্টেন্টের ধরনের উপর নির্ভর করে, কি ধরনের যন্ত্রপাতি আপনার প্রয়োজন পড়বে। শুরুতেই কন্টেন্ট তৈরিতে খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় এমনটি নয়। অনেকে মনে করেন নামিদামি ক্যামেরা অথবা অন্যান্য গ্যাজেট না হলে কনটেন্ট ক্রিয়েশন করা সম্ভব নয়। এটা একটি ভ্রান্ত ধারণা। ভিডিও ধারণের জন্য আপনার নিকট একটি মোবাইল ফোন এবং মাইক্রোফোন হলেই হবে।
মোবাইল কন্টেন্ট তৈরির জন্য অবশ্যই অডিও এবং ভিডিও এর গুণগতমান বজায় রাখতে বিভিন্ন গ্যাজেটের ব্যবহার অপরিহার্য এবং উন্নত গ্যাজেটসমূহ প্রফেশনাল-গ্রেডে কন্টেন্ট তৈরিতে সহায়ক।
উদাহরণস্বরূপ, এক্সটারনাল মাইক্রোফোন স্পষ্ট অডিও ক্যাপচার করে, গিম্বল ফুটেজকে স্থিতিশীল রাখে। এই গ্যাজেটগুলি কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের উচ্চ-মানের ভিডিও ও ছবি তুলতে, দর্শকদের আকৃষ্ট করতে এবং প্রফেশনাল অবস্থান তৈরি করে দেয়।
চিত্তাকর্ষক ছবি ক্যামেরার মাধ্যমে ক্যাপচার করা থেকে বিভিন্ন প্রফেশনাল ভিডিও ও অডিও রেকর্ড করে কন্টেন্ট তৈরিতে প্রয়োজনীয় ৫টি মৌলিক গ্যাজেট নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১। স্মার্টফোনঃ
এটি একটি অতিপরিচিত গ্যাজেট। একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের জন্য তার নিকট স্মার্টফোন থাকা অত্যাবশ্যক। স্মার্টফোন কন্টেন্ট তৈরির জন্য একটি বহুমুখী গ্যাজেট হিসেবেও কাজ করতে পারে। তাই একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের জন্য একটি স্মার্টফোন কেনার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। স্মার্টফোনে একটি উচ্চ-মানের ক্যামেরা এবং স্টোরেজ স্পেস পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
উচ্চ-মানের ক্যামেরা এবং শক্তিশালী প্রসেসরসহ স্মার্টফোন দিয়ে আপনি খুব সহজেই খুব কম সময়ের মধ্যে যেকোনো ভিডিও তৈরি করতে পারবেন । ইনস্টাগ্রামের জন্য শর্ট স্ন্যাপ নেওয়া কিংবা YouTube-এর জন্য একটি ভ্লগ তৈরি করতে স্মার্টফোন একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্যাজেট হিসেবে কাজ করে।
চলুন বর্তমানে জনপ্রিয় কিছু স্মার্টফোনের নাম জেনে নিই- স্যামসং গ্যালাক্সি এস২৪ আল্ট্রা, অ্যাপল আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক, গুগল পিক্সেল নাইন প্রো, শাওমি ১৩ প্রো ম্যাক্স, ওয়ান প্লাস ১১।
২। ট্রাইপড এবং গিম্বলঃ
আপনি যতই স্থিরভাবে খালি হাতে কোনো টিউটোরিয়াল রেকর্ড বা টাইম-ল্যাপস ভিডিও যা-ই ক্যাপচার করতে চান না কেনো আপনার হাত একটানা অনেক সময় স্থির থাকবেনা। তবে শুটিং এর সময় আপনার ক্যামেরা বা স্মার্টফোন স্থির রাখতে ট্রাইপড একটি অপরিহার্য গ্যাজেট হিসেবে কাজ করতে পারে।
একটি ট্রাইপড এর মূল্য ৮০০ থেকে ২৪০০ পর্যন্ত এবং গিম্বলের মূল্য ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ পর্যন্তও হতে পারে। তবে এমন বাজেট না থাকলে ট্রাইপডের বদলে আপনি কিন্তু একটি টেবিল স্ট্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন এবং আপনার ফোনকে স্থির করতে নীচে কিছু বই এর স্থুপ বানিয়েও শুট বা ছবি তুলতে পারেন।
এছাড়া গিম্বল হলো অতি-কম্প্যাক্ট, সহজে ব্যবহারযোগ্য, খুব হালকা এবং ভিডিও স্থিতিশীল রাখে। এই পকেট-আকারের গিম্বলে টিকটক তৈরির জন্য ওয়ান-টাচ পোর্ট্রেট মোড সুইচ রয়েছে। এছাড়াও ভিডিও, পোর্টেইট, ল্যান্ডস্কেপ, আন্ডারস্লাং, অবজেক্ট ট্র্যাকিং, টাইম-ল্যাপস, প্যানোরামা, স্লো মোশন, এডিটিং, টাইমার, ফেস লকিং, জুম, ফিল্টার, বিউটি, লাইট ট্র্যাকিং এবং ওভারল্যাপিং ইমেজ ইত্যাদি ফিচার রয়েছে গিম্বলে।
৩। মাইক্রোফোনঃ
একটি ভালো ভিডিও’র মতো ভালো কোয়ালিটির অডিও ও গুরুত্বপূর্ণ। কন্টেন্ট তৈরির করার সময় আপনার একটি এক্সটারনাল মাইক্রোফোন প্রয়োজন। মাইক্রোফোন পরিষ্কার অডিও ক্যাপচার করতে, আশেপাশের নয়েজ দূর করতে সাহায্য করে। ধরুন, আপনি একটি পডকাস্ট রেকর্ড করছেন বা একটি সাক্ষাৎকার পরিচালনা করছেন তবে একটি মানসম্পন্ন মাইক্রোফোনে বিনিয়োগ করা আপনার জন্য একটি বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত হবে। একটি সিঙ্গেল চ্যানেল মাইক্রোফোন এর মূল্য ২০ হাজার পর্যন্তও হয়ে থাকে।
৪। রিং লাইটঃ
সঠিক আলো আপনার ফটো এবং ভিডিওর কোয়ালিটি উন্নত করতে সাহায্য করে। রিং লাইট, সফটবক্স বা এল ই ডি প্যানেলের মতো আলোক সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করে আপনি আলোর তীব্রতা এবং দিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। বাড়ির ভিতরে বা বাইরে শুটিং করেন না কেন, প্রফেশনাল লুক কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য লাইটিং ব্যবস্থা অপরিহার্য।
রিং লাইটের মূল্য সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে শুরু করে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।রিং লাইট এর বাজেট না থাকলে প্রাকৃতিক আলো দিয়েও ভিডিও তৈরি করা যায়। একটি জানালা বা দরজার সামনে বসে পর্যাপ্ত আলোতে আপনি আপনার ভিডিওগুলো শুট করতে পারেন।
৫। এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভঃ
আপনার কন্টেন্টকে সুরক্ষিত রাখতে বা সেভ করে রাখার জন্য একটি এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ প্রয়োজন। তাই এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ কন্টেন্ট তৈরির মৌলিক গ্যাজেটগুলির মধ্যে একটি। হার্ড ড্রাইভ একটি নির্ভরযোগ্য ব্যাকআপ সমাধান, যা আপনার ফটো, ভিডিও এবং অন্যান্য মিডিয়া ফাইলগুলিকে নিরাপদে সংরক্ষণ করে। একটি এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ কিনতে আপনাকে সর্বনিম্ন ৭ হাজার টাকা বাজেট রাখতেই হবে।
কিছু মোবাইল ভিডিও এডিটিং অ্যাপ এবং প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম রয়েছে যা চিত্রগ্রহণ এবং শ্যুটিং সামগ্রীর জন্য সেরা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। চলুন এরকম কিছু মোবাইল এডিটিং অ্যাপস সম্পর্কে জানা যাক। তবে এসব অ্যাপের প্রিমিয়াম সংস্করণ নেওয়ার পূর্বে প্রথমে বিনামূল্যে সংস্করণ ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করুন এবং ব্যবহার করে দেখুন এটি আপনার পছন্দমত সেবা দিচ্ছে কি না।
স্প্লাইসঃ
এই ভিডিও অ্যাপটিতে শক্তিশালী ফাংশনের সাথে রয়েছে একটি ইজি-টু-ইউজ ইন্টারফেস। অ্যাপটি দিয়ে আপনি পথে চলতে চলতেই কোনো সুন্দর ভিডিও তৈরি করতে ক্লিপ ট্রিম, স্লো-মোশন ইফেক্ট যোগ করে এমনকি একাধিক ক্লিপও ওভারলে করতে পারেন।
ইনশটঃ
ইনশট আরেকটি জনপ্রিয় মোবাইল ভিডিও এডিটিং অ্যাপ – এই অ্যাপটিতে আপনার যা যা করতে হবে তার প্রায় সবকিছুই রয়েছে। অ্যাপটিতে আপনি ভিডিও’র রঙ সম্পাদনা, ফিল্টার, ব্যাকগ্রাউন্ড, স্টিকার, টেক্সট এমনকি ভিডিও লেয়ারও যোগ করতে পারেন। ভিডিও’র গতি বক্ররেখায় এডিট করতে পারেন এবং আরও অনেক কিছু।
মোশনলিপঃ
এই অ্যাপটি আপনাকে ছবিতে গতি যোগ করে দিতে পারে। এছাড়া ছবিতে ওভারলে যোগ এমনকি শুধুমাত্র একটি ট্যাপের মাধ্যমেই আপনার ফটোকে 3D করতে পারবেন। এছাড়াও, আপনি আকাশে চলমান মেঘসহ আরো অনেক কিছুই অ্যাপটি দ্বারা যোগ করতে পারেন!
স্পার্ক ক্যামেরাঃ
এই ভিডিও অ্যাপটি দিয়ে সহজেই অনেকগুলি ছোট ক্লিপ একসাথে রেকর্ড করা যায়। এই অ্যাপটিতেই আপনি আপনার সমস্ত ক্লিপগুলি শুট করতে পারেন এবং শুট করা শেষে দেখবেন আপনার ভিডিও ইতিমধ্যেই এডিট করা হয়ে গেছে। এছাড়াও ভয়েসওভার দিয়েও আপনি ভিডিওতে বর্ণনা করতে পারেন।
Comments