Read it in English | গবেষক এবং প্রতিবেদক: তানজিল ফুয়াদ ইসফাকুল কবির |
বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন। এই প্রতিষ্ঠানের “ফ্লাইহুইল মডেল” এর মাধ্যমে ই-কমার্স প্লাটফর্মে সাফল্যের এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এটি একটি ব্যবসায়িক মডেল যা ধারাবাহিক ভাবে গ্রাহকের চাহিদা বৃদ্ধি, সেবার মান উন্নয়ন, এবং কোম্পানির আয় বাড়ানোর মাধ্যমে অ্যামাজনের ব্যবসাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। জেফ বেজোস, অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা, এই মডেলকে প্রতিষ্ঠানের মেরুদণ্ড হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। চলুন, জেনে নেওয়া যাক এই মডেলটি কীভাবে কাজ করে।
ফ্লাইহুইল মডেল কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?
অ্যামাজনের ফ্লাইহুইল মডেল হলো এমন একটি কৌশল যা ক্রমাগত কোম্পানির প্রবৃদ্ধি এবং সাফল্যের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। সহজ ভাষায় বললে, এটি একটি ঘূর্ণায়মান চাকার মতো কাজ করে, যেখানে একবার চাকা ঘোরা শুরু করলে তা নিজেই শক্তি সংগ্রহ করে এবং আরও দ্রুত ঘোরে। এই মডেলের মূল লক্ষ্য হলো গ্রাহকের অভিজ্ঞতা উন্নত করা, যাতে সেই গ্রাহক বারবার অ্যামাজনের কাছে ফিরে আসে।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, রাশিদা বেগম অ্যামাজন থেকে একটি শো-পিস অর্ডার করলেন। অ্যামাজন তার শো-পিসটি সঠিকভাবে প্যাকেজ করে, দ্রুত এবং সঠিক সময়ে পৌঁছে দেয়। রাশিদা উচ্ছ্বসিত, কারণ পণ্যটি তার প্রত্যাশার চেয়ে অনেক ভালো ছিল। এবার রাশিদা আরও কিছু পণ্য কিনতে পারেন, যেমন – খাবার প্রস্তুত করার কিছু সরঞ্জাম বা তার পরিবারের জন্য গয়না। সে যদি সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করে, তার বন্ধু এবং পরিবারও অ্যামাজন ব্যবহার করবে। এভাবে অ্যামাজনের ফ্লাইহুইল মডেল ধারাবাহিকভাবে গ্রাহক অভিজ্ঞতা উন্নত করে এবং ব্যবসার প্রবৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তোলে। এটি শুধু একটি কৌশল নয়, বরং একটি চলমান চক্র যা ব্যবসার মজবুত ভিত্তি তৈরি করে।
এই মডেলের মাধ্যমে অ্যামাজনের সাফল্য
অ্যামাজন শুধুমাত্র ই-কমার্সে সীমাবদ্ধ নয়; অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস (AWS), কাইন্ডল, এবং আলেক্সার মতো পণ্য ও সেবা প্রদান করে। বর্তমানে অ্যামাজন বিশ্বের ২০৩টি দেশে সেবা দিচ্ছে। প্রতি বছরে অ্যামাজন আয় করে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমান ই-কমার্স বাজারের ৩৮% দখল করে রেখেছে জেফ বেজোসের অ্যামাজন।
এই মডেলের মাধ্যমে ব্যবসার সুবিধা
ফ্লাইহুইল মডেলটি শুধু ব্যবসার মুনাফা বাড়ায় না, এটি গ্রাহকদের মধ্যে অ্যামাজনের প্রতি আস্থা তৈরি করে। কম দামে পণ্য এবং দ্রুত ডেলিভারির মাধ্যমে অ্যামাজন গ্রাহকদের সুবিধা নিশ্চিত করেছে। এ পদ্ধতির কারণে ক্রেতারা বারবার অ্যামাজনের সেবা নিতে আগ্রহী হয়। যা দীর্ঘমেয়াদে ই-কমার্সের বাজারে অ্যামাজনকে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে।
অ্যামাজনের প্রবৃদ্ধি
ফ্লাইহুইল মডেলের সাহায্যে অ্যামাজন একটি ছোট অনলাইন বুকস্টোর থেকে আজ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গ্লোবাল কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বর্তমানে তাদের প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়নের বেশি গ্রাহক সক্রিয় থাকেন। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অ্যামাজনের বার্ষিক রাজস্ব ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে, যা প্রমাণ করে তাদের ব্যবসায়িক কৌশলের কারণে অ্যামাজন আজ এই পর্যায়ে আছে।
অ্যামাজনের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ
বর্তমানে অ্যামাজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড কম্পিউটিং, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে শক্তিশালী বিনিয়োগের মাধ্যমে নিজেদের পরিধি আরও বাড়াচ্ছে। ফ্লাইহুইল মডেল তাদের বর্তমান অবস্থানকে আরও দৃঢ় করেছে। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে তারা আরও বড় লক্ষ্যে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছে, যা তাদের প্রযুক্তিগত এবং ব্যবসায়িক ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।
অ্যামাজনের ফ্লাইহুইল মডেল ব্যবসায়িক দুনিয়ায় একটি বিপ্লবের সূচনা করেছে। এটি শুধু অ্যামাজনের জন্য নয়, বরং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও একটি শিক্ষার উৎস। ক্রমাগত উন্নতি, গ্রাহক সন্তুষ্টি, এবং কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে অ্যামাজন দেখিয়েছে যে একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে সফল হতে পারে।
Comments