কোম্পানি ফরেনসিকস

কীভাবে দেশীয় স্কয়ার হয়ে উঠল বিলিয়ন ডলার কোম্পানি?

0
Read it in English গবেষক এবং প্রতিবেদক: শামা সুলতানা আনিকা তায়্যিবা

বর্তমান সময়ে এসে বাংলাদেশের নিজস্ব উৎপাদিত দেশীয় প্রসাধনের কথা উঠলেই নাম আসে মেরিল এর। কয়েক বছর আগের কথা চিন্তা করা যাক। মাথায় দেয়ার খাঁটি নারকেল তেলের কথা বললেই আসত জুঁই খাঁটি নারকেল তেলের কথা। রাঁধুনি মশলার গুঁড়া ছাড়া গৃহস্থালির রান্না যেন সম্পূর্ণই হয় না। এবার আসি অন্য দিকে। জ্বর? প্যারাসিটামল হচ্ছে সমাধান। ঠাণ্ডা কাশির জন্য আমরা ফার্মেসিতে খুঁজি অ্যাডোভাস সিরাপ। এই দৈনন্দিন পণ্যগুলো কীভাবে এত সহজে আমাদের জীবনের সাথে মিশে গেল তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন? এখানেই লুকিয়ে রয়েছে স্কয়ার গ্রুপের সফলতা। আপনি ঠিকই ধরেছেন। যেই পণ্য গুলোর নাম বললাম, সবই স্কয়ারের পণ্য। চলুন জানা যাক দেশের অতি সুপরিচিত এই কোম্পানির আদ্যপান্তঃ

স্কয়ার গ্রুপের শুরু – একটি বিলিয়ন ডলার কোম্পানির প্রতিষ্ঠার পথচলার প্রথম ধাপ।

স্কয়ার গ্রুপ এর শুরু

স্কয়ার গ্রুপ লিমিটেড বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এবং খ্যাতনামা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, যার ব্যবসা বিস্তৃত রয়েছে ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, ফার্মাসিউটিক্যালস, টেক্সটাইল, মিডিয়া, এবং আরও অনেক খাতে। ১৯৫৮ সালে স্যামসন এইচ চৌধুরী এবং তার তিন বন্ধু মিলে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এই স্কয়ার ছিল কেবল মাত্র ২০,০০০ টাকার বিনিয়োগ। তাদের কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় আজ স্কয়ার গ্রুপকে একটি বিশাল ব্যবসায়ী গ্রুপে পরিণত করেছে, যার বার্ষিক লেনদেন প্রায় ১১,১৬০ কোটি টাকা। স্কয়ারের সম্পদের বৃদ্ধি একেবারেই জ্যামিতিক গতিতে বেড়ে চলেছে, যা তাদের নামের সার্থকতা প্রমাণ করে।

প্রতিষ্ঠাতা এবং মূল নেতৃত্ব

স্কয়ার গ্রুপের সফলতার পেছনে ছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী, যিনি প্রথমে তার বাবার কাছ থেকে টাকা ধার করে পাবনায়আতাইকুলা সন্সনামে ছোট একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি শুরু করেন। তার দূরদর্শিতা, নেতৃত্ব এবং ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তা স্কয়ারকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তার সহকর্মী, কাজী হারুনূর রশীদ, পি কে সাহা এবং রাধাবিন্দু রায়, তাদের প্রতিষ্ঠানে অংশীদার হলেও ১৯৭১ সালে রাধাবিন্দু রায় তাদের মালিকানা ছেড়ে দেন। বর্তমানে, স্যামসন চৌধুরীর তিন ছেলে, স্বপন চৌধুরী, তপন চৌধুরী এবং অঞ্জন চৌধুরী কোম্পানিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

প্রতিষ্ঠাতা এবং মূল নেতৃত্ব – বিলিয়ন ডলার কোম্পানি স্কয়ার গ্রুপের সাফল্যের নেপথ্যের ব্যক্তিরা।

কোম্পানির বৃদ্ধি এবং বৈচিত্র্য

প্রাথমিকভাবে ফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদন শুরু করলেও, স্কয়ার গ্রুপ দিন কে দিন বিভিন্ন সেক্টরে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে টয়লেট্রিজ, কনজিউমার প্রোডাক্টস, মিডিয়া, ব্যাংকিং, এবং হাসপাতাল সেবা। একদম শুরুতেজুঁই” নারকেল তেল তৈরি করে সেই ব্র্যান্ডের মাধ্যমে তারা বাজারে প্রবেশ করে, যা পরবর্তীতেমেরিলসাবানসহ অন্যান্য পণ্য বাজারে আনে। বর্তমানে মেরিল ছোট্ট সোনামণিদের লোশন, তেল, শ্যাম্পু, ক্রিম বাজারজাত করার পাশাপাশি বড়দের প্রসাধনও বাজারে এনেছে।

ধীরে ধীরে কোম্পানির ব্যবসা আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠে, যখন তারা গাজীপুর, ময়মনসিংহ এবং হবিগঞ্জে স্পিনিং মিল এবং টেক্সটাইল কারখানা স্থাপন করে। স্কয়ার হাসপাতালও বর্তমানে একটি সামনের সারির হাসপাতাল ও লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে, যেখানে তারা লাভ পুনঃবিনিয়োগ করে এবং ভালো মানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণ

স্কয়ার গ্রুপ শুধু বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। তারা বর্তমানে বিশ্বের ৪২টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে, যার মধ্যে এশিয়া, আফ্রিকা, ওশেনিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, এবং যুক্তরাজ্য অন্তর্ভুক্ত। কেনিয়াতে স্কয়ার গ্রুপ একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কারখানা স্থাপন করেছে এবং এশিয়ান বাজারে তাদের বিস্তার করতে ফিলিপাইনে নতুন কোম্পানি খুলেছে। এই পদক্ষেপগুলো স্কয়ারকে বৈশ্বিক কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণ – স্কয়ার গ্রুপের বিলিয়ন ডলার কোম্পানি হয়ে ওঠার বৈশ্বিক অভিযাত্রা।

আর্থিক অবদান এবং স্বীকৃতি

স্কয়ার গ্রুপ বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় অবদান রাখেছে এবং তারা দেশের সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাদের ব্যবসা শুধু কৌশলী বিনিয়োগের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়নি, বরং মানসম্পন্ন পণ্য এবং সেবা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাপক স্বীকৃতি লাভ করেছে আজকের স্কয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।

স্কয়ার গ্রুপ লিমিটেড আজকের দিনেও একটি দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের ভিশন, নেতৃত্ব, এবং কৌশলী অভিযোজনের মাধ্যমে তারা একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। স্যামসন এইচ চৌধুরীর রেখে যাওয়া স্কয়ার এখন তার সন্তানেরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, এবং ভবিষ্যতে স্কয়ার গ্রুপ যে আরও ডালপালা মেলে অনেক উঁচুতে পৌঁছাবে তা বলাই বাহুল্য।

“তথ্যসূত্র”

ইস্পাহানি টি গ্রুপ: বাংলাদেশের চা শিল্পে অগ্রণী প্রতিষ্ঠান

Previous article

জলবায়ু সংকটে বিবিসি ১০০ নারীর তালিকায় প্রশংসিত যে ১১ জন

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *