মার্কেটিং ট্রেন্ডস এন্ড আইডিয়াস

ব্যবসায়িক সাফল্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে ডেটা-চালিত মার্কেটিং

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ আয়েশা আক্তার

ডিজিটাল এই যুগে, জীবনের প্রতিটি সেক্টরেই আমরা প্রযুক্তির ছোঁয়া দেখতে পাচ্ছি। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয় মার্কেটিং বিভাগও। এখন অনেকেই প্রশ্ন করবেন মার্কেটিং কিভাবে ডিজিটালাইজড হলো?  এর উত্তর হলো- ডেটা-চালিত মার্কেটিং। বলতে গেলে মার্কেটিং সেক্টরের নতুন বিপ্লবের নাম হলো ডেটা-চালিত মার্কেটিং। বাংলাদেশেও কিন্তু দিনদিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলুন আজকে আমরা জেনে নেই ডেটা-চালিত মার্কেটিং কি এবং আমরা কেনো এই ডেটা-চালিত মার্কেটিং কৌশল  গ্রহণ করবো।   

ডেটা-চালিত মার্কেটিং কি?

ডেটা-চালিত মার্কেটিং বলতে বিপণনের সিধান্ত নেওয়ার জন্য, গ্রাহকের অভিজ্ঞতাকে ব্যক্তিগতকৃত করার জন্য ডেটা সংগ্রহ এবং ব্যবহার করার প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়। ডেটা-চালিত বিপণনের মূল লক্ষ্য হলো বিপণন কর্মক্ষমতা উন্নত করতে ডেটা ব্যবহার করা। ডেটা-চালিত বিপণন অন্য যেকোনো পদ্ধতি থেকে বেশ আলাদা। ডেটা-চালিত বিপণন মূলত বি টু বি বিপণনের একটি কৌশলগত পদ্ধতি যা আপনার বিপণনের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য অতীতের প্রচারণা, বিপণন প্রযুক্তি, বা বাহ্যিক উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ব্যবহার করে এবং কোথায় অর্থ বরাদ্দ করতে হবে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

ডেটা-চালিত মার্কেটিং কীভাবে বিশ্লেষণ ও কৌশল ব্যবহার করে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ও গ্রাহক সংযোগ উন্নত করে।

এই ডেটাতে গ্রাহকের মিথস্ক্রিয়া, আচরণ এবং পছন্দগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যার সমস্তই বিপণনের সিদ্ধান্তগু্লোকে আকার দিতে, গ্রাহকের অভিজ্ঞতা বাড়াতে, প্রচারাভিযান তৈরি করতে এবং ব্যবসায়িক কৌশলগুলি গড়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়।

ডেটা-চালিত মার্কেটিং বনাম প্রথাগত মার্কেটিং

ডেটা-চালিত মার্কেটিং এবং প্রথাগত মার্কেটিংয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। প্রথাগত বিপণন বলতে এমন বিপণনকে বোঝানো হয় যার কোনো কার্যকলাপ অনলাইনে হয় না। অর্থাৎ, বিশ্লেষণাত্মক ডেটা বিপণনকারীরা অফলাইনে সংগ্রহ করে থাকে। তবে তারা কীভাবে এটি ব্যবহার করতে পারে এবং সংগ্রহ করবে তার উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

প্রথাগত মার্কেটিংয়ে সাধারণত ফোকাস গ্রুপের মাধ্যমে ডেটা সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত, এই ধরনের মার্কেটিংয়ে সুযোগ অপেক্ষাকৃত কম থাকে, ডেটা সংগ্রহ করা অপেক্ষাকৃত কঠিন, সময়সাক্ষেপ এবং ব্যয়বহুল। প্রথাগত বিপণনকারীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় প্রায়শই অতীত অভিজ্ঞতা এবং অন্তর্দৃষ্টির উপর নির্ভর করতে হয়। কারণ তাদের গাইড করার মতো ডেটা নেই। 

অন্যদিকে, ডেটা-চালিত মার্কেটিংয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। যার ফলে বর্তমানে বড় আকারের তথ্য সংগ্রহ- বিশ্লেষণ এবং ডেটা অটোমেশন সম্ভব হয়েছে। আর তাই এখন খুব সহজেই ব্যবসায়ীরা ডেটা দেখে গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী বিপণনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাছাড়াও এই প্রক্রিয়ায় ডেটা সংগ্রহ করা এবং বিশ্লেষণ করা তুলনামূলক বেশ সহজ।

ডেটা-চালিত মার্কেটিং বনাম প্রথাগত মার্কেটিং – কোনটি ব্যবসার জন্য বেশি কার্যকর এবং কেন?

কেনো ডেটা-চালিত মার্কেটিং এতো গুরুত্বপূর্ণ?

মূলত বিপণনকারীদের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সহজ করার ক্ষমতাকে আরো সহজ এবং দ্রুত করার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেটা-চালিত মার্কেটিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একটি ডেটা-চালিত মার্কেটিং গ্রাহকের আচরণকে আরো ভালভাবে বোঝার জন্য ডেটা সংগ্রহ করে এবং বিশ্লেষণ করে। প্রাপ্ত ডেটা যখন সিদ্ধান্ত নিতে ব্যবহৃত হয়, তখন সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া বেশ সহজ হয়ে যায়। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-

১. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে

ডেটা-চালিত মার্কেটিংয়ের কারণে বিপণনকারীরা গ্রাহকের চাহিদা আরো ভালভাবে পূরণ করার জন্য তাদের প্রচারাভিযানগুলোকে সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর করতে পারে। গ্রাহকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করলে, প্রকৃতপক্ষে গ্রাহক কারা এবং ভবিষ্যতে কে আপনার কাছ থেকে কিনতে পারে (অর্থাৎ, আপনার লক্ষ্য দর্শক) সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। এইভাবে, ডেটা-চালিত মার্কেটিং বিপণনকারীদের অনুমান, ট্রায়াল এবং ত্রুটি দূর করে সময় এবং অর্থ বাঁচাতে সাহায্য করে। আপনি সেমরুশ, গুগল অ্যানালিটিক্স, গুগল অনুসন্ধান কনসোল এবং অন্যান্য উৎস থেকে ডেটা সন্নিবেশ করতে পারেন।

ডেটা-চালিত মার্কেটিং কীভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে এবং ব্যবসার সাফল্য নিশ্চিত করে।

২. ব্যক্তিগতকরণ এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করা 

ডেটা-চালিত মার্কেটিং আপনাকে অত্যন্ত লক্ষ্যযুক্ত এবং ব্যক্তিগতকৃত প্রচারাভিযান তৈরি করতে সাহায্য করে। এটি আপনাকে গ্রাহকের ব্যক্তিগত চাহিদা, পছন্দ এবং আচরণ সম্পর্কে বোঝার জন্য সাহায্য করে, যাতে আপনি এমন বার্তা তৈরি করতে পারেন যা সরাসরি তাদের চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষার কথা বলে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রাফিক ডিজাইন টুল ‘ক্যানভা’ সাইনআপের সময়  ব্যবহারকারীদের নাম প্রদান করতে বলে। তাই তারা ব্যক্তিগতকৃত ইমেল পাঠাতে পারে। টুলটি ব্যবহারকারীদের জিজ্ঞাসা করে যে তারা কেনো প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করতে চায়। এইভাবে, তারা ব্যবহারকারীর সম্ভাব্য চাহিদার উপর ভিত্তি করে পরামর্শ এবং সহায়তা প্রদান করতে পারে।এই পদ্ধতিটি গ্রাহকদের জন্য একটি ভালো অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

৩. দক্ষতা এবং রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (আরও আই)বাড়ায়

ডেটা-চালিত মার্কেটিংয়ে বিনিয়োগ আপনার বিপণন প্রচেষ্টার দক্ষতাকে  উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে। আপনি বিপণন KPIs (কী কর্মক্ষমতা সূচক) ট্র্যাক ব্যবহার করতে পারেন। যাতে আপনি কী কাজ করছে তা দেখতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী ভবিষ্যতের সংস্থানগুলো বরাদ্দ করতে পারেন। এছাড়াও আপনি এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া মেট্রিক্স, ইমেইল মার্কেটিং মেট্রিক্স, কন্টেন্ট মার্কেটিং মেট্রিক্স, ওয়েবসাইট এনগেজমেন্ট মেট্রিক্স এবং বিজ্ঞাপনের মেট্রিক্স ব্যবহার করতে পারেন। সম্ভব হলে A/B টেস্টিং ব্যবহার করুন ( স্প্লিট টেস্টিং নামেও পরিচিত)। এটি আপনাকে একই পরিস্থিতিতে দুটি বিকল্পের তুলনা করতে এবং কোনটি সেরা পারফর্ম করে তা জানার সুযোগ দেয়।

ডেটা-চালিত মার্কেটিং দক্ষতা বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের উপর রিটার্ন (ROI) সর্বাধিক করতে সহায়তা করে।

শেষ কথা 

আপনার ব্যবসাকে আরো সফল করতে ডেটা-চালিত মার্কেটিং ব্যবহার করতে পারেন। প্রথাগত মার্কেটিংয়ে সাধারণত সকল গ্রাহকের জন্য একই বিজ্ঞাপন দেখানো হয় এবং প্রকৃতপক্ষে কারা গ্রাহক তা জানার সুযোগ থাকে না। কিন্তু ডেটা-চালিত মার্কেটিংয়ে আপনার কাছে ডেটা থাকে যা আপনাকে প্রকৃত গ্রাহক সম্পর্কে জানার সুযোগ দেয়। শুধু তাই নয়, গ্রাহকদের জন্য ব্যক্তিগতকরণ মার্কেটিংয়েরও সুযোগ থাকে।

“তথ্যসূত্র”

আপনি যেভাবে ক্লাউড কিচেন ব্যবসা শুরু করবেন

Previous article

চীনের হাতে আফ্রিকার খনিজ শিল্পের সিংহভাগ

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *